রবিবার ২৩ জুন বিয়ে করলেন অভিনেত্রী সোনাক্ষী সিন্হা। দীর্ঘ দিনের প্রেমিক জ়াহির ইকবালের সঙ্গে শুভ পরিণয় হল সোনাক্ষীর। প্রায় সাত বছরের সম্পর্ক। ২৩ জুন, ২০১৭ সালে এই দিনেই দেখা হয়েছিল জ়াহির-সোনাক্ষীর। তাই সাত বছর পর ওই দিনেই বিয়ে করলেন তাঁরা। তবু সোনাক্ষী-জ়াহিরের বিয়ে নিয়ে প্রথম থেকে চাপানউতর চলছিল। মুসলিম ছেলেকে বিয়ে করছেন বলে কি ধর্ম বদলাতে হবে অভিনেত্রীকে? না তেমন কিছুই হয়নি। ‘স্পেশ্যাল ম্যারেজ অ্যাক্ট’ অনুযায়ী বিয়ে হয়েছে তাঁদের।
অভিনেত্রীর শ্বশুর আগেই জানিয়েছিলেন, সোনাক্ষীকে ধর্ম পরিবর্তন করতে হবে না। জ়াহিরের বাবা বলেন, ‘‘সোনাক্ষীর ধর্মান্তরণ হচ্ছে না, এই ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত। বিয়ে হল দুই হৃদয়ের মেলবন্ধন। এখানে ধর্মের কোনও বিষয় নেই। আমি মানবতায় বিশ্বাস করি। হিন্দুরা ভগবান বলেন আর মুসলিমরা বলেন আল্লাহ্। কিন্তু, দিনের শেষে আমরা মানুষ। জ়াহির ও সোনাক্ষীর জন্য আমার আশীর্বাদ রইল।”
সোনাক্ষীর আগে বিশেষ বিবাহ আইন অনুসারে ২০২৩ সালে বিয়ে সেরেছেন অভিনেত্রী স্বরা ভাস্কর এবং সমাজবাদী পার্টির যুবনেতা ফাহাদ আহমেদের। মার্চ মাসে সামাজিক বিয়েও সারেন স্বরা-ফাহাদ। সেই বছর সেপ্টেম্বরে জন্ম হয় কন্যা রাবিয়ার। যদিও সোনাক্ষীর বিয়ের খবর শুনে আশঙ্কাপ্রকাশ করেছিলেন স্বরা। স্বরার দাবি, ভিন্ধর্মে বিয়ে করলে নাকি সন্তানের ধর্ম এবং সন্তানের নাম কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে ওঠে। তিনি নিজের ভুক্তভোগী। তাই আগেভাগেই সতর্ক করেছেন সোনাক্ষীকে।
যদিও সোনাক্ষী-জ়াহিরের বিয়ের ধরন দেখে খুশি লেখিকা তসলিমা নাসরিন। বিয়ের কারণে কারও ধর্মবিশ্বাস যে পরিবর্তন করতে হয়নি, সেটা দেখেই খুশি লেখিকা।
তসলিমা জ়াহির-সোনাক্ষীর বিয়ে প্রসঙ্গে লেখেন, ‘‘জ়াহির তাঁর নামাজ রোজা, আদৌ যদি ইচ্ছে হয় করবেন। সোনাক্ষীর যদি পুজো করতে ইচ্ছে হয় করবেন। একই বাড়িতে। কেউ কাউকে বাধা দেবেন না। শাহরুখ খানের বাড়িতেও তো তেমনই হয়। মধুর যে কোনও সম্পর্কে ধর্ম হয়ে ওঠে তুচ্ছ ব্যপার।’’
শাহরুখ খান ও গৌরী খান বলিউডের অন্যতম বিখ্যাত দম্পতি। প্রায় ৩০ বছরের দাম্পত্যজীবন তাঁদের। তবে শাহরুখ-গৌরীর প্রেমকাহিনি এখন অনেকেরই জানা। এমনকি, তাঁদের দাম্পত্যজীবনের গল্প একাধিক বার অনুরাগীদের সামনে উঠে এসেছে। পঞ্জাবি হিন্দু পরিবারের মেয়ে গৌরী ও মুসলিম পরিবারের ছেলে শাহরুখ। তবে ধর্ম কোনও দিনই তাঁদের ভালবাসায় অন্তরায় হতে পারেনি। কিন্তু মুসলিম ছেলে শাহরুখের সঙ্গে বিয়েতে আপত্তি ছিল গৌরীর পরিবারের। তবে সময়ের সঙ্গে পাল্টে গিয়েছে সম্পর্কের সমীকরণ।
