সত্তর থেকে আশির দশকের মধ্যে বলিপাড়ায় উপার্জনের দিক থেকে এগিয়ে ছিলেন বলি অভিনেতা রাজেশ খন্না। কেরিয়ারের প্রথম ছবি ‘আখরি খত’ অস্কারে মনোনীত হয়েছিল রাজেশের। অভিনেতা হিসাবে জনপ্রিয় হওয়ার দু’বছরের মধ্যে পনেরোটি হিট ছবি দর্শককে উপহার দিয়েছিলেন তিনি।
অভিনয় দক্ষতা নিয়ে কেউ কোনও প্রশ্ন না তুললেও রাজেশের বিরুদ্ধে হিন্দি ছবি নির্মাতাদের অভিযোগ ছিল একটাই। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলিপাড়ার জনপ্রিয় খলনায়ক প্রেম চোপড়া তাঁর কেরিয়ারের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে রাজেশের প্রসঙ্গেও মন্তব্য করেন।
১৯৭১ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘হাতি মেরে সাথি’ ছবিটি। এই ছবির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন এমএ থিরুমুগম। রাজেশ খন্না, তনুজা এবং মদন পুরীর মতো তারকারা এই ছবিতে অভিনয় করে বহুল প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন।
তৎকালীন মাদ্রাজে ‘হাতি মেরে সাথি’ ছবির শুটিং চলছিল বলে জানান প্রেম। কাজ নিয়ে কোনও দিন রাজেশের বিরুদ্ধে কেউ নালিশ জানাতেন না। কিন্তু রাজেশ যখনই সেটে পৌঁছতেন, তখনই এক অদ্ভুত ঘটনার সাক্ষী হতেন তিনি।
‘হাতি মেরে সাথি’ ছবির প্রযোজনার দায়িত্বে ছিলেন চিন্নাপ্পা থেভর। কাজের সময় খুঁটিনাটি বিষয় নজরে রাখতেন তিনি। খুঁতখুঁতে স্বভাবেরও ছিলেন তিনি। শুটিংয়ের সময় কোনও জিনিস এ দিক থেকে ও দিক হলেই মাথা গরম হয়ে যেত তাঁর।
প্রেম সাক্ষাৎকারে জানান, রাজেশ সেটে ঢোকার সময় প্রতি দিন দেখতেন যে, চিন্নাপ্পা এক জন লোককে বেধড়ক মারছেন। রোজই নাকি সেটে দেরি করে পৌঁছতেন লোকটি। সে কারণেই প্রযোজকের হাতে মার খেতেন।
রাজেশ দেখতেন যে, প্রযোজক রোজ লোকটিকে বলতেন, ‘‘তুমি এখানে কাজে আসার জন্য টাকা পাচ্ছ। তা সত্ত্বেও রোজ আসতে দেরি হচ্ছে কেন?’’ রাজেশ বুঝতে পারেন যে, কাজে দেরি করে আসার জন্য লোকটি মার খাচ্ছেন প্রযোজকের কাছে।
কিন্তু রোজ রোজ একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে দেখে একটু অবাক হয়েছিলেন রাজেশ। চিন্নাপ্পা যেন রাজেশ আসার অপেক্ষাতেই বসে থাকতেন। তিনি সেটে আসামাত্রই লোকটিকে মারধর করা শুরু করতেন চিন্নাপ্পা। খটকা লাগার পর চিন্নাপ্পার কারসাজি ধরে ফেলেন রাজেশ।
আসলে লোকটির কোনও দোষ ছিল না। ভুল আদতে করতেন রাজেশ। কিন্তু তাঁর বদলে মার খেতে হত অন্য লোককে। সকাল ৯টার সময় সকলকে শুটিং সেটে পৌঁছতে বলতেন চিন্নাপ্পা। কিন্তু রোজ দেরি করে শুটিংয়ে আসতেন রাজেশ।
সকাল ৯টার বদলে দুপুর ১২টার সময় সেটে পৌঁছতেন রাজেশ। নিয়মিত দেরি করে আসার কারণে শুটিংয়ের কাজ শুরু করতেও দেরি হয়ে যেত। সকলেই রাজেশের আসার অপেক্ষায় বসে থাকতেন।
প্রেম জানান যে, পাছে রাজেশ রাগারাগি করে শুটিং মাঝপথে ছেড়ে চলে যান, তাই রাজেশের আচরণে রেগে গেলেও কিছু বলতে পারতেন না চিন্নাপ্পা।
রাজেশ যেন নির্দিষ্ট সময়ে ফ্লোরে আসতে পারেন, সে কারণে অভিনেতার জন্য আলাদা করে গাড়ির ব্যবস্থা করেছিলেন চিন্নাপ্পা। ভোর ৬টায় রাজেশের বাড়ির সামনে পৌঁছে যেত গাড়ি। সকাল ৯টায় শুটিং শুরু হওয়ার আগেই যেন রাজেশ সেটে চলে আসতে পারেন তার জন্যই গাড়ি পাঠাতেন চিন্নাপ্পা।
কিন্তু গাড়ি পাঠানোর পরেও কোনও লাভ হত না। সেই দেরি করেই আসতেন রাজেশ। তাই অভিনেতাকে ইঙ্গিতের মাধ্যমে বোঝানোর জন্য অন্য পন্থা অবলম্বন করেন চিন্নাপ্পা।
প্রেম জানান, মার খাওয়ার জন্য একটি লোককে পারিশ্রমিক দিয়েছিলেন চিন্নাপ্পা। রাজেশ আসার সময়েই তাঁকে মারতে শুরু করতেন তিনি। চিন্নাপ্পার এই ইঙ্গিত কিছু দিন পর বুঝতে পারায় রাজেশ তাঁর নিজের ভুল বুঝতে পারেন।
এর পর নির্দিষ্ট সময়েই সেটে পৌঁছে যেতেন রাজেশ। তাঁকে সময় মতো আনানোর জন্য তৃতীয় কোনও ব্যক্তির প্রয়োজন পড়েনি চিন্নাপ্পার।