বলিউডের অন্যতম অভিনেতা যাঁর নাম উত্তর মেরুতে থাকলে ‘সিরিয়াস সিনেমা’ থাকে দক্ষিণ মেরুতে। তিনি গোবিন্দ। পর্দায় তিনি থাকা মানেই হাসির ফোয়ারা। ভাবনাচিন্তাহীন মজা। সেই গোবিন্দকে এক বার একটি ছক ভাঙা সিরিয়াস চরিত্রে অভিনয় করানোর কথা ভেবেছিলেন এক পরিচালক।
দিল্লির নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। কিন্তু ভাল চাকরি, পড়াশোনার বাইরেও নিজের জীবনে বড়ই একা চরিত্রটি।
প্রৌঢ়ত্বের দোরগোড়ায় বয়স অধ্যাপকের। এই সময়ে তাঁর জীবনে আসে ঘনিষ্ঠতা। প্রেমও। কিন্তু সেই ভাললাগা বা ভালবাসাকে সহজ ভাবে মেনে নিতে পারে না সমাজ।
চূড়ান্ত হেনস্থা হতে হয় অধ্যাপককে। মাঝবয়সে এসে সম্মানহানির মুখোমুখি হতে হয় । যায় চাকরিও।
ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন হনসল মেহতা। বলিউডের অন্য ধারার চলচ্চিত্রকার বলে পরিচিত হনসল। তাঁর এই ছবি মুক্তি পাওয়ার পর বিদেশি ফিল্ম সমালোচকদেরও প্রশংসা পেয়েছিল।
বহু বিদেশি চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছিল ছবিটি। সে বছর ভারতীয় চলচ্চিত্র উৎসবের সূচনাও হয়েছিল ওই সিনেমাটি প্রদর্শন করেই।
সিনেমার নাম ‘আলিগড়’। ছবির ওই অধ্যাপকের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন মনোজ বাজপেয়ী। চরিত্রটি ছিল এক জন সমকামীর।
হনসল এই সমকামী অধ্যাপক প্রফেসর রামচন্দ্র সিরসের ভূমিকাতেই গোবিন্দকে নেওয়ার কথা ভেবেছিলেন।
চরিত্রটির অনেকগুলো দিক রয়েছে ভেবেই গোবিন্দের কথা মনে পড়েছিল হনসলের। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সে কথা বলেওছেন হনসল।
পরিচালক বলছেন, ‘‘গোবিন্দ এক জন অসাধারণ অভিনেতা। বলিউডে আজ পর্যন্ত ওঁর প্রতিভার সঠিক প্রয়োগ হয়নি। আমার মনে হয়েছিল এই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য যা যা গুণ থাকা দরকার, তার সবটাই গোবিন্দের মধ্যে আছে।’’ যদিও শেষ পর্যন্ত ওই সমকামী অধ্যাপকের চরিত্রের জন্য তিনি বেছে নেন মনোজ বাজপেয়ীকে।
মনোজ ওই সিনেমায় অভিনয় করে বহু পুরস্কার বহু সম্মান পেয়েছিলেন। এমনকি, ফিল্ম সমালোচকদের বিচারেও সেরা অভিনেতার পুরষ্কার পেয়েছিলেন মনোজ।
সেই মনোজও এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তাঁর বদলে যদি ওই চরিত্রটি গোবিন্দ করতেন, তা হলে তাতে আলাদা মাত্রা যোগ করতে পারতেন। যা তিনি করতে পারেননি।
ছবিতে মনোজের পাশাপাশি অভিনয় করেছিলেন রাজকুমার রাও। এক সাংবাদিকের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। যাঁর সঙ্গে মানসিক যোগ গড়ে ওঠে ওই সমকামী অধ্যাপকের।
হনসল জানিয়েছেন, গোবিন্দের সঙ্গে রাজকুমারের জুটি ভাল লাগবে বলেই মনে হয়েছিল তাঁর। যদিও শেষ পর্যন্ত তিনি ছবিটি কেন গোবিন্দকে দিয়ে করাননি, তা স্পষ্ট করেননি হনসল।
বলিউডের বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলেছেন, গোবিন্দ বরাবরই তাঁর ফিল্ম কেরিয়ারে নিরাপদ ছবি বেছে নিয়েছেন। গতে বাঁধা বলিউডের মশলাদার কমেডি ছবি বলতে যা বোঝায়, তার বাইরে এক পা-ও রাখেননি তিনি।
নাচগান, হাসি-ঠাট্টা, প্রেম আর সামান্য বিরহ— সব মিলিয়ে বলিউডের হিট ছবির চেনা ছকে স্বচ্ছন্দে আটকে থেকেছেন গোবিন্দ।
যার জন্য সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাঁর সমসাময়িক বহু অভিনেতা নিজেকে আমূল বদলে ফেললেও গোবিন্দ বদলাননি। তাই হনসলের কাছ থেকে এই ছবির প্রস্তাব পেলেও তিনি নিতেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।