২০০৭ সালে বলি অভিনেতা আমির খানের প্রযোজনা এবং পরিচালনায় ‘তারে জ়মিন পর’ ছবিটি শুধুমাত্র বলিউডে নয়, বিশ্বের সমস্ত সিনেপ্রেমীর প্রশংসা কুড়িয়েছিল। শিশু অভিনেতা দর্শিল সাফারির পাশাপাশি অভিনয় দক্ষতার মাধ্যমে দর্শকের মন কেড়েছিলেন বলি অভিনেত্রী টিস্কা চোপড়াও।
আমিরের ছবির মাধ্যমে প্রচার পেলেও টিস্কা বলিপাড়ায় পা রেখেছিলেন নব্বইয়ের দশকেই। বলি অভিনেতা অজয় দেবগনের সঙ্গে প্রথম ছবি করেছিলেন টিস্কা। তবে তখন তাঁর নাম ছিল ভিন্ন। পর্দায় অভিনয়ের জন্য টিস্কা নয়, প্রিয়া চোপড়া নামে নিজের পরিচয় দিতেন অভিনেত্রী। বিয়ের পর নিজের নামই ব্যবহার করতে শুরু করেন তিনি।
১৯৭৩ সালে ১ নভেম্বর হিমাচল প্রদেশের কৌসালিতে জন্ম টিস্কার। তাঁর বাবা স্কুলে অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাবার বদলির চাকরি থাকার কারণে টিস্কার শৈশবের বেশির ভাব সময় কেটেছিল আফগানিস্তানের কাবুলে। তার পর পরিবারের সঙ্গে দিল্লি চলে যান অভিনেত্রী।
টিস্কার বাবা দিল্লির যে স্কুলে পড়াতেন, সেই স্কুলেই ভর্তি করানো হয় টিস্কাকে। স্কুলের পড়াশোনা শেষ করার পর দিল্লির একটি কলেজে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে ভর্তি হন টিস্কা। কলেজে পড়াকালীন অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মায় তাঁর।
কলেজে থাকাকালীন বিভিন্ন জায়গায় থিয়েটারে অংশগ্রহণ করতে শুরু করেন টিস্কা। কলেজ শেষ হলে অভিনয়ে নামার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। দিল্লি ছেড়ে মুম্বই চলে যান তিনি। মুম্বইয়ে গিয়ে নাসিরুদ্দিন শাহ এবং ফিরোজ খানের মতো বলি তারকাদের কাছ থেকে থিয়েটারের তালিম নিতে শুরু করেন টিস্কা।
থিয়েটার করেই নিজের পরিচিতি তৈরি করেন টিস্কা। নাটকের সূত্রে দেশবিদেশের নানা প্রান্তে যেতেন তিনি। নব্বইয়ের দশকে বড় পর্দায় অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। ১৯৯৩ সালে দীপক পওয়ারের পরিচালনায় ‘প্ল্যাটফর্ম’ ছবিতে অজয়ের সঙ্গে প্রথম অভিনয় করতে দেখা যায় টিস্কাকে।
‘বালি উমর কো সালাম’, ‘আই লভ ইন্ডিয়া’, ‘তকদিরওয়ালা’, ‘কারোবার’-এর মতো একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করলেও বলিপাড়ায় জনপ্রিয়তা পাচ্ছিলেন না টিস্কা। হিন্দি ছবির পাশাপাশি তামিল, মালয়ালম, মরাঠি এবং পঞ্জাবি ছবিতেও অভিনয় করা শুরু করেন তিনি।
বড় পর্দায় অভিনয়ে সাফল্য পাচ্ছিলেন না বলে ছোট পর্দাতেও অভিনয়ের সুযোগ খুঁজতে থাকেন টিস্কা। ‘অস্তিত্ব... এক প্রেম কহানি’, ‘করিশ্মা কা করিশ্মা’, ‘কহানি ঘর ঘর কি’র মতো একাধিক হিন্দি ধারাবাহিকেও অভিনয় করেছেন টিস্কা।
আমিরের ‘তারে জ়মিন পর’ ছবিতে অভিনয় করে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে যান টিস্কা। ছবি, ধারাবাহিক এবং থিয়েটারের পাশাপাশি বিভিন্ন নামী সংস্থার বিজ্ঞাপনেও অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
একটি পুরনো সাক্ষাৎকারে টিস্কা জানিয়েছিলেন যে, তিনি টেলি অভিনেতা রোহিত রায়ের সঙ্গে বহু দিন সম্পর্কে ছিলেন। কিন্তু এই বিষয়ে রোহিতকে প্রশ্ন করলে তিনি অস্বীকার করেন।
