বড় পর্দাতেই অভিনয়ে হাতেখড়ি। হৃতিক রোশন, ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন, শাহরুখ খান, সলমন খান, অক্ষয় কুমারের মতো বলি তারকাদের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন। প্রায় দু’দশকের মধ্যে বলিপাড়ার খ্যাতনামী খলনায়কদের তালিকায় প্রথম সারিতে নাম লিখিয়ে ফেলেছেন নিকিতিন ধীর।
১৯৮০ সালের ১৭ মার্চ মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে জন্ম নিকিতিনের। বাবা হিন্দি ধারাবাহিকজগতের জনপ্রিয় তারকা। হিন্দি ছবিতেও কাজ করতে দেখা গিয়েছে নিকিতিনের বাবা পঙ্কজ ধীরকে। নিকিতিনের মা পেশায় কস্টিউম ডিজাইনার।
আশির দশকে সম্প্রচারিত ‘মহাভারত’ ধারাবাহিকে কর্ণের চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন পঙ্কজ। ‘সড়ক’, ‘সৌগন্ধ’, ‘বাদশা’র মতো একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেন পঙ্কজ। বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে অভিনয়ে নামেন নিকিতিন।
২০০৮ সালে আশুতোষ গোয়ারিকরের পরিচালনায় ‘যোধা আকবর’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান নিকিতিন। ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন এবং হৃতিক রোশনের মতো বলি তারকাদের সঙ্গে কেরিয়ারের প্রথম ছবি। এই ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় নিকিতিনকে।
বিবেক ওবেরয় এবং জায়েদ খানের সঙ্গে ২০০৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মিশন ইস্তানবুল’ ছবিতে অভিনয় করেন নিকিতিন। একই বছর পর পর দু’টি ছবি মুক্তির পর তিন বছর অন্য কোনও ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায়নি তাঁকে।
২০১১ সালের পর নিকিতিনের কেরিয়ারে নয়া মাইলফলক তৈরি হয়। ২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘রেডি’ এবং ২০১২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দবং ২’ ছবিতে সলমন খানের সঙ্গে অভিনয় করতে দেখা যায় নিকিতিনকে।
‘দবং ২’ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করলেও ‘রেডি’ ছবিতে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন নিকিতিন। সলমনের বিপরীতে নায়ক-খলনায়কের যুগলবন্দি পছন্দ হয় দর্শকের।
বলিপাড়ার অন্য এক খানের ছবিতেও খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন নিকিতিন। ২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ ছবিতে খলনায়কের ভূমিকায় দেখা যায় নিকিতিনকে। শাহরুখ খান এবং দীপিকা পাড়ুকোন অভিনীত এই ছবিতে অভিনয় করেও প্রশংসা কুড়োন নিকিতিন।
২০১৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ক্রাতিকা সেনগরের সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন নিকিতিন। ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী ক্রাতিকা। ‘কসৌটি জিন্দেগি কে’, ‘কয়া দিল মে হ্যায়’, ‘ঝাঁসি কি রানি’, ‘পুনর্বিবাহ’, ‘সার্ভিসওয়ালি বহু’, ‘কসম তেরি প্যার কি’ ধারাবাহিকে অভিনয় করেন ক্রাতিকা। পঙ্কজের পরিচালনায় ‘মাই ফাদার গডফাদার’ ছবিতেও অভিনয় করতে দেখা যায় ক্রাতিকাকে।
২০১৫ সালে ‘কাঞ্চে’ নামের তেলুগু ছবিতে অভিনয় করে দক্ষিণী ফিল্মজগতে আত্মপ্রকাশ করেন নিকিতিন। ‘হাউসফুল ৩’, ‘ফ্রিকি আলি’, ‘শেরশাহ’, ‘সূর্যবংশী’ এবং ‘অন্তিম: দ্য ফাইনাল ট্রুথ’ নামের হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি।
হিন্দি ছবির পাশাপাশি ‘গৌতম নন্দ’, ‘মিস্টার’ এবং ‘খিলাড়ি’র মতো একাধিক তেলুগু ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় নিকিতিনকে।
২০২২ সালে রোহিত শেট্টির পরিচালনা এবং প্রযোজনায় মুক্তি পাওয়া ‘সার্কাস’ ছবিতে অভিনয় করেন নিকিতিন। এই ছবিতে ক্যামিয়ো চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে। ‘সার্কাস’-এর পর আর কোনও হিন্দি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায়নি নিকিতিনকে।
‘মার্টিন’ নামের একটি কন্নড় ভাষার ছবিতে অভিনয় করেন নিকিতিন। ছবির শুটিং শেষ হয়ে গিয়েছে। চলতি বছরেই এই ছবি মুক্তি পাওয়ার কথা।
বড় পর্দার পাশাপাশি ছোট পর্দাতেও পা রেখেছেন নিকিতিন। ২০১১ সাল থেকে হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় শুরু তাঁর। ‘নাগার্জুন— এক যোদ্ধা’, ‘নাগিন ৩’, ‘ইশকবাজ’-এর মতো একাধিক ধারাবাহিকে অভিনয় করেন তিনি।
চলতি বছরের গোড়া থেকে ‘শ্রীমদ রামায়ণ’ নামের একটি ধারাবাহিকের সম্প্রচারণ শুরু হয়। এই ধারাবাহিকে রাবণের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাচ্ছে নিকিতিনকে।
রাবণের চরিত্রে অভিনয় করা নিয়ে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নিকিতিন বলেন, ‘‘সারা জীবনে এক বার এই ধরনের সুযোগ পাওয়া যায়। আমি সব সময় ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ চরিত্রে অভিনয় করতে চেয়েছিলাম। আমার স্বপ্নপূরণ হয়েছে।’’
২০১৪ সালে ‘ফিয়ার ফ্যাক্টর: খতরো কি খিলাড়ি’র পঞ্চম পর্বে প্রতিযোগী হিসাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন নিকিতিন। কিন্তু বিজয়ী হননি তিনি।
বর্তমানে স্ত্রী এবং কন্যাকে নিয়ে মুম্বইয়ে থাকেন নিকিতিন। সমাজমাধ্যমে অভিনেতার ভক্তের সংখ্যাও নজরে পড়ার মতো। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা তিন লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।