রাজনীতি থেকে জোর করে সরিয়ে দিলে কী ভাবে অবসর যাপন করেন রাজনীতিকরা? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, হয় সমস্ত বিষয়ে নিজের মতামত জাহির করতে টুইটের পর টুইটে ব্যস্ত অথবা এককালের সতীর্থদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছেন। শেষমেশ কোনও এককালে খবরের কাগজের একটি আধ কলমেরও ছোট জায়গা জুড়ে ভেসে উঠছেন— ‘প্রয়াত অমুক রাজনীতিক।’ তবে বীণা কাকের প্রসঙ্গে বোধ হয় তা বলা সঠিক হবে না।
কে বীণা কাক? রাজস্থানের এককালের চার বারের বিধায়ক এবং দু’বারের ক্যাবিনেট মন্ত্রী বীণার জীবন ফিল্মের থেকে কম আকর্ষণীয় নয়। ওঠাপড়াও কম হয়নি বীণার জীবনে। তবে আজকাল তিনি নেটমাধ্যমে নজর কাড়ছেন সলমন খানের সঙ্গে নতুন বছরের পার্টিতে হুল্লোড়ে মেতে উঠে।
নানা রূপেই দেখা দিয়েছেন বীণা। কখনও রেডিয়োর অনুষ্ঠানে সঞ্চালক, কখনও বা ইউটিউবে নিজের চ্যানেলে পরিবেশ বা ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা প্রচারে ব্যস্ত। এক সময় ফোটোগ্রাফির নেশায় মেতেছিলেন। উর্দু কবিতা বা রাজস্থানি প্রবাদের সংগ্রহকে জনমানসে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজেও মন দিয়েছেন।
পিছন ফিরে তাকালে জানা যায়, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক এম আর ভাসিনের ছয় সন্তানের মধ্যে বীণার জন্ম রাজস্থানের ভরতপুরে। সালটা ১৯৫৪।১৫ ফেব্রুয়ারি। নারী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা কমলা ভাসিনের বোন বীণার গোড়ার জীবন বেশ নিস্তরঙ্গই বলতে হবে। স্নাতকোত্তর স্তরে প্রথাগত পড়াশোনার পাট চুকিয়ে বিয়ে ভরত কাকের সঙ্গে। তবে সে বিয়ে টেকেনি।
ভরতের সঙ্গে বিয়ের সূত্রেই নেহরু পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে বীণার। বিয়ের পর রাজনীতির আঙিনায় প্রবেশ। কংগ্রেসের কর্মী হিসেবেই গত শতকের আশির দশকে রাজনৈতিক জীবন শুরু। এক সময় পালি জেলায় মহিলা কংগ্রেসের সভাপতিও হন তিনি।
১৯৮৫ সালে কংগ্রেসের টিকিটে সুমেরপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হন বীণা। তবে ১০৯০ সালের নির্বাচনে মাত্র ২৭ ভোটে হেরে যান তিনি। তবে ’৯৩ ও ’৯৮-এ টানা দু’বার সুমেরপুর জয় করেন। ২০০৩-এর নির্বাচনে ফের হার। ২০০৮ সালের জিতলেও ২০১৩-র নির্বাচনে আবার হারে মুখে দেখেন বীণা।
রাজনীতিক হিসেবে বীণার উত্থান কম নাটকীয় নয়। রাজস্থান সরকারে ক্যাবিনেটে থেকে সামলেছেন পর্যটন, বন, নারী ও শিশুকল্যাণ দফতর। শিল্প ও সংস্কৃতি, পুরাতত্ত্ব দফতরের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি।
কংগ্রেস সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দফতর সামলালেও ২০০৩ সালে নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর সুমেরপুর আসনে বীণাকে টিকিট দিতে রাজি হননি প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। সে সময়ই বীণার কাছে অভাবনীয় সুযোগ আসে।
রাজস্থানের ক্যাবিনেট মন্ত্রী হলেও রাজনীতিক নয়, নতুন প্রজন্মের অনেকের কাছে বীণার অন্য পরিচয় রয়েছে। তিনি সলমন খানের ‘মা’। ঘাবড়ে যাবেন না! তা আসলে বলিউডে পর্দায়।
ভোটে পরাজয়ের পর তাঁর রাজনীতি থেকে বীণাকে প্রায় অবসরের পথে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি ঘনিষ্ঠ মহলের। তবে হতাশ না হয়ে সুযোগকে কাজে লাগিয়েছিলেন বীণা। সে সুযোগ এসেছিল আবার সলমন খানের কাছ থেকে। তাঁর সঙ্গে ফিল্মে অভিনয় করতে হবে।
সলমনের পরিবারের ঘনিষ্ঠ বীণা অভিনয়ের সুযোগ হারাননি। বরাবরই অভিনয়ের ঝোঁক ছিল তাঁর। ফলে সলমনের প্রস্তাব প্রায় একবাক্যে মেনে নিয়েছিলেন। কংগ্রেস নেত্রীর যাত্রা শুরু হয় ২০০৫ সালে।
২০০৫ সালে বীণার অভিষেক ডেভিড ধওয়ানের ফিল্মে। ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিঁউ কিয়া?’-তে সলমনের মায়ের চরিত্রে। এর পর ‘গড তুস্সি গ্রেট হো’, ‘নান্হে জয়সলমের’, ‘দুলহা মিল গয়া’, ‘সালাম-ই-ইশ্ক: আ ট্রিবিউট টু লভ’, ‘জানিসার’— অভিনয়ে যতি দেননি।
অভিনয় ছাড়াও শায়েরি নিয়ে বীণার আগ্রহ কম নয়। ক্যানসার জয়ী বীণা নিজের কাহিনি ছড়িয়ে দিতে ইউটিউবের সদ্ব্যবহার করছেন। শায়েরির প্রতি যাতে নতুন প্রজন্মের আগ্রহ জন্মায়, সে জন্য কাজ শুরু করেছেন তিনি। সঙ্গে ইউটিউবে সাদত হাসান মান্টো, সর্দার জাফরির লেখনী থেকে শুরু করে কাতিল শিফাই অবশ্যই মির্জা গালিবের শায়েরি পাঠও করেন তিনি।
শায়েরি ছাড়াও রাজস্থানি প্রবাদ বাক্য এবং তার পিছনের কাহিনি নিয়ে নিরলস কাজ করে চলেছেন বীণা। বিজয়গদান দেথা এবং লক্ষ্মীকুমারী চুন্ডাবতের ছোট গল্পের প্রসারেও উদ্যোগী তিনি। আর কোন ক্ষেত্রে পা বাড়াবেন বীণা?