আধুনিক প্রযুক্তির দুনিয়ায় প্রতি নিয়ত ছাপ রেখে চলেছে কৃত্রিম মেধা (এআই)। মানুষের তৈরি যন্ত্রের দাদাগিরি তাক লাগাচ্ছে মানুষকেই। কৃত্রিম মেধা সম্পন্ন যন্ত্রগুলি আগামী দিনে মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে দাঁড়াবে, মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
মানুষের নিত্য জীবনে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে জায়গা পাকা করে ফেলবে এআই, মত বিজ্ঞানীদের। সেই লক্ষ্যেই সভ্যতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগোচ্ছে কৃত্রিম মেধা।
‘এআই’-এর ভবিষ্যৎ যে উজ্জ্বল, তা আন্দাজ করতে পেরেছে ‘গুগল’, ‘মাইক্রোসফ্ট’-এর মতো সংস্থাগুলিও। সে কারণেই তারা নিয়ে এসেছে তাদের নিজস্ব ‘বুদ্ধিমান’ যন্ত্র।
বিভিন্ন সংস্থার এই ‘এআই’ রোবটগুলি বহুল ব্যবহৃত না হলেও ধীরে ধীরে তাদের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ‘এআই’-এর ব্যবহার তো রয়েইছে। আমেরিকায় সাধারণ মানুষও এই রোবটগুলি ব্যবহার করতে শুরু করেছেন।
আধুনিক প্রযুক্তিতে মানুষের নিত্য দিনের কাজে ব্যবহারের যোগ্য বেশ কিছু কৃত্রিম মেধা সম্পন্ন সিস্টেম তৈরি করেছেন গবেষকেরা। তার মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য হল ‘ডাল-এ’।
‘ডাল-এ’ একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন সিস্টেম, যা যে কোনও স্বাভাবিক ভাষায় নির্দেশ গ্রহণ করে এবং নির্দিষ্ট বস্তুর বাস্তব চিত্র তৈরি করে। এআই সংস্থা ‘ওপেন এআই’ তাদের ল্যাবরেটরিতে এই সিস্টেমটি তৈরি করেছে।
২০২১ সালের জানুয়ারিতে ‘ডাল-এ’ প্রকাশ্যে আনে ‘ওপেন এআই’। এই সিস্টেমে ছবি তৈরির জন্য ‘জিপিটি-থ্রি’ ভার্শন ব্যবহৃত হয়। যে কোনও নির্দিষ্ট বস্তুর ডিজিটাল চিত্র তৈরি করে ‘ডাল-এ’।
আরও একটি উল্লেখযোগ্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সিস্টেমের নাম ‘ট্রিপ প্ল্যানার এআই’। এই সিস্টেমটির মাধ্যমে বেড়ানোর পরিকল্পনা হয়ে ওঠে জলভাত। স্বল্প খরচে কোথায় কী ভাবে ঘুরে আসা যায়, তা ভাবার প্রয়োজনই হবে না ব্যবহারকারীর। ‘ট্রিপ প্ল্যানার এআই’ নিজ ক্ষমতাবলে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।
কৃত্রিম মেধার দুনিয়ায় জায়গা পাকা করে নিয়েছে গুগলের ‘সক্র্যাটিক’। এটি মূলত একটি শিক্ষামূলক মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন। ছোটদের পড়াশোনায় সাহায্য করে ‘সক্র্যাটিক’।
এই অ্যাপে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ছোটদের স্কুলের হোমওয়ার্কে সাহায্য করা হয়। পড়াশোনা সংক্রান্ত নানা ভিডিয়ো, ছবি দিয়ে সাজানো এই অ্যাপ। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ১ কোটির বেশি মানুষ ‘সক্র্যাটিক’ ব্যবহার করেন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেম ‘জিএফপি-জিএএন’। এ ক্ষেত্রেও ছবি নিয়ে কারবার ‘এআই’-এর। ‘জিএফপি-জিএএন’ সম্প্রতি যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
কোনও পুরনো ছবিকে নতুনের মতো ঝকঝকে করে তুলতে পারে ‘জিএফপি-জিএএন’। প্রযুক্তির অভাবে পুরনো দিনের ক্যামেরায় তোলা ছবি তেমন স্পষ্ট হত না। কোনও ছবি আবার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নষ্ট হয়ে যায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে এই সমস্ত ছবিকে মুহূর্তে নতুনের মতো করে তোলা যায় ‘জিএফপি-জিএএন’-এর মাধ্যমে।
‘নোশন.এআই’ কৃত্রিম মেধার আরও এক কার্যকরী সিস্টেম। এটি লিখতে সাহায্য করে। যে কোনও সৃষ্টিশীল লেখা, তা এডিট করা, তার সারমর্ম তৈরি করার কাজ অনায়াসে করে ‘নোশন.এআই’। আপনি বিষয় বলে দিলে সে লিখে ফেলবে আস্ত একটি রচনা।
‘লালাল.এআই’ গানবাজনা নিয়ে কাজ করে। কোনও গান বা সুর থেকে এই টুল ব্যবহার করে ইচ্ছা অনুযায়ী বাজনার শব্দ মুছে ফেলা যায়। অর্থাৎ, কোনও গানে যদি ড্রাম, পিয়ানোর শব্দ থাকে, ‘লালাল.এআই’ তা বাদ দিয়ে দিতে পারে অনায়াসে।
‘মিডজার্নি’ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র। এটি কোনও লেখা দেখে নিজে থেকেই নতুন ছবি তৈরি করতে পারে। চিত্রশিল্পীদের জন্য এই যন্ত্র দরকারি।
ছবি নিয়ে খেলে ‘রিমুভ.বিজি’, ‘কাটআউট.প্রো’-এর মতো ওয়েবসাইট। এগুলিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ছবি সাজানো যায় মনের মতো করে। চেনা ছবির ভোল বদলে ফেলে এআই।