টিনসেল নগরীর নব্বইয়ের দশকের পাতায় উঁকি মারলে বলি অভিনেতা সলমন খান এবং ঐশ্বর্যা রাই বচ্চনের প্রেমকাহিনি নিয়ে নানা বিতর্ক-আলোচনা-সমালোচনা প্রকাশ্যে আসে। কানাঘুষো শোনা যায়, দুই তারকার বিচ্ছেদের পরেও নাকি প্রাক্তন প্রেমিকাকে কটাক্ষ করতে ছা়ড়েননি সলমন।
১৯৯৯ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল ‘হম দিল দে চুকে সনম’ ছবিটি। সঞ্জয় লীলা ভন্সালী পরিচালিত এই ছবির সেট থেকেই বন্ধুত্ব হয় সলমন এবং ঐশ্বর্যার। সেখান থেকেই দুই তারকার প্রেম।
কিন্তু সলমন এবং ঐশ্বর্যার সম্পর্ক বেশি দিন টেকেনি। অভিনেত্রীর দাবি, সলমন নাকি তাঁর উপর অধিকারবোধ খাটাতেন। এমনকি ঐশ্বর্যার গায়ে হাত তুলতেন সলমন, এমনটাও কানাঘুষো শোনা যায়। সলমনের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ২০০৭ সালে অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন অভিনেত্রী।
ঐশ্বর্যার বিয়ের তিন বছর পর ২০১০ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল ‘গুজ়ারিশ’ ছবিটি। এই ছবির পরিচালনার দায়িত্বেও ছিলেন সঞ্জয়। মুক্তির পর এই ছবিকে ঘিরে গোল বাঁধে। প্রাক্তন প্রেমিকাকে কটাক্ষ করে বসেন সলমন।
‘গুজ়ারিশ’ ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল ঐশ্বর্যাকে। ঐশ্বর্যার বিপরীতে এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন হৃতিক রোশন। ছবির অধিকাংশ দৃশ্যে হুইলচেয়ারে বসে থাকতে দেখা গিয়েছিল হৃতিককে।
হৃতিকের অভিনয় প্রশংসিত হলেও ‘গুজ়ারিশ’ ছবিটি বক্স অফিসে ভাল ব্যবসা করতে ব্যর্থ হয়। এর পর ঐশ্বর্যা-সহ সকলেই সলমনের বক্রোক্তির শিকার হতে শুরু করেন।
‘গুজ়ারিশ’ ছবি প্রসঙ্গে এক পুরনো সাক্ষাৎকারে সলমন বলেন, ‘‘ওই ছবিতে খালি মাছি ঘুরে বেড়াচ্ছিল। কোনও মশাও দেখতে যায়নি ছবিটা। এমনকি একটি কুকুরও ছবিটি দেখতে যায়নি।’’
সলমনের বক্তব্য শুনে বলিপাড়ার সকলে চমকে উঠেছিলেন। সলমন যে ঐশ্বর্যাকে উদ্দেশ করে ‘মাছি’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন তা বুঝতে কারও বাকি থাকে না। এমনকি ছবির পরিচালককেও শব্দ দিয়ে বিঁধেছিলেন সলমন।
সলমনকে এক পুরনো সাক্ষাৎকারে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে কেউ যদি বাইরে থেকে এসে বলিপাড়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠতে চান, তা হলে তাঁর কী করণীয়? সলমন নাম উল্লেখ না করে সঞ্জয়কে কটাক্ষ করেছিলেন।
সলমন বলেছিলেন, ‘‘কেন? ওঁর (সঞ্জয়ের) কাছে চলে যাও। তোমাকে নিয়ে ছবি বানাবে। সে ছবি বিশাল ব্যবসা করবে। কিন্তু তুমি কানাকড়িও পাবে না। উনি নিজেই সব ভোগ করবেন।’’
সলমনের মন্তব্য শুনে দুঃখপ্রকাশ করেন সঞ্জয়। তিনি বলেন, ‘‘আমার বহু পুরনো বন্ধুই যদি আমার সম্পর্কে এমন কথা বলে, তা হলে বিনোদনজগতে থাকার অর্থ কোথায়?’’
