সারা বিশ্বে নজরদারি চালায় চিন। তাদের নজর এড়িয়ে কোনও কাজ করে ফেলা বিরল। নজরদারিকে কেন্দ্র করে আমেরিকা এবং চিনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলতে থাকে অহর্নিশ।
সেই নজরদারির ভিত্তিই আরও মজবুত করে ফেলেছেন শি জিনপিং। নতুন এক ‘দূত’কে তিনি কাজে লাগিয়েছেন। অনেকের মতে, সেটাই হতে চলেছে জিনপিংয়ের তুরুপের তাস।
সম্প্রতি চিন একটি উচ্চ নিরাপত্তা সম্পন্ন গোপন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে। মনে করা হচ্ছে এটি সামরিক কাজে ব্যবহার করা হতে পারে। সামরিক দূতের কাজ করবে এই স্যাটেলাইট।
চিনের উৎক্ষেপিত কৃত্রিম উপগ্রহটির নাম ইয়াওগান-৪১। কৃত্রিম উপগ্রহটি উৎক্ষেপণ করা হয়েছে লং মার্চ ৫ লঞ্চার রকেটের মাধ্যমে। এটি চিনের অন্যতম শক্তিশালী রকেট।
লং মার্চ ৫ লঞ্চার রকেটটি চিনের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে লম্বা রকেট। ইয়াওগান-৪১ নিয়ে যাওয়ার ফলে তার উচ্চতা অন্তত ২০ ফুট বেড়ে গিয়েছে। রকেটের মোট উচ্চতা হয়েছে ২০০ ফুট। চিনের আর কোনও রকেট এত উঁচু নয়।
উচ্চতম রকেটে চাপিয়ে গোপনতম ‘অস্ত্র’টি আকাশে পাঠিয়ে দিয়েছে চিন। কিন্তু তার উদ্দেশ্য নিয়ে বেজিং খোলসা করে কিছু জানায়নি। সংবাদমাধ্যমে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, সেই বক্তব্য অনেকেই মানতে চাইছেন না।
চিনের সরকারচালিত সংবাদ সংস্থা শিনহুয়া জানিয়েছে, ইয়াওগান-৪১ চিনের অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনে ব্যবহৃত হবে। জমি জরিপ, কৃষিকাজের পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি কাজে লাগবে এর তথ্য।
চিন সরকারের দাবি, জমি জরিপ, পর্যবেক্ষণের মতো অসামরিক কাজের জন্যই ইয়াওগান-৪১ বিশেষ ভাবে তৈরি করা হয়েছে। এর সঙ্গে সামরিক কোনও যোগাযোগ নেই।
তবে ইতিহাস অন্য কথা বলছে। এর আগে ইয়াওগান সিরিজের একাধিক স্যাটেলাইট চিন সামরিক কাজে লাগিয়েছে। এই স্যাটেলাইটটিও তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহার করা হতে পারে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের একাংশের।
দাবি করা হচ্ছে, সারা পৃথিবী জুড়ে ইয়াওগান-৪১ কাজ করবে। তবে তা বিশেষ ভাবে নজর রাখতে চলেছে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অংশে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালাবে চিন।
পৃথিবীর আহ্নিক গতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ইয়াওগান-৪১-এর গতিবিধি নিয়ন্ত্রিত হবে। ফলে দিন হোক বা রাত, তথ্য সংগ্রহে এই কৃত্রিম উপগ্রহ কোনও বাধা পাবে না।
অসামরিক কাজে ইয়াওগান-৪১ ব্যবহার করার কথা বললেও চিনের এই স্যাটেলাইট নিয়ে প্রথম থেকেই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছে আমেরিকা। স্যাটেলাইটটির গতিবিধি তারাও নজরে রাখছে।
লং মার্চ ৫ লঞ্চার রকেটের আকার থেকে চিনা স্যাটেলাইটের আকার সম্বন্ধেও একটি ধারণা পাওয়া গিয়েছে। মনে করা হচ্ছে, বড় আকারের কোনও শক্তিশালী টেলিস্কোপ ওই স্যাটেলাইটে রাখা আছে।
টেলিস্কোপের মাধ্যমে মহাকাশে নজরদারিও চালাতে পারে চিন। তারা সম্প্রতি ক্ষমতা প্রদর্শনের অন্যতম ক্ষেত্রে হিসাবে মহাকাশকে বেছে নিয়েছে। একের পর এক মহাকাশ গবেষণায় তাক লাগিয়ে দিচ্ছে বিশ্বকে।
আমেরিকা এবং চিনের মধ্যে ক্ষমতা প্রদর্শনের অন্যতম ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে মহাকাশ। সেখানে ইয়াওগান-৪১ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে চলেছে, মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের।
ইয়াওগান-৪১ প্রথম নয়, এর আগে একাধিক ‘দূত’ স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠিয়েছে চিন। আমেরিকা, চিনের দ্বন্দ্বের অন্যতম অঙ্গ এই কৃত্রিম উপগ্রহ।
অনেকে বলছেন, চিনের সবচেয়ে শক্তিশালী স্যাটেলাইট এখনও পর্যন্ত ইয়াওগান-৪১। জিনপিংয়ের এই ‘দূত’কে কেন্দ্র করে আগামী দিনে আমেরিকা-চিন দ্বন্দ্ব নতুন মাত্রা পেতে পারে।