ভারতের এক জনপ্রিয় বিমান সংস্থার পাইলট সঞ্জয় চোপড়ার সঙ্গে বিয়ে হয় টিস্কার। বিয়ের পর কন্যাসন্তান তারার জন্ম দেন তিনি। বর্তমানে সমাজসেবী সংস্থা, নারী অধিকার এবং নারীশিক্ষা নিয়ে কাজ করেন। স্বামী এবং সন্তান নিয়ে মুম্বইয়েই থাকেন অভিনেত্রী।
‘অ্যাক্টিং স্মার্ট: ইওর টিকিট টু শোবিজ়’ এবং ‘হোয়াটস আপ উইথ মি?’ নামের দু’টি বই লিখেছেন টিস্কা। ২০২২ সালে তাঁকে ‘যুগ যুগ জিয়ো’ ছবিতে শেষ অভিনয় করতে দেখা যায়। ‘চাটনি’, ‘চুরি’ এবং ‘রুবারু’ নামের তিনটি শর্ট ফিল্মের চিত্রনাট্যকার এবং প্রযোজকের ভূমিকায় ছিলেন টিস্কা।
বলিউডে কেরিয়ার শুরু করতে গিয়ে যে মহিলাদের যৌন হেনস্থার শিকার হতে হয়, এক পুরনো সাক্ষাৎকারে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা ভাগ করে তার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন টিস্কা। অভিনেত্রী জানান, বলিপাড়ার এক বিখ্যাত প্রযোজকের সঙ্গে তাঁর এই ঘটনা ঘটে। সেই প্রযোজক বিবাহিত এবং তাঁর এক পুত্রসন্তান রয়েছে বলেও জানান তিনি।
টিস্কা বলেন, ‘‘কাজের সূত্রে আমাকে নিজের অফিসে ডাকেন ওই পরিচালক। আমাকে হিল জুতো পরে হাঁটা শিখতে হবে, চুলে স্পা করাতে হবে, ম্যানিকিউর করাতে হবে বলে নির্দেশ দেন তিনি। আমি ভেবেছিলাম আমার উন্নতির জন্য তিনি এমন বলছেন। কিন্তু পরে আমার বান্ধবীর কাছে জানতে পারি উনি অন্য ধরনের মানুষ।’’
পরে পরিচালকের স্ত্রী এবং পুত্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে যায় টিস্কার। মুম্বইয়ে শুটিং ঠিকঠাক চললেও বাইরে গিয়ে সমস্যায় পড়েন অভিনেত্রী। টিস্কা জানান, বাইরে শুট করতে গিয়ে পরিচালক তাঁর সঙ্গে একই হোটেলে উঠেছিলেন। একই ফ্লোরে পাশাপাশি ঘর ছিল তাঁদের। অভিনেত্রী জানান, এক রাতে নৈশভোজের জন্য টিস্কাকে নিজের ঘরে নিমন্ত্রণ জানান পরিচালক।
নিজের সুরক্ষার জন্য যে পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন তা-ও সাক্ষাৎকারে জানান টিস্কা। অভিনেত্রী বলেন, ‘‘আমি শুটিং দলের জুনিয়র সদস্য এবং পরিচালকের পুত্রের সঙ্গে একই রাতে পার্টিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। সকলকে জানিয়ে দিই যে সন্ধ্যার পর আমার ঘরে ফোন করার দরকার নেই। পরিচালকের ঘরে ফোন করলেই আমাকে পাবেন।’’
টিস্কা প্রায় সকলকে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, পরিচালক তাঁর ঘরে চিত্রনাট্য নিয়ে আলোচনা করার জন্য ডেকেছেন। ফুল, চকোলেট নিয়ে পরিচালকের ঘরে নির্দিষ্ট সময়ে হাজির হন টিস্কা। অভিনেত্রী বলেন, ‘‘পরিচালকের হাতে ফুল, চকোলেট দিয়ে আমি ওঁকে ধন্যবাদ জানাই। বার বার ওঁর ঘরে ফোন আসছিল দেখে বিরক্ত হয়ে গিয়ে আমার সঙ্গে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা সেরে বিদায় জানান তিনি।’’ অভিনেত্রীর দাবি, অভিনয়ে নামতে গেলে মাঝেমধ্যেই মহিলাদের এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হয়।
সমাজমাধ্যমে নিজস্ব অনুরাগী মহল তৈরি করে ফেলেছেন টিস্কা। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামে অভিনেত্রীর অনুরাগীর সংখ্যা ১৬ লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।