Anubrata Mandal: তিনি মুখ খুললেই সন্ধি-সমাস: কেষ্টবুলির সংকলন

অনুব্রত মণ্ডলকে আটক করল সিবিআই। বৃহস্পতিবার বোলপুরের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর বলার সুযোগ পাননি। অতীতে অনেক বাণী দিয়েছেন। বিতর্কে জড়িয়েছেন।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২২ ১৪:৪৬
Share:
০১ ২৩

গরুপাচার-কাণ্ডে বোলপুরের বাড়ি থেকে অনুব্রতকে আটক করেছে সিবিআই। বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর কথা বলা সুযোগ পাননি অনুব্রত, একদা যা করে তিনি বার বাক্-বিতর্কে জড়িয়েছেন।

০২ ২৩

‘বোম মারুন’: ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের আগে বীরভূমের পাড়ুইয়ের কসবায় প্রচারে গিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, ‘‘পুলিশের গাড়িতে বোম মারুন।’’ পরে যদিও বলেছিলেন, ওই ভাবে কথাটা বলতে চাননি। পরে সে জন্য মেয়ে এবং স্ত্রীর কাছে বকা খেতে হয়েছে।

Advertisement
০৩ ২৩

‘নির্দল প্রার্থীর বাড়ি জ্বালিয়ে দিন’: ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে পাড়ুইয়ের ওই সভাতেই অনুব্রত বলেছিলেন, ‘‘প্রশাসন আমাদের প্রতি অবিচার করেছে। কোনও নির্দল প্রার্থীকে ভোট দেবেন না। যদি কোনও নির্দল প্রার্থী হুমকি দেন, তাহলে তাঁর বাড়িটা ভেঙে জ্বালিয়ে দিন।’’

০৪ ২৩

‘কবজি কেটে নেব’: ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে কংগ্রেস কর্মীদের ‘কবজি কেটে নেব’ বলে হুমকি দেন অনুব্রত। কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে হামলা চালানোর হুমকিও দিয়েছিলেন।

০৫ ২৩

‘ইঁদুরের বাচ্চা, বিষ দিয়ে মারুন’: ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে গিয়েছিলেন মঙ্গলকোটে। সেখানে অনুব্রত বিরোধীদের ‘ইঁদুরের বাচ্চা’ বলেন। তার পরেই দলীয় কর্মীদের তাঁর বার্তা, ‘‘শান্তিতে থাকতে হলে ওদের বিষ দিয়ে মারুন।’’

০৬ ২৩

‘চোখ তুলে নেব’: ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগের বছর আউশগ্রামে গিয়েছিলেন অনুব্রত। নিজের গড় শক্ত করতে। কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে এসেছিলেন সিপিএম কর্মীদের। ২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর আউশগ্রামের অভিরামপুরের একটি সভায় তিনি বলেন, ‘‘হুঁশিয়ারি দিচ্ছি। চোখ রাঙাবেন না। চোখ তুলে নেব!’’

০৭ ২৩

‘আমাদের থেকে উন্নয়ন বুঝে নিন’: ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে আউশগ্রামে সভা করতে গিয়েছিলেন অনুব্রত। সভায় সরাসরি হুমকি দেন সিপিএমকে। তার পর সাধারণ মানুষের উদ্দেশে বলেন, ‘‘করজোড়ে আবেদন করছি, আমাদের ভোট দিন আর আমাদের কাছ থেকে উন্নয়ন বুঝে নিন। উন্নয়ন করার দায়িত্ব আমাদের। আউশগ্রামকে সুন্দর ভাবে সাজানোর দায়িত্ব আমাদের।’’

০৮ ২৩

‘চড়াম চড়াম’: ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে অনুব্রত বলেছিলেন, বিরোধীদের জন্য ‘চড়াম চড়াম’ ঢাক বাজবে।

০৯ ২৩

‘গুড়-বাতাসা’: ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটের আগে অনুব্রতকে নজরবন্দি করেছিল নির্বাচন কমিশন। শোকজ নোটিসও পাঠায়। অনুব্রত দমেননি। বলে দেন, বুথে বুথে থাকবে ‘গুড়-বাতাসা’। ভোটের দিন যে যে বুথে গিয়েছিলেন, তৃণমূল কর্মীরা বিলিয়েছিলেন গুড় আর বাতাসা।

১০ ২৩

‘গলির মোড়ে উন্নয়ন’: ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোট। অনুব্রত মণ্ডল হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, বিরোধীরা মনোনয়ন জমা দিতে গেলে ভুগতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘রাস্তায় বেরোলে দেখবেন গলির মোড়ে উন্নয়ন দাঁড়িয়ে রয়েছে।’’ শেষ পর্যন্ত বীরভূমের ৪২টি জেলা পরিষদের মধ্যে ৪১টিতেই মনোনয়ন দিতে পারেননি বিরোধীরা। এক জন মনোনয়ন দিতে পারলেও শেষ পর্যন্ত প্রত্যাহার করেন। সেই নিয়ে কবিতা লিখেছিলেন শঙ্খ ঘোষ। অনুব্রতর মন্তব্য ছিল, ‘‘কে শঙ্খ ঘোষ?’’

