এক জন বলিউডের ‘পারফেকশনিস্ট’। অন্য জন বলিপাড়ার প্রথম সারির পরিচালকদের মধ্যে অন্যতম। পাঁচ বছরের ব্যবধানে দু’টি ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছেন দু’জনে। দু’টি ছবিই বক্স অফিসে দুর্দান্ত ব্যবসা করেছে। দু’টি ছবিতেই মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ‘পারফেকশনিস্ট’ আমির খান। কিন্তু তৃতীয় ছবিতে সে সুযোগ পেলেন না অভিনেতা। পাশ্বর্চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়ে ফিরিয়ে দেন তিনি। পরে সেই ছবিই বক্স অফিসে ৫০০ কোটি টাকার বেশি ব্যবসা করে।
আশির দশক থেকে বলিপাড়ায় কেরিয়ার শুরু করলেও মোট পাঁচটি ছবি পরিচালনা করেছেন রাজকুমার হিরানি। তার মধ্যে দু’টি ছবির মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল আমিরকে।
২০০৯ সালে মুক্তি পাওয়া রাজকুমার পরিচালিত ‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন আমির। বক্স অফিসে ৪০০ কোটি টাকার ব্যবসা করে সে ছবি।
‘থ্রি ইডিয়টস’ মুক্তির পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালে ‘পিকে’ ছবির পরিচালনা করেছিলেন রাজকুমার। বক্স অফিসে ৭০০ কোটি টাকার ক্লাবে নাম লেখায় ‘পিকে’। সেই ছবিতেও মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় আমিরকে।
কানাঘুষো শোনা যায়, ‘পিকে’ মুক্তির কয়েক বছরের মধ্যেই আমিরের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন রাজকুমার। তাঁর পরবর্তী ছবিতে অভিনয়ের জন্য আমিরকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মুখ্যচরিত্র নয়, আমিরকে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন রাজকুমার।
বলিপা়ড়ায় গুঞ্জন, রাজকুমারের প্রস্তাবে রাজি হচ্ছিলেন না আমির। অভিনয় করতে গেলে শুধুমাত্র মুখ্যচরিত্রেই অভিনয় করবেন, নচেৎ অভিনয়ই করবেন না জানিয়ে দেন আমির। পরিচালক মত পরিবর্তন না করলে তাঁর প্রস্তাবও ফিরিয়ে দেন অভিনেতা।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, আমিরের ছেড়ে দেওয়া ছবিতে পরে অভিনয় করতে দেখা যায় বলি অভিনেতা পরেশ রাওয়ালকে। ছবিটি মুক্তির পর বক্স অফিসে ৫০০ কোটির ক্লাবে নাম লিখিয়ে ফেলে।
২০১৮ সালে রাজকুমারের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘সঞ্জু’। বলি অভিনেতা সঞ্জয় দত্তের জীবনীর উপর ভিত্তি করেই এই ছবির চিত্রনাট্য নির্মাণ করেছিলেন রাজকুমার।
২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’ ছবির মাধ্যমে পরিচালনায় হাতেখড়ি করেছিলেন রাজকুমার। সেই ছবির মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সঞ্জয়।
২০০৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পরিণীতা’ ছবির ক্রিয়েটিভ প্রোডিউসার ছিলেন রাজকুমার। সেই ছবিতে সইফ আলি খান এবং বিদ্যা বালনের পাশাপাশি অভিনয় করেছিলেন সঞ্জয়।
২০০৬ সালে রাজকুমারের পরিচালনায় মুক্তি পায় ‘লগে রহো মুন্নাভাই’। এই ছবিতেও মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় সঞ্জয়কে।
২০১৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পিকে’-তে মুখ্যচরিত্রে আমির অভিনয় করলেও রাজকুমার পরিচালিত এই ছবিতে ক্যামিয়ো চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সঞ্জয়।
২০১৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সঞ্জু’ ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন রণবীর কপূর। অর্থাৎ বড় পর্দায় সঞ্জয়ের চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু এই চরিত্রটি পছন্দ হয়েছিল আমিরের।
২০১৮ সালের মার্চ মাসে দেওয়া এক পুরনো সাক্ষাৎকারে আমির বলেন, ‘‘রাজকুমার আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল ‘সঞ্জু’ ছবির চিত্রনাট্যের খসড়া নিয়ে। চিত্রনাট্যটি আমার খুব পছন্দ হয়েছিল। রাজকুমার আমাকে দত্ত সাহেবের (বলি অভিনেতা সুনীল দত্ত, সম্পর্কে সঞ্জয়ের পিতা) চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। চরিত্রটি খুব ভাল ছিল। গল্পটি আসলে পিতা-পুত্রের সম্পর্ককে নির্ভর করেই বোনা হয়েছিল। কিন্তু আমার মন অন্য কিছু চাইছিল।’’
আমির বলেছিলেন, ‘‘সঞ্জয় দত্তের চরিত্রগঠন দুর্দান্ত ছিল। অভিনেতা হিসাবে আমি রাজকুমারকে জানিয়েছিলাম যে, সঞ্জয় দত্তের চরিত্র আমার মন জিতে নিয়েছে। এই ছবিতে অভিনয় করতে গেলে আমি সঞ্জয়ের চরিত্র ছাড়া অন্য কোনও চরিত্রে অভিনয় করতে পারব না।’’
‘সঞ্জু’ ছবিতে মুখ্যচরিত্রে যে রণবীর অভিনয় করছেন তা জানতেন আমির। সাক্ষাৎকারে আমির বলেছিলেন, ‘‘আমি জানতাম যে ‘সঞ্জু’ ছবিতে মুখ্যচরিত্রে রণবীর অভিনয় করছেন। তাই আমি রাজকুমারকে বলেছিলাম আমায় অন্য কোনও চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব না দিতে।’’