আগামী বছর আইপিএলের জন্য ইতিমধ্যেই ঘর গুছিয়ে ফেলেছে প্রতিটি দল। ঘর গুছিয়েছে শাহরুখ খানের দল কলকাতা নাইট রাইডার্সও।
কলকাতার হাতে ১৩ জন খেলোয়াড় আগে থেকেই ছিল। ফাঁকা ছিল ১২টি জায়গা। এর পর গত ১৯ ডিসেম্বর ৩২.৭০ কোটি টাকা পকেটে নিয়ে আইপিএলের মিনি নিলামে অংশগ্রহণ করেছিলেন গৌতম গম্ভীররা।
মিনি নিলাম থেকে ১০ জন খেলোয়াড়কে কিনেছে কেকেআর। অর্থাৎ, এই মূহর্তে কলকাতার দলে ২৩ জন ক্রিকেটার আছে। ফাঁকা রয়েছে ২টি জায়গা।
তবে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের মতে দলে ২৩ জন থাকলেও যে ১১ জনকে নিয়ে শাহরুখের দল মাঠে নামবে তাঁদের বেছে নেওয়া খুব কঠিন হবে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কেকেআরের প্রথম একাদশের তালিকায় প্রথমেই রয়েছে দলের অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ারের নাম। দলের ব্যাটারদের নিয়ে প্রথম থেকেই খুব একটা চিন্তায় ছিলেন না শাহরুখ-গম্ভীররা। তার অন্যতম কারণ শ্রেয়স। সদ্য বিশ্বকাপ খেলেছেন শ্রেয়স। ফাইনালে তাঁর ব্যাটে রান না এলেও বিশ্বকাপ জুড়ে তাঁর পারফরম্যান্স ছিল দেখার মতো।
সেরা একাদশের তালিকায় এর পরেই রয়েছেন রিঙ্কু সিংহ। আইপিএল বিশেষজ্ঞদের মতে, রিঙ্কু নাইটদের নতুন ‘তুরুপের তাস’। আইপিএল ২০২৩-এ কেকেআরের যাত্রার দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায়, কলকাতার দলের অন্যতম প্রাপ্তির নাম রিঙ্কু। প্রতিযোগিতার শেষ ম্যাচ পর্যন্ত নিজের জাত চিনিয়েছেন তিনি।
কেকেআরের সেরাদের তালিকায় রয়েছেন ব্যাটার নীতিশ রানাও। গত বছর শ্রেয়স চোট পাওয়ার পর কিছু দিন দলের হাল ধরেছিলেন নীতীশ। তবে তড়িঘড়ি করে তাঁকে অধিনায়ক করার মাসুল গুনতে হয়েছিল কেকেআরকে। দল সম্পর্কে তেমন ধারণা তখনও তাঁর তৈরি হয়নি। একাধিক ভুল সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন। তবে বেশ কয়েকটি ম্যাচে তিনি নিজে ভাল ব্যাটিং এবং বোলিং করেছিলেন।
বিদেশি ক্রিকেটার হিসাবে নাইটদের দলে রয়েছেন রহমানুল্লা গুরবাজ়। কলকাতা দলের মূল উইকেটরক্ষক তিনি। তাঁকেও সেরা একাদশে রাখছেন অনেকে।
কেকেআরের বড় অপ্রাপ্তির জায়গা অলরাউন্ডার। মিনি নিলামে রাচিন রবীন্দ্র, ড্যারিল মিচেল, হর্ষল পটেল, জেরাল্ড কোয়েৎজির মতো অলরাউন্ডার ছিলেন। কারও দিকেই ঝাঁপায়নি তারা। পরে রমনদীপ সিংহকে ২০ লাখ টাকায় কেনে কলকাতার দল। তবে রমনদীপের উপর ভরসা রেখে কেকেআর এগিয়ে যেতে পারে বলেই ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত।
বাকি যে দুই অলরাউন্ডার কেকেআরের পারফরম্যান্স ঘুরিয়ে দিতে পারেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম বেঙ্কটেশ আইয়ার। আইপিএলের আগের মরসুমে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে কেকেআরের হয়ে শতরান করেছিলেন বেঙ্কটেশ। বাকি কিছু ম্যাচেও রান করেছিলেন।
অলরাউন্ডার হয়ে কেকেআরের হাল ধরতে পারেন ক্যারিবীয় আন্দ্রে রাসেল। রাসেলের কাছে বহু বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। ২২ গজে বিভিন্ন সময়ে তাঁকে রণমূর্তি ধরতে দেখা গিয়েছে। যদিও আগের মরসুমে তেমন ভাবে নজর কাড়তে পারেননি রাসেল।
এ বছরের মিনি নিলামে কলকাতার সেরা প্রাপ্তি নিঃসন্দেহে অস্ট্রেলিয়ার বোলার মিচেল স্টার্ক। আইপিএলের ইতিহাসে মিচেলকে সব থেকে বেশি দাম দিয়ে কিনে নজির গড়েছে কলকাতার দল। নিলামে অস্ট্রেলিয়ার বোলারকে ২৪ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকায় কিনেছে কেকেআর। মিচেল বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলার হিসাবে বিবেচিত হন। এ বারে কেকেআরের বোলিং বিভাগের মুখ হতে পারেন তিনিই।
বাকি বোলারদের মধ্যে প্রথম একাদশের তালিকায় থাকছেন সুযশ শর্মা। আইপিএলের গত মরসুমে রিঙ্কুর পর কেকেআরের আর এক আবিষ্কার ছিলেন সুযশ। গত বছরের আইপিএলে প্রথম দু’-একটি ম্যাচের ‘রহস্য স্পিনার’-এর খেতাব পেলেও তিনি তা ধরে রাখতে পারেননি। মার খেয়েছেন বিপক্ষের হাতে। তবে তিনিও প্রথম একাদশে থাকবেন বলেই মনে করা হচ্ছে। সুযোগ পেলে সুযশকে ‘ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার’ হিসাবে ব্যবহার করতে পারে কলকাতা।
গত বছর আইপিএলের বোলিং বিভাগে উজ্জ্বল মুখ ছিলেন বরুণ চক্রবর্তী। তাঁর বলের বৈচিত্র্য হারিয়ে গিয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছিল। তবে ১৪ ম্যাচে ২০টি উইকেট নিয়ে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি। রানও বেশি দেননি। বরুণের উপর এ বারও ভরসা রাখছে শাহরুখ-গম্ভীরের দল।
সেরা একাদশের তালিকায় বিদেশি বোলারদের মধ্যে নাইটদের দলে রয়েছেন সুনীল নারাইন। বিগত বেশ কয়েকটি মরসুমে কেকেআরের বৈতরণী তিনি পার করেছেন। তবে আগের মরসুমে নারাইন উইকেট কম পেয়েছেন। তবে রান বেশি দেননি।
নাইটদের দলে ভাল ভারতীয় পেসার নেই। তার মধ্যে হর্ষিত রানা ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল খেললেও আইপিএলের মতো মঞ্চে এখনও যথেষ্ট পরীক্ষিত নন। আগের আইপিএল দেখে মনে হয়েছিল হর্ষিতের বলে গতি থাকলেও তা নিয়ন্ত্রণে নেই। তাঁকেও ঘষেমেজে নিতে হবে তারকা হতে হলে। তবে এক বছরে তিনি না কি নিজেকে অনেকটাই তৈরি করে ফেলেছেন। সেই কারণে ২০২৪-এর আইপিএলে হর্ষিতও কেকেআরের হয়ে হাল ধরতে পারেন বলে মনে করছেন অনেকে।