নিখোঁজ হওয়ার পর কেটে গিয়েছে এক দশক। তার পরও বিমান রহস্যের কিনারা হয়নি সম্পূর্ণ ভাবে। মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৩৭০ বা এমএইচ ৩৭০ আজও রহস্য।
কুড়িটিরও বেশি দেশের সন্ধানকারীরা সেই বিমান খুঁজে বার করতে চেষ্টা করলেও পাওয়া যায়নি প্রামাণ্য ধ্বংসাবশেষও। যাত্রী-সহ স্রেফ হাওয়ায় মিলিয়ে যায় বিমানটি।
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার এক জন বিজ্ঞানী দাবি করেছেন যে, তিনি নিখোঁজ বিমানটির একটি ‘সম্ভাব্য এবং নিখুঁত’ লুকিয়ে থাকার জায়গা আবিষ্কার করেছেন। তাসমানিয়ার গবেষক ভিনসেন্ট লিন বলেছেন যে, তিনি বিশ্বাস করেন যে বিমানটি কোথায় রয়েছে তা তিনি খুঁজে পেয়েছেন।
ভিনসেন্ট লিন সম্প্রতি লিঙ্কডইনে একটি পোস্টের মাধ্যমে বিমান নিখোঁজ রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি করেছেন। লিন দাবি করেছেন যে, বিমানটি ‘ইচ্ছাকৃত ভাবে’ ব্রোকেন রিজের গভীরে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়।
ভারত মহাসাগরের একটি ২০ হাজার ফুট গভীর গর্ত এই ব্রোকেন রিজ বা ভঙ্গুর মালভূমি। সেই ব্রোকেন রিজের পূর্ব প্রান্ত অত্যন্ত রুক্ষ এবং বিপজ্জনক।
অত্যন্ত খাড়াই পাথুরে দেওয়াল দিয়ে ঘেরা সংকীর্ণ সেই গর্ত পলি দিয়ে ভর্তি। সেখানেই থাকতে পারে নিখোঁজ এমএইচ ৩৭০, এমনই দাবি ভিনসেন্ট লিনের।
অবিলম্বে এই জায়গায় তল্লাশির দাবি করে তিনি বলেন, অনুসন্ধান করা হবে কি না তা অনুসন্ধান সংস্থাগুলির উপর নির্ভর করছে।
৮ মার্চ রাত ১২টা ৪১ মিনিটে, কুয়ালা লামপুর বিমানবন্দর থেকে ২২৭ জন যাত্রী ও ১২ জন বিমান সদস্য নিয়ে বেজিংয়ের উদ্দেশে উড়ে যায় এমএইচ৩৭০।
ভোরবেলা বেজিং পৌঁছনোর কথা ছিল সেটির। কিন্তু উড়ানের এক ঘণ্টা পরেই বিমানটির সঙ্গে নিয়ন্ত্রক আধিকারিকদের সমস্ত সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
অন্তর্ধানের আগে পর্যন্ত বিমান থেকে কোনও রকম বিপদসঙ্কেত বা বার্তা আসেনি। রাত ১টা ২১ মিনিটে ভিয়েতনামের দক্ষিণে কামাউ আকাশসীমায় প্রবেশ করার পরে বিমানটির সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যায় এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের।
কুয়ালা লামপুর থেকে বেজিং যাওয়ার পথে মাঝ আকাশে হারিয়ে যায় বিমানটি। বহু খোঁজ, বহু তল্লাশির পরেও খোঁজ মেলেনি সেটির। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে সমস্ত অনুসন্ধান বন্ধ করে দেওয়া হয়।
উপগ্রহচিত্র দেখে জানা গিয়েছে, সমুদ্রে পতনের আগে বিমানটি টানা ৭ ঘণ্টা ভারত মহাসাগরের দক্ষিণাংশের দিকে উড়ে গিয়েছিল। প্রায় ১০ বছর পরে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের এই বিমানের ধ্বংসাবশেষ ভারত মহাসাগর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়। কিন্তু পরবর্তী কালে সেগুলি এমএইচ ৩৭০-র অংশ নয় বলেই প্রমাণিত হয়।
নিখোঁজ বিমান এমএইচ ৩৭০-র খোঁজ পেয়েছেন বলে ২০১৮ সালে দাবি করেছিলেন এক অস্ট্রেলীয় ইঞ্জিনিয়ার। তিনি নাসা এবং গুগল ম্যাপের সহায়তায় ওই জায়গাটি খুঁজে বার করার চেষ্টা শুরু করেন।
অস্ট্রেলিয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড সেফটি ব্যুরো পিটার ম্যাকমাহন নামে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের সেই দাবি নস্যাৎ করে দেয়। পুরোটাই পিটারের মনগড়া বলে জানায় তারা।
নিখোঁজ এমএইচ৩৭০-র সন্ধানে আমেরিকা, চিন, ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম যৌথ তৎপরতায় উদ্ধার অভিযানে নামে। কিন্তু নিট ফল শূন্য।
বিমানটির খোঁজে ভারত মহাসাগরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে চিরুনি তল্লাশি চলে। বারবারই শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে অনুসন্ধানকারীদের। অধরাই রয়ে গিয়েছে এমএইচ ৩৭০ বিমান রহস্য ।