সলমনের আচরণে ঐশ্বর্যা কোনও প্রতিক্রিয়া না জানালেও হৃতিক তা নিয়ে সরব হন। হৃতিক বলেন, ‘‘বক্স অফিসের উপার্জনের উপর ভিত্তি করে কখনও এক জন পরিচালককে বিচার করা উচিৎ নয়। সঞ্জয় সম্পর্কে কেউ খারাপ কথা বললে তাতে আমিও আঘাত পাব।’’
সলমনকে উদ্দেশ করে সরাসরি হৃতিক বলেন, ‘‘সলমন ভাল অভিনেতা। আমি ওকে সম্মান করি। কিন্তু ওর মুখে এমন কথা মানায় না। ও অভিনেতা হয়েই ছিল, অভিনেতা হয়েই থাকবে। কিন্তু সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে গেলেও সব সময় নম্র হয়ে থাকা উচিৎ।’’
হৃতিকের দাবি, পেশার ক্ষেত্রে পরিচালককে নিয়ে মজা করা নায়কসুলভ আচরণ নয়। হৃতিক বলেন, ‘‘আমাদের প্রয়োজন নিজেদের শত্রুকেও বন্ধু বানিয়ে নেওয়া। আমার বক্তব্য শেষ হতে না হতেই আমি সলমনের প্রতি থাকা খারাপ অনুভূতি শেষ করে ফেলব। আমি জানি ও ভাল মানুষ। উত্তেজনার বশে এমন মন্তব্য করে ফেলেছে।’’
কিন্তু সলমনের মন্তব্যের নেপথ্যকাহিনি ছিল ভিন্ন। সঞ্জয়ের ফিল্মের সেট থেকেই ঐশ্বর্যার সঙ্গে তাঁর প্রেম। সলমন এবং ঐশ্বর্যা দু’জনের সঙ্গেই ভাল বন্ধুত্ব ছিল সঞ্জয়ের। দুই তারকার বিচ্ছেদের পরেও সঞ্জয়ের সঙ্গে দু’জনের বন্ধুত্ব ছিল অটুট।
কানাঘুষো শোনা যায়, সলমন নাকি সঞ্জয়কে জানিয়েছিলেন যে তিনি ঐশ্বর্যার সঙ্গে সব ছবিতেই অভিনয় করতে চান। কিন্তু দুই তারকার বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ‘দ্য প্রেস্টিজ’ ছবিটি সঞ্জয়কে দেখার জন্য নাকি সলমনই অনুরোধ করেছিলেন। এই ছবির মূল চিত্রনাট্যের উপর ভিত্তি করেই নাকি ‘গুজারিশ’ ছবিটি বানিয়েছিলেন সঞ্জয়।
বলিপাড়ার অন্দরমহল থেকে জানা যায়, যে হেতু ‘গুজারিশ’ ছবি নির্মাণের নেপথ্যে সলমনের ভূমিকা ছিল, তাই অভিনেতা আশা করেছিলেন ঐশ্বর্যার সঙ্গে বিচ্ছেদের পরেও তাঁর বিপরীতে অভিনয়ের প্রস্তাব সলমনকেই দেবেন সঞ্জয়।
কিন্তু ঐশ্বর্যা নাকি বিচ্ছেদের পর আর সলমনের সঙ্গে কোনও ছবিতে অভিনয় করতে চাননি। সলমনের পরিবর্তে সঞ্জয় ‘গুজ়ারিশ’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব হৃতিককে দিয়েছিলেন বলেই নাকি ঐশ্বর্যা-সহ পরিচালকের উপর রেগে গিয়েছিলেন সলমন। বলিপাড়ার একাংশের অনুমান, তাই সকলের প্রতি তির্যক মন্তব্য করে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন অভিনেতা।