সম্প্রতি ‘গদর ২: দ্য কথা কন্টিনিউস’ ছবির প্রথম ঝলক প্রকাশ্যে এসেছে। ‘গদর’ ছবির প্রথম পর্বের কোনও অভিনেতা দ্বিতীয় পর্বে রয়েছেন কি না তা দেখতে উৎসুক ছিল দর্শক। সানি দেওল, আমিশা পটেল এমনকি উৎকর্ষ দত্ত ফিরে এসেছেন ছবির দ্বিতীয় পর্বে। কিন্তু এই ছবিতে দেখা যাবে না এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রকে।
২০০১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘গদর: এক প্রেম কথা’ ছবিতে সানির বন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল বলি অভিনেতা বিবেক শককে। পার্শ্বচরিত্র হলেও বিবেকের চরিত্র ছবির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু ‘গদর’ ছবির দ্বিতীয় পর্ব ‘গদর ২: দ্য কথা কন্টিনিউস’-এ দেখা মিলবে না বিবেকের।
১৯৬৩ সালের ২১ জুন চণ্ডীগঢ়ে জন্ম বিবেকের। বলিপাড়ায় কৌতুকাভিনেতা হিসাবে অধিক জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। হিন্দি ছবির পাশাপাশি হিন্দি ধারাবাহিক এবং পঞ্জাবি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
থিয়েটার এবং ছোট পর্দায় অভিনয়ের মাধ্যমে কেরিয়ার শুরু করেন বিবেক। জসপল ভ়ট্টির সঙ্গে ‘ফ্লপ শো’ ধারাবাহিকে অভিনয় করে পরিচিতি গড়ে তোলেন তিনি।
তার পর বড় পর্দায় অভিনয়ের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেন বিবেক। ১৯৯৮ সালে ‘বরসাত কি রাত’ নামের হিন্দি ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। তার পর একের পর এক হিন্দি এবং পঞ্জাবি ছবিতে কাজ করেছেন তিনি।
‘গদর’ ছবির প্রথম পর্বে সানির বন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করে আরও জনপ্রিয়তা বাড়ে বিবেকের। ‘এতরাজ়’, ‘৩৬ চায়না টাউন’, ‘কোই... মিল গয়া’, ‘ট্যাঙ্গো চার্লি’, ‘বাহ! লাইফ হো তো অ্যায়সি’, ‘ক্রেজ়ি ৪’-এর মতো বহু হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু বলিজগতের সঙ্গে বেশি দিন যুক্ত থাকতে পারেননি বিবেক। ২০১১ সালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। পর পর তিন বার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার কারণে মারা যান অভিনেতা।
বার বার কেন বিবেকের হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল তা প্রকাশ্যে আসতে সকলে চমকে যান। বলিপাড়ার অন্দরমহল সূত্রে খবর, নিজের ওজন নিয়ে সব সময় চিন্তিত থাকতেন বিবেক। ওজন কমানোর জন্য শরীরচর্চা থেকে শুরু করে ওষুধপত্রেরও সাহায্য নিয়েছিলেন তিনি।
তবে ওজন কমানোর সব চেষ্টাই বৃথা যায় বিবেকের। ওজন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় কেরিয়ারে প্রভাব পড়তে শুরু করে তাঁর। তাই ওজন কমাতে শেষ পর্যন্ত অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন বিবেক।
মৃত্যুর সাত দিন আগে ঠাণের এক হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের জন্য বিবেককে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পর অভিনেতার স্বাস্থ্যের অবনতি হতে শুরু করে।
২০১১ সালের ১০ জানুয়ারি পর পর তিন বার হার্ট অ্যাটাক হওয়ায় বিবেককে আবার ঠাণের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসকেরা তাঁর প্রাণ বাঁচানোর জন্য তৎপরতার সঙ্গে চিকিৎসাও শুরু করে দেন। কিন্তু চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়। সে দিনই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বিবেক।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর যখন বিবেককে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তখন তাঁরা জানতে পারেন যে অনেক আগে থেকেই বিবেকের ‘হার্ট ব্লকেজ’ ছিল। ২০০৩ সালে নাকি হার্ট সার্জারিও হয় অভিনেতার।
২০০৩ সালে অস্ত্রোপচারের সময় তিনটি স্টেন্ট বসানো হয়েছিল বিবেকের হৃদ্যন্ত্রে। তার পাশাপাশি রক্ত আরও তরল করার প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিলেন অভিনেতা। বিভিন্ন ধরনের ওষুধও চলছিল তাঁর।
চিকিৎসকদের দাবি, রক্ত তরলীকরণের জন্য যে যে ওষুধ খাওয়া প্রয়োজন তা নাকি মুখেই দিতেন না বিবেক। ওজন কমানোর জন্য অস্ত্রোপচারের আগে বিবেক রক্ত তরলীকরণের ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন বলেই তাঁর শরীরের অবনতি হতে শুরু করে।
বিবেকের ম়ৃত্যুর পর ঠাণের হাসপাতালের চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলে তিনি বিবেকের শারীরিক অবস্থার কথা জানান। তিনি দাবি করেন, অস্ত্রোপচারের সময় বিবেক চিকিৎসকদের কাছে হার্টের অসুখের কথা গোপন করেছিলেন। যদি তাঁরা এই বিষয়ে অবগত হতেন, তা হলে অস্ত্রোপচার করতে রাজি হতেন না বলেও জানান ওই চিকিৎসক।
অস্ত্রোপচারের আগে হার্ট সংক্রান্ত যে পরীক্ষাগুলি করা হয়েছিল, তার রিপোর্টও স্বাভাবিক ছিল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। তাই বিনা দ্বিধায় বিবেকের অস্ত্রোপচার করেছিলেন বলে দাবি চিকিৎসকের।
মাত্র ৪৭ বছর বয়সে মৃত্যু হয় বিবেকের। বর্তমানে অভিনেতার স্ত্রী তাঁর তিন সন্তান নিয়ে সংসার সামলাচ্ছেন।