বলিপাড়ার তারকারা যে শুধু ছবির প্রচারে গিয়ে বা কোনও সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় নিজের ছবির প্রশংসা করেন তা নয়। নিজেদের অভিনয়, নিজেদের ছবির সমালোচনা থেকেও বিরত থাকেন না তাঁরা। রণবীর কপূর শুরু করে ক্যাটরিনা কইফ, শাহিদ কপূরের মতো অনেক তারকা নিজেদের ছবির সমালোচনা করেছেন।
চলতি বছরের ১২ নভেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে চলেছে ‘টাইগার ৩’। ‘টাইগার’ ফিল্ম সিরিজ়ে সলমন খান এবং ক্যাটরিনা কইফকে প্রথম থেকেই জুটি হিসাবে পর্দায় দেখা যায়। ‘টাইগার ৩’ ছবিতে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে ইমরান হাশমিকে। প্রথম ঝলকে ইমরানের অভিনয়ের ছিটেফোঁটা দেখে দর্শকের মনে আগ্রহ উঁকি দিয়েছে। দর্শকের একাংশের দাবি, এই ছবিতে ইমরান তাঁর অভিনয়ের মাধ্যমে বলে বলে ছক্কা হাঁকাবেন।
২০০৩ সালে ‘ফুটপাথ’ ছবির হাত ধরে বলিপাড়ায় আত্মপ্রকাশ করেন ইমরান। ‘মার্ডার’, ‘গ্যাংস্টার’, ‘জন্নত’, ‘রাজ়’, ‘সাংহাই’-এর মতো একাধিক হিট হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। কিন্তু কেরিয়ারের ঝুলিতে কিছু ফ্লপ ছবিও রয়েছে তাঁর।
একাধিক সাক্ষাৎকারে ইমরান তাঁর ছবি ‘গুড বয় ব্যাড বয়’ নিয়ে আক্ষেপের কথা শুনিয়েছেন। ২০০৭ সালে অশ্বিনী চৌধরীর পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় এই ছবি। ইমরানের পাশাপাশি এই ছবিতে অভিনয় করেন তনুশ্রী দত্ত এবং তুষার কপূর। ‘গুড বয় ব্যাড বয়’ ছবিটি যে ইমরানের পছন্দ নয়, তা বহু বার জানিয়েছেন তিনি।
নব্বইয়ের দশকে কৌতুকাভিনেতা হিসাবে প্রথম সারিতে নাম লিখিয়ে ফেলেন গোবিন্দ। উপার্জনের নিরিখেও অভিনেতাদের তালিকায় শীর্ষেও ছিলেন তিনি।পুরনো এক সাক্ষাৎকারে গোবিন্দ জানান, তিনি বলিউডে ‘কামব্যাক’ করার জন্য পর পর দু’টি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। সেই দু’টি ছবিতে অভিনয় করা তাঁর জীবনের ভুল সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন তিনি।
২০১৪ সালে যশরাজ ফিল্মসের প্রযোজনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘কিল দিল’। একই বছরে ‘হ্যাপি এন্ডিং’ নামে গোবিন্দের আরও একটি ছবি মুক্তি পায়। এই দু’টি ছবি বক্স অফিসে বাণিজ্যিক ভাবে সফল হয়নি।
পুরনো সাক্ষাৎকারে গোবিন্দ জানিয়েছিলেন, ‘কামব্যাক’ করার জন্য ‘কিল দিল’ এবং ‘হ্যাপি এন্ডিং’ ছবিতে অভিনয় করতে রাজি হন। তাঁর পরিবারই নাকি এই ছবি দু’টিতে অভিনয়ের জন্য জোর করেছিলেন।
গোবিন্দের পরিবার নাকি ভেবেছিল তিনি এই দু’টি ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব খারিজ করে দিলে পরবর্তী কাজ পেতে অসুবিধা হতে পারে। পরে অবশ্য গোবিন্দ প্রতিশ্রুতি দেন তিনি কোনও ছবিতে অভিনয়ের আগে তার চিত্রনাট্য ভাল করে পড়ে নেবেন।
বলি অভিনেত্রী আলিয়া ভট্টের সঙ্গে জুটি বেঁধে ‘শানদার’ ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় শাহিদ কপূরকে। ২০১৫ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় এই ছবি। শুটিংয়ের সময় অভিনেতা ভেবেছিলেন যে ছবিটি ভাল ব্যবসা করবে। কিন্তু মুক্তির পর তা বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে।
কেরিয়ারে এমন কোন ছবি রয়েছে যাতে শাহিদ দ্বিতীয় বার অভিনয় করতে চান না, এই প্রশ্নটি অভিনেতাকে জিজ্ঞাসা করে তিনি ‘শানদার’ ছবির নাম উল্লেখ করেন।
শাহিদ আরও জানান, ‘চুপ চুপ কে’ ছবিতে অভিনয় করেও গর্ববোধ করেননি তিনি। ২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘চুপ চুপ কে’ ছবিতে শাহিদের সঙ্গে পর্দায় জুটি বাঁধেন করিনা কপূর খান। শাহিদ এবং করিনার পাশাপাশি এই ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় পরেশ রাওয়াল, রাজপাল যাদব, সুনীল শেট্টি, নেহা ধুপিয়া, অনুপম খেরের মতো একাধিক বলি তারকাকে।
বলি অভিনেতা সইফ আলি খানকে পুরনো এক সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন করা হয় যে তাঁর নিজের কোন ছবি অপছন্দের তালিকায় রয়েছে। জবাবে নবাবপুত্র সইফ নামোল্লেখ করেন ‘হমশকলস’ ছবিটির।
