৯০-এর দশকে বলিউডের সেরা অভিনেত্রীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আয়েশা জুলকা। ১৯৯১ সালে ‘কুরবান’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন অভিনেত্রী। তার পর থেকে একের পর এক সুপারহিট ছবি দর্শকদের উপহার দিয়ে গিয়েছেন আয়েশা। শুধু হিন্দি ছবিতেই নয়, ওড়িয়া, কন্নড়, তেলুগু ছবিতেও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
কিন্তু বলিউডে ‘কুরবান’ ছবিতে তাঁর প্রথম অভিনয় করার কথা ছিল না। কথা ছিল, ‘নরসিংহ’ ছবির মাধ্যমেই বলিউডে আগমন হবে আয়েশার। চিত্রনাট্য শুনে পছন্দ হয়েছিল অভিনেত্রীর।
আয়েশাকে ‘মীনা সিংহ’ চরিত্রের জন্য নির্বাচন করা হয়েছিল। এই চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাবে রাজিও হয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু পরের দিন সকালবেলা সংবাদপত্রের একটি হেডলাইন আয়েশার স্বপ্ন চুরমার করে দেয়। সংবাদপত্রের মাধ্যমে অভিনেত্রী জানতে পারেন যে ‘নরসিংহ’ ছবি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে আয়েশাকে।তার বদলে নেওয়া হচ্ছে ঊর্মিলা মাতন্ডকরকে।
এই খবর পেয়ে আকাশ থেকে পড়েন আয়েশা। ছবি থেকে বাদ পড়ে গেলেন কিন্তু তাঁকেই কেউ জানালেন না! ভুয়ো খবর ছড়ানো হচ্ছে ভেবে প্রথমে তিনি এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।
কিন্তু প্রায় সমস্ত সংবাদপত্রে এই খবর প্রকাশ হওয়ায় ছবির পরিচালক-প্রযোজকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। তাঁদের তরফে জানানো হয়, আয়েশার বদলে তাঁরা ঊর্মিলাকে বেছে নিয়েছেন।
১৯৯১ সালে এই অ্যাকশন-ড্রামা ঘরানার ছবি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। এই ছবির সাফল্য সানি দেওল, ওম পুরী, ডিম্পল কপাডিয়া, ঊর্মিলা মাতন্ডকরের কর্মজীবনে একটি মাইলফলক যোগ করে।
এই ভাবে প্রতারিত হওয়ায় মানসিক দিক দিয়ে ভেঙে পড়েন তিনি। পরিবারের সদস্যরা পাশে থাকলেও তিনি এই ঘটনায় মর্মাহত হয়েছিলেন।
প্রথম ছবিতেই বাদ পড়ার পর ভবিষ্যতে আর কোনও কাজ পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা কাজ করছিল অভিনেত্রীর মধ্যে। তাঁকে ছবি থেকে বাদ দেওয়ার কারণও আয়েশার কাছে স্পষ্ট ছিল না।
পরবর্তী কালে কানাঘুষো শোনা যায়, ‘কুরবান’ ছবিতে কাজ শুরু করার আগেই তিনি এক অভিনেতার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিলেন। তাই আয়েশাকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এই ঘটনার কয়েক মাস পরেই তিনি আরও একটি ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পান। ‘কুরবান’ ছবিতে সলমন খানের বিপরীতে অভিনয় করার সুযোগ পান আয়েশা।
এই সিনেমার শ্যুটিং চলাকালীনও তিনি আগেকার ঘটনা নিয়ে চিন্তিত থাকতেন। কিন্তু ‘কুরবান’ ছবির সঙ্গে যুক্ত সদস্যেরা সকলেই ভরসা দিয়েছিলেন তাঁকে।
সম্প্রতি এই প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী জানান, ‘নরসিংহ’ থেকে তাঁকে না জানিয়েই বাদ দিয়ে দেওয়ার ঘটনায় তিনি আশাহত হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর পাশে পরিবার এবং ‘কুরবান’ ছবির সদস্যরা সব সময় ছিলেন।
তিনি আরও জানান, ‘কুরবান’ ছবিতে কাজ করার পর তাঁর অভিনয় দক্ষতা দেখে সকলে মুগ্ধ হয়ে যান। এমনকি, ‘জো জিতা ওহি সিকন্দর’ ছবির পরিচালক মনসুর খান তাঁর অভিনয় দেখে প্রযোজক নাসির হুসেনের কাছে যান।
পরিচালক নাসিরকে জানান, আয়েশাকেই তিনি তাঁর ছবির নায়িকা হিসাবে বেছে নিয়েছেন। এর পর আর আয়েশাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
পরে আয়েশা এক সাক্ষাৎকারে জানান, ‘নরসিংহ’ ছবি থেকে বাদ দিয়ে দেওয়ায় তাঁর লোকসান তো হয়ইনি, বরং লাভ হয়েছে। তাঁর মতে, ‘মীনা সিংহ’-এর চরিত্রটিকে ছবিতে খুব অল্প সময়ের জন্য দেখানো হত। এই চরিত্রে অভিনয় করলে তিনি দর্শকের কাছে পৌঁছতে পারতেন না।
অন্য দিকে ‘কুরবান’ ছবিতে তিনি মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন যার প্রভাব তাঁর কর্মজীবনেও পড়ে।
বলিপাড়ায় বহু বছর পর ফিরতে চলেছেন আয়েশা। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে আসা ‘হাশ হাশ’ ওয়েব সিরিজে দেখা যাবে অভিনেত্রীকে।