প্রথম স্ত্রী রিনা দত্তের সঙ্গে বিচ্ছেদের কয়েক বছর পরে ২০০৫ সালে কিরণের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন অভিনেতা। যদিও দু’বারই বিয়ে ভেঙেছে আমির খানের। তবে দু’বার হিন্দু ধর্মের নারীকে বিয়ে করেছেন অভিনেতা। তবে ধর্ম কখনই তাঁদের সম্পর্কের মাঝে আসেনি।
১৯৯৮ সালে বিয়ে করেন আরবাজ় খান এবং মালাইকা আরোরা। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী পরিবারের মেয়ে মালাইকার বিয়ে হয় মুসলিম পরিবারে। ভালবেসেই বিয়ে করেন তাঁরা। বিয়েতে খ্রিস্ট ধর্মের রীতি মেনেছিলেন আরবাজ়-মালাইকা। দু’জনের কাউকেই ধর্ম পরিবর্তন করতে হয়নি বিয়ের জন্যে। ২০০২ সালে জন্ম নেয় তাঁদের ছেলে আরহান। ২০১৭ সালে ১৯ বছরের দীর্ঘ দাম্পত্য ভেঙে যায় তাঁদের। বিচ্ছেদ হলেও নিজেদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন আরবাজ এবং মালাইকা।
২০০৩ সালে ‘তুঝে মেরি কসম’ ছবিতে প্রথম আলাপ। ২০১২ সালে মহা ধুমধামে বিয়ে করেন রীতেশ দেশমুখ এবং জেনেলিয়া ডি’সুজার। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী জেনেলিয়া সাত পাক ঘুরেই বিয়ে করেন রীতেশকে। তাঁদের দুই সন্তান রাহিল এবং রিয়ান। তাঁদের বাড়িতে পুজোয় অংশ নেন জেনেলিয়া। একই ভাবে বড়দিনের উদ্যাপনে মাতে দেশমুখ পরিবার।
২০১২ সালের ১৬ অক্টোবর করিনা কপূর আইনি মতে বিয়ে সারেন সইফ আলি খানের সঙ্গে। সে দিন সকালেই বাড়িতে সাদামাঠা ভাবে বিয়ের আয়োজন করা হয়। পরে দিল্লিতে সইফের মা শর্মিলা ঠাকুর একটি রিসেপশন পার্টির আয়োজন করেন নবদম্পতির জন্যে। পঞ্জাবি হিন্দু পরিবারের মেয়ে করিনার সঙ্গে সইফের বিয়েতে ধর্ম তাঁদের মাঝে অন্তরায় হয়নি। যদিও তাঁদের প্রথম সন্তান তৈমুর আলি খানের জন্মের পর ছেলের নাম নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয় সেই সময়।
ভিকি কৌশল পঞ্জাবি হিন্দু পরিবারের ছেলে তাঁর সঙ্গে বিয়ে হয়েছে ক্যাটরিনা কইফের। জন্মসূত্রে মুসলিম ক্যাটরিনা। তবে সাত পাক ঘুরেই ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর বিয়ে বিয়ে করেন ভিকি-ক্যাট।
২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাস। রাজস্থানের জোধপুরে উমেদ ভবন প্যালেসে গাঁটছড়া বেঁধেছিলেন অভিনেত্রী প্রিয়ঙ্কা চোপড়া ও হলিউডের পপ তারকা নিক জোনাস। ডেস্টিনেশন ওয়েডিং বলে কথা, গোটা উমেদ ভবন প্যালেস সেজে উঠেছিলে প্রিয়ঙ্কা ও নিকের বিয়ে উপলক্ষে। প্রিয়ঙ্কার পরিবার হিন্দু, তবে জোনাস পরিবার খ্রিস্টান। দুই পরিবারের সংস্কৃতির কথা মাথায় রেখে হিন্দু ও খ্রিস্টান— দুই ধর্মমত মেনেই চার হাত এক হয়েছিল যুগলের।