আশির দশকে বলিপাড়ার অভিনেত্রীদের মধ্যে প্রথম সারিতে জায়গা করে নিয়েছিলেন রতি অগ্নিহোত্রী। শুধুমাত্র বলিপাড়ায় নয়, তামিল, তেলুগু, কন্নড়, মালয়ালম এমনকি, বাংলা ছবিতেও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে রতিকে। কেরিয়ারের শিখরে থাকাকালীন গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হন তিনি।
কিন্তু বিয়ের ত্রিশ বছর পর স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন রতি। ১৯৭৯ সালে ১৬ বছর বয়সে তামিল ছবিতে অভিনয় করে বড় পর্দায় পা রাখেন তিনি। তার পর একের পর এক ছবিতে কাজ করে গিয়েছেন রতি।
কেরিয়ার শুরুর দু’বছরের মধ্যে কমল হাসনের বিপরীতে অভিনয়ের সুযোগ পান রতি। ‘এক দুজে কে লিয়ে’ ছবিতে অভিনয় করে হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন নায়িকা। তাঁর চার দশকের পেশাগত জীবন যতটা চাকচিক্যময় ছিল, ব্যক্তিগত জীবন ছিল ততটাই অন্ধকারে ঢাকা।
১৯৮৫ সালে শিল্পপতি অনিল ভিরওয়ানির সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন রতি। বিয়ের এক বছরের মধ্যে পুত্রসন্তান তনুজ ভিরওয়ানির জন্ম দেন অভিনেত্রী। কিন্তু তার পরেই রতির সংসারে শুরু হয় অশান্তি।
রতির অভিযোগ, দাম্পত্য জীবনের ত্রিশ বছরের প্রায় প্রতি দিন তাঁর গায়ে হাত তুলতেন অনিল। রোজ ঝগড়া এবং মারধরে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন রতি। কিন্তু মুখ বুজে সব কিছু সহ্য করতেন তিনি।
৫৪ বছর বয়সে স্বামীর বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হেনস্থার অভিযোগ এনে বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন রতি। ব্যক্তিগত জীবনের কথাও ভাগ করেন অভিনেত্রী। তিনি জানান, রতির পরিবারের সদস্যেরা প্রথমে পছন্দ করেননি অনিলকে। তা সত্ত্বেও তাঁকে বিয়ে করেন রতি।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে রতি বলেন, ‘‘আমাকে রোজ ক্যামেরার সামনে যেতে হত। মনে শান্তি না থাকলেও হাসিমুখে থাকতে হত সব সময়। দেখাতে হত, স্বামী-পুত্র-সংসার নিয়ে সুখে রয়েছি আমি। মাঝেমধ্যে কাঁদতে ইচ্ছে করত খুব। কিন্তু পারতাম না।’’
২০১৫ সালে অনিলের সঙ্গে বিচ্ছেদ হতেই রতিকে ঘিরে সমালোচনা শুরু হয়। অনিল প্রতি দিন রতির উপর অত্যাচার করলেও তিনি কেন এত বছর চুপ করে ছিলেন, সেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় রতিকে।
রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘আমি শুধু আমার ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে চুপ করে থাকতাম। শুধু ভাবতাম ও কবে নিজের পায়ে দাঁড়াবে। তবেই আমি এখান থেকে মুক্তি পাব। আমি ভালবাসায় বিশ্বাস করতাম। ভাবতাম কোনও এক দিন সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তা আর হল না।’’
অভিনেত্রী জানান, তাঁর পুত্র তনুজ শুটিংয়ের জন্য বাইরে গিয়েছিলেন। সেই সময় তাঁকে আবার মারধর করতে শুরু করেন অনিল। রতির দাবি, তিনি ভেবেছিলেন সে দিন তিনি অনিলের হাতে মার খেয়েই মারা যাবেন।
সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন রতি। সাক্ষাৎকারে রতি বলেন, ‘‘বাড়িতে তনুজ ছিল না। বুঝতে পারছিলাম না, কোথায় যাব। তাই আমি লোনাভলার বাড়িতে চলে যাই। তনুজ শুটিং থেকে ফিরে সোজা আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে।’’
বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মুখ খোলেন তনুজও। তাঁর মতে, দু’জন মানুষ যদি একসঙ্গে ভাল থাকতে না পারেন, তা হলে আলাদা হয়ে যাওয়াই শ্রেয়। তনুজ বলেন, ‘‘আমি মাকে একটা কথাই বলেছিলাম। তোমার জীবন একটাই। নিজেকে ভাল রাখার জন্য যা সিদ্ধান্ত নিতে হয়, সেটাই নাও।’’
মায়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে অভিনয়ে নামেন তনুজ। ২০১৩ সালে ‘লভ ইউ সোনিয়ো’ ছবিতে অভিনয় করে বড় পর্দায় পদার্পণ তাঁর। ‘ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড’ ছবিতে সানি লিওনের সঙ্গেও কাজ করেছেন তিনি।
হিন্দি ছবির পাশাপাশি ‘ইনসাইড এজ’, ‘কোড এম’-এর মতো একাধিক ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করেছেন তনুজ। ইতিমধ্যেই নিজস্ব অনুরাগী মহল গড়ে তুলেছেন তিনি। ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা ১২ লক্ষের গণ্ডি পার করেছে।