রেলযাত্রা অনেক সময়ই নানা ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার জন্ম দেয়। দুর্ঘটনার কথা বলছি না। এমন অনেক কিছুই চালকরা করেন, যার ফলে ভুগতে হয় যাত্রীদের।
শুধু ভারতে নয়, বিশ্বের নানা দেশের যাত্রীদেরই কমবেশি তেমন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে।
মঙ্গলবারই যেমন বিহারের সমস্তিপুর স্টেশনে ট্রেন দাঁড় করিয়ে রেখে মদ্যপান করতে চলে গিয়েছিলেন চালক। প্রায় এক ঘণ্টা স্টেশনে অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীদের।
সিগন্যাল খোলা থাকার পরও ট্রেন না ছাড়ায় জিআরপি খোঁজ নিতে গেলে দেখা যায় ট্রেনের চালক নিখোঁজ। কিছুক্ষণ পর ওই চালককে স্টেশনের অদূরেই মত্ত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। তাঁকে তখনই গ্রেফতার করে জিআরপি।
বেশ কয়েক বছর আগের কথা, লন্ডনের এক টিউব চালক ট্রেনের ঘোষণা করার মাইকে পর্ন ভিডিয়ো চালিয়ে দেন। এই ঘটনায় ট্রেনের যাত্রীরা অনেকে বিব্রত হয়েছিলেন, আবার অনেকে হেসেও ফেলেছিলেন।
পল বার্টন নামে এক যাত্রী ওই ঘটনার ভিডিয়ো টুইটারে শেয়ার করেন। ভাইরাল হয়েছিল সেই ভিডিয়োটি। লন্ডন পরিবহন দফতর ওই চালকের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছিল তা জানতে পারা যায়নি।
সম্প্রতি রাজস্থানের অলওয়ারে এক ট্রেন চালকের কীর্তি ভাইরাল হয় নেটমাধ্যমে। ট্রেনের চালক দাউদপুর রেল ক্রসিংয়ে খাস্তা কচুরি নেওয়ার জন্য হঠাৎ ট্রেন দাঁড় করিয়ে দেন। ওই দিকে ক্রসিংয়ে বহু মানুষ অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে ছিলেন লাইন পারাপার করবেন বলে। চালকের এই দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের নিন্দা করেন সকলেই।
এই ঘটনার জেরে জয়পুরের ডিভিশনাল ম্যানেজার, ওই চালক-সহ মোট পাঁচ জনকে বহিষ্কার করেন।
এ বারে ঘটনা বিহার সিওনে। ওই স্টেশনে ট্রেন দাঁড় করিয়ে সহকারী চালক চলে যান চা খেতে। ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে গেলেও সহকারী চালক এসে না পৌঁছনোয় মূল চালক ট্রেন চালিয়ে তাঁর সহকারী যেখানে চা খাচ্ছিলেন সেখানে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে দেন।
তার পর দেখা যায় ওই সহকারী এগিয়ে এসে মূল চালকের হাতে এক কাপ চা এগিয়ে দেন। সুতরাং ট্রেনটি সহকারী চালক ছাড়াই সিওন স্টেশন থেকে ছেড়ে দেয়। এই ঘটনা দায়িত্বহীনতার এক চরম উদাহরণ।
পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ায় ট্রেন ছাড়তে রাজি হননি মূল চালক। উত্তরপ্রদেশের শাহজাহানপুরের ঘটনা। বালামাউ প্যাসেঞ্জারের চালক শাহাজাহানপুর স্টেশনে এসে ট্রেন চালাতে রাজি হননি। তার কারণ হিসেবে তিনি জানান তাঁর পর্যাপ্ত ঘুম হয়নি।
প্রায় দু’ঘন্টা ঘুমিয়ে নেওয়ার পর ওই চালক ট্রেনটিকে শাহজাহানপুর থেকে রোজা স্টেশনে নিয়ে যান। সেখান থেকে অন্য একজন চালক ট্রেনটিকে বালামাউ ফেরত নিয়ে যান।
ফের বিহার। যাত্রীদের ট্রেন ঠেলতে অনুরোধ করেন চালক। কোনও এক যাত্রী আপৎকালীন চেন টেনে দেওয়ায় ট্রেনটি ‘নিউট্রাল জোন’এ দাঁড়িয়ে যায়। ট্রেনটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করার জন্য আরও ১২ ফুট এগিয়ে নিয়ে যেতে হত।
অন্য উপায় খুঁজে না পেয়ে ওই ট্রেনের চালক যাত্রীদেরই ট্রেনটিকে ঠেলার জন্য অনুরোধ করেন। কয়েকশো যাত্রী মিলে প্রায় আধ ঘণ্টার প্রচেষ্টায় ট্রেনটিকে ১২ ফুট ঠেলতে সক্ষম হন। ফের বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হয় ট্রেনে।
পটনা থেকে উত্তরপ্রদেশের মুঘলসরাইগামী একটি যাত্রিবাহী ট্রেন বিহারের বক্সার স্টেশনে থামিয়ে দিয়েছিলেন চালক এন কে সিংহ। তারপর ট্রেন ছেড়ে দিয়ে প্রচণ্ড গরম এড়াতে ঠান্ডা জলে চান করতে চলে যান।
সবুজ সঙ্কেত থাকার পরও ট্রেন না ছাড়ায় এবং হাজার ঘোষণা পরেও তিনি ট্রেনে ফেরত না আসায় তাঁর খোঁজ শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর তিনি ট্রেনে ফিরে এসে ট্রেনটি চালাতে শুরু করেন। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে।
ভারতীয় রেল প্রতিদিন গড়ে প্রায় দেড় কোটি যাত্রী বহন করে। এই সংখ্যা নরওয়ে এবং সুইডেনের জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। কিন্তু রেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রায়ই সমালোচনার মুখে পড়ে।