সইফের দাবি, ‘হমশকলস’ ছবির সঙ্গে তিনি নিজের নাম জুড়তে চান না। ছবিটির মধ্যে হাস্যরসের লেশমাত্র নেই। ২০১৪ সালে সাজিদ খানের পরিচালনায় মুক্তি পায় এই ছবি। সইফের পাশাপাশি এই ছবিতে অভিনয় করেন রাম কপূর, চাঙ্কি পান্ডে, বিপাশা বসু, এষা গুপ্ত এবং তমান্না ভা়টিয়া-সহ একাধিক তারকা।
সাম্প্রতিক কালে বলিপাড়ার প্রথম সারির অভিনেতাদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন বরুণ ধওয়ান। হিন্দি ফিল্মজগতে বড় পর্দার জনপ্রিয় জুটি শাহরুখ খান এবং কাজলের সঙ্গে ‘দিলওয়ালে’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। ২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিতে বরুণের বিপরীতে অভিনয় করেন কৃতি শ্যানন। ‘দিলওয়ালে’ ছবিতে অভিনয় করে ভাল লাগেনি বরুণের। পুরনো এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানান তিনি।
বরুণের দাবি, ‘দিলওয়ালে’ ছবিতে তাঁর চরিত্র সঠিক ভাবে ফুটে ওঠেনি। তাই ছবিতে অভিনয়ের পর ভাল লাগেনি তাঁর। যদিও ‘দিলওয়ালে’ ছবির প্রচারে গিয়ে কটাক্ষের শিকার হন অভিনেতা।
২০১০ সালে হলি পরিচালক ক্রিস্টোফার এডওয়ার্ড নোলানের পরিচালনায় মুক্তি পায় ‘ইনসেপশন’ ছবিটি। এই ছবির সঙ্গে ‘দিলওয়ালে’র তুলনা করেন বরুণ। ‘দিলওয়ালে’ ছবির প্রচারে গিয়ে বরুণ বলেন, ‘‘যদি আপনাদের সকলের ‘ইনসেপশন’ ছবিটি ভাল লেগে থাকে তা হলে ‘দিলওয়ালে’ও ভাল লাগতে বাধ্য।’’
বলি অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউত এক পুরনো সাক্ষাৎকারে জানান, কর্ণ জোহরের ছবিতে অভিনয় করে তিনি কেরিয়ারের ঝুলিতে সবচেয়ে ফ্লপ ছবি যোগ করেছেন। ২০১৪ সালে কর্ণ জোহরের প্রযোজনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘উঙলি’ ছবিটি। এই ছবিতে কঙ্গনা ছাড়াও ইমরান হাশমি, রণদীপ হুডা, সঞ্জয় দত্ত, নেহা ধুপিয়া এবং অঙ্গদ বেদীর মতো তারকারা অভিনয় করেন।
সাক্ষাৎকারে কঙ্গনা জানান, ‘উঙলি’ ছবিতে সর্বসাকুল্যে নাকি মাত্র ১০ মিনিটের দৃশ্যে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। অভিনেত্রীর দাবি, তাঁর কেরিয়ারের সবচেয়ে ফ্লপ ছবি এটি। ‘উঙলি’ ফ্লপ করার কারণেই কর্ণের সঙ্গে অন্য কোনও ছবিতে কাজ করতে চান না বলেই মন্তব্য করেন কঙ্গনা।
‘গোলমাল’ ফিল্ম সিরিজ় হোক বা ‘অল দ্য বেস্ট’-এর মতো হিন্দি কমেডি— কৌতুকরসে ভরা ছবিতে অভিনয় করে অজয় দেবগন দর্শকমনে আলাদা জায়গা তৈরি করে ফেলেছেন। কিন্তু অভিনেতা এক পুরনো সাক্ষাৎকারে জানান, ডেভিড ধওয়ান পরিচালিত একটি কমেডি ঘরানার ছবিতে অভিনয় করে তিনি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
২০১১ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘রাসকল্স’ নামে একটি ছবি। অজয়ের পাশাপাশি এই ছবিতে অভিনয় করেন সঞ্জয় দত্ত, কঙ্গনা রানাউত, অর্জুন রামপাল, চাঙ্কি পান্ডে এবং লিসা হেডনের মতো তারকারা। এই ছবির কৌতুকবোধ নাকি সম্পূর্ণ আত্মস্থ করতে পারেননি অজয়। পুরনো সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানান তিনি।
সাক্ষাৎকারে অজয় বলেন, ‘‘এক ধরনের অশালীনতা ছড়িয়ে ছিল ‘রাসকল্স’ ছবি জুড়ে। আমি অভিনয় করে একদমই মজা পায়নি। সিদ্ধান্ত নিয়েছি এর পর আর এই ধরনের ছবিতে কাজ করব না।’’
২০১৫ সালে বিক্রমজিৎ সিংহের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘রয়’। রোম্যান্টিক ড্রামা ঘরানার এই ছবিতে রণবীর কপূরের পাশাপাশি অভিনয় করেন অর্জুন রামপাল এবং জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ়।
এক সাক্ষাৎকারে রণবীর জানিয়েছিলেন, ‘রয়’ ছবিতে অভিনয় করে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। ছবিটি মুক্তির পর তা নিয়ে অনুশোচনাও হয়েছিল অভিনেতার।
২০০৩ সালে ‘বুম’ ছবির মাধ্যমে বলিপাড়ায় আত্মপ্রকাশ করেন ক্যাটরিনা কইফ। কিন্তু এই ছবিতেই নাকি আর কোনও দিন অভিনয় করতে চান না ক্যাটরিনা।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে ক্যাটরিনা জানিয়েছিলেন, বিদেশে থাকাকালীন ‘বুম’ ছবির প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছিলেন তিনি। এই ছবি যে ভারতীয় বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়বে সে বিষয়ে কোনও ধারণা ছিল না অভিনেত্রীর। সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানান তিনি।