নব্বইয়ের দশকে কেরিয়ারের সাফল্যের চূড়ায় ছিলেন বলি অভিনেতা নানা পটেকর এবং অভিনেত্রী মণীশা কৈরালা। হিন্দি ফিল্মজগতে তাঁদের পেশাগত জীবনের পাশাপাশি আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে নানা-মণীশার সম্পর্কও।
১৯৯৬ সালে পার্থ ঘোষের পরিচালনায় মুক্তি পায় ‘অগ্নি সাক্ষী’। এই ছবিতে মণীশা এবং নানার পাশাপাশি মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন জ্যাকি শ্রফ। ছবির শুটিং সেটেই নানার সঙ্গে ভাল ভাবে পরিচয় হয় মণীশার। সেই আলাপ খুব তাড়াতাড়ি বন্ধুত্বে পরিণত হয়।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ‘অগ্নি সাক্ষী’ ছবির শুটিংয়ের সময় মানসিক দিক দিয়ে ভেঙে পড়েছিলেন মণীশা। সেই সময় বলি অভিনেতা বিবেক মুশরানের সঙ্গে মণীশার সম্পর্কচ্ছেদ হয়েছিল। তা নিয়ে মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন অভিনেত্রী।
বিবেকের সঙ্গে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর নানার সঙ্গে বন্ধুত্ব গাঢ় হতে থাকে মণীশার। নানার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন তিনি। মণীশাকেও ধীরে ধীরে ভাল লাগতে শুরু করে নানার। দু’জনে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লেও সে কথা গোপন রাখেন দুই তারকা।
‘অগ্নি সাক্ষী’র পর সঞ্জয় লীলা ভন্সালী পরিচালিত ‘খামোশি: দ্য মিউজ়িক্যাল’ ছবিতে অভিনয় করেন নানা এবং মণীশা। তত দিনে তাঁদের গোপন সম্পর্কের কথা জেনে যায় বলিপা়ড়া। নানা এবং মণীশার সম্পর্কের রসায়ন বড় পর্দাতেও ধরা পড়তে থাকে।
বিবাহিত নানা এবং অবিবাহিত মণীশার সম্পর্ক নিয়ে বলিপা়ড়ায় আলোচনা শুরু হয়।
১৯৭৮ সালে মাত্র ২৭ বছর বয়সে নানা এবং নীলকান্তির বিয়ে হয়। বিয়েতে দুই পরিবারেরই মত ছিল। বিয়ের কয়েক বছর পর নীলকান্তির সঙ্গে এক ছাদের তলায় থাকা বন্ধ করেন অভিনেতা।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে নানা তাঁর সঙ্গে নীলকান্তির সম্পর্ক নিয়ে বলেছিলেন, ‘‘নীলকান্তি এবং আমি বহু বছর একসঙ্গে ভাল সময় কাটিয়েছি। জীবনের সব রকম পরিস্থিতিতে একে অপরের পাশে থেকেছি। ও আমার জীবনে শক্তির জোগান দিয়েছে।’’
নানার দাবি, ‘‘কয়েক বছর একসঙ্গে থাকার পর নীলকান্তির সঙ্গে আমার অনেক বিষয়ে মতের অমিল হতে থাকে। আমরা বিবাহিত হলেও আলাদা থাকতে শুরু করি।’’
নানার সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ায় কটাক্ষের শিকার হন মণীশা। অভিনেত্রীর প্রতিবেশীরা দাবি করেন, মাঝেমধ্যেই মণীশার বাড়ি থেকে নানাকে বেরিয়ে যেতে দেখতেন তাঁরা। যদিও নানাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমার মা আর ছেলের সঙ্গে মণীশা বেশির ভাগ সময় দেখা করতে যায়। ওকে দু’জনেই খুব ভালবাসে।’’
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, সম্পর্কের শুরু থেকেই নানা এবং মণীশার মধ্যে বিভিন্ন কারণে অশান্তি হত। দুই তারকাই চটজলদি রেগে যেতেন বলেও শোনা যায়। এমনকি মণীশার উপর প্রয়োজনাতিরিক্ত অধিকারবোধ খাটিয়ে ফেলতেন নানা।
মণীশা কী ধরনের পোশাক পরবেন তা নিয়ে মন্তব্য করতেন নানা। বলিপাড়ার অন্দরমহল সূত্রে খবর, শুটিংয়ের সময় সহ-অভিনেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করলেও তা নিয়ে মণীশাকে কটাক্ষ করতেন নানা।
মতের অমিল হওয়ার কারণে নানার সঙ্গে মণীশার অশান্তিও বাড়তে থাকে। কানাঘুষো শোনা যায়, ঝামেলার কারণে নানার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন মণীশা।
বলিপাড়ার একাংশের দাবি, আলাদা থাকলেও নীলকান্তির সঙ্গে বিচ্ছেদে নারাজ ছিলেন নানা। অভিনেতার সঙ্গে বাকি জীবন কাটানোর সুযোগ পাবেন কিনা তা নিয়ে ধন্দে ছিলেন মণীশাও।
নানা এবং মণীশার সম্পর্ক যখন ভাঙনের চূড়ান্ত পর্যায়ে তখন তাঁদের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটে। বলি অভিনেত্রী আয়েশা ঝুলকার প্রতি ঝুঁকে পড়েন নানা।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, নানা এবং আয়েশাকে বন্ধ ঘরে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলেন মণীশা। আয়েশাকে কটুকথা শোনাতে ছাড়েননি অভিনেত্রী।
আয়েশাকে উদ্দেশ করে মণীশা বলেন, ‘‘আমার প্রেমিকের কাছ থেকে দূরে থাক।’’ নানার সঙ্গেও সম্পর্কে ইতি টানেন মণীশা। নানার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর একাধিক অস্থায়ী সম্পর্কে জড়ান মণীশা।
কানাঘুষো শোনা যায়, মণীশার সঙ্গে সম্পর্ক গোপন রাখলেও আয়েশার সঙ্গে সম্পর্কের কথা গোপন রাখেননি নানা। তবে মণীশার সঙ্গে বিচ্ছেদ নিয়ে মুখ খোলেন তিনি। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে নানা বলেছিলেন, ‘‘মণীশা অনেকটা কস্তুরী হরিণের মতো। ওকে যে কারও সঙ্গে আপস করার দরকার নেই তা ওর বোঝা প্রয়োজন। বিচ্ছেদের সময়টা খুব কঠিন ছিল। খুব যন্ত্রণা হয়েছিল আমার। সে প্রসঙ্গে কিছু না বলাই ভাল। মণীশাকে মিস্ করি আমি।’’
২০১০ সালে সম্রাট দাহাল নামে এক নেপালি ব্যবসায়ীর সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পড়েন মণীশা। কিন্তু দু’বছর পর বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন অভিনেত্রী।
প্রথম পুত্রসন্তানের মৃত্যুর পর নানাও মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। তার পর স্ত্রী নীলকান্তি এবং দ্বিতীয় পুত্রসন্তান মালহার পাটেকরের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন নানা।