১১ ২৩

‘শুঁটিয়ে লাল করে দেব’: জেএনইউতে পড়ুয়াদের পুলিশি নিগ্রহ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি। বলেছিলেন, ‘‘জেএনইউয়ে করেছে, ক্ষমতা থাকলে এখানে করুক, শুঁটিয়ে লাল করে দেব। করুক তো বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে, করুক তো বিশ্বভারতীতে, করুক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। দিল্লিতে কোনও শাসন নেই।’’

১২ ২৩

‘বিজেপি ছাগলের মতো চরে বেড়াবে’: ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগেই অনুব্রত জানিয়ে দিয়েছিলেন, ফের ক্ষমতায় ফিরবে তৃণমূল। ভোট জয়ের পর ফের স্বকীয় ভঙ্গিতে অনুব্রত বলে ওঠেন, ‘‘বলাবলির কী আছে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জয়ী হবেন না, তো কি অন্য কেউ জয়ী হবেন? আমি বলেছিলাম হয়েছে। এ বার বিজেপিকে জিজ্ঞেস করুন, ওরা কী করবে? ঘরে বসে থাকবে না কি ছাগলের মতো চার পায়ে চরে বেড়াবে!’’

১৩ ২৩

‘শুভেন্দু পাগলের বাচ্চা’: ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের বিপুল জয়। তার পর সাংবাদিক বৈঠকে অনুব্রত প্রশ্ন তোলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কি কারও তুলনা হয়! বিড়াল, ছাগলের তুলনা হয়! কাল যদি কোর্টের রায় হয়, যে নন্দীগ্রামে আবার গণনা হবে, তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার ভোটে জিতবেন।’’ আর শুভেন্দুর প্রসঙ্গে তাঁর সাফ বক্তব্য, ‘‘পাগলের বাচ্চা। মানুষের জায়গায় আছে নাকি!’’

১৪ ২৩

‘ভয়ঙ্কর খেলা খেলে দিয়ে যাব’: ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে আউশগ্রামে খুন হন তৃণমূলের এক কর্মী। সংবাদমাধ্যমের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিস্ফোরক অনুব্রত। বলেন, ‘‘বিজেপি যদি ভাবে আমি মার্ডার করব, তৃণমূল চুপচাপ থাকলেও অনুব্রত মণ্ডল চুপচাপ থাকবে না। আমি মৃত্যুর ভয় পাই না। ১৫ দিনের মধ্যে আসামী ধরা না পড়লে ভয়ঙ্কর খেলা খেলে দিয়ে যাব। এসপিকে যা বলার বলেছি। কোনও কাহিনি শুনব না। আমি চাই না অশান্তি।’’

১৫ ২৩

‘বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে নির্বংশ করব’: আউশগ্রামে দলীয় কর্মী খুন নিয়ে অনুব্রতের বিতর্কিত মন্তব্য এখানেই থামেনি। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ না পারলে মানুষ আমাকে বলুক, ওই লোকটা খুন করেছে। তাঁর বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে নির্বংশ করে দেব। আমার দলের লোক হলে ওপেন রাস্তায় গুলি করব।’’

১৬ ২৩

‘এখানকার মানুষের পয়সা নেই, মমতার সঙ্গে রয়েছেন’: ২০২১ বিধানসভা ভোটের আগে প্রত্যেক প্রচার সভাতেই জোর গলায় অনুব্রত বলে গিয়েছিলেন, রাজ্যে ফের ভোট জিতে ক্ষমতা আসবেন তাঁর দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বিরুদ্ধে যোগ্য মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী খুঁজে পায়নি বলে এক হাত নিয়েছিলেন বিজেপিকেও। বলেছিলেন, ‘‘চাল-টাল নয়। কাউকে পাচ্ছে না। ফাঁকাতে চলছিল এত দিন। অনেক পয়সা রয়েছে, পয়সার খেল দেখাচ্ছিল। এখানকার মানুষের পয়সা নেই, তাই তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রয়েছেন।’’

১৭ ২৩

‘আমার খচ্চর ব্রেন’: বিধানসভা ভোট প্রচারে বার বার বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি বলেছিলেন ‘খেলা হবে’’। সেই প্রসঙ্গ উঠতেই অনুব্রত বলেন, ‘‘আমি ২০১৭ সালে বলেছিলাম। তারিখটা মনে পড়ছে না। তবে আমার ভয়ঙ্কর ব্রেন। খচ্চরের ব্রেন বলে লোকে। সেই ২০১৭ সালে সন্ধ্যা ৬টায় বলেছিলাম, রাত ৯টা থেকে খেলা হবে। এখনও বলছি খেলা হবে।’’

১৮ ২৩

‘যারা নজরবন্দি করতে আসবে, তাদের দিয়েই খেলাব’: ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বীরভূমে ভোটের আগে নজরবন্দি করা হয় অনুব্রতকে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে। তারা জানিয়েছিল, অনুব্রতের নামে একগুচ্ছ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই এই সিদ্ধান্ত। সেই প্রসঙ্গে অনুব্রত বলেন, ‘‘ভোট শান্তিপূর্ণ ভাবেই হবে। আমি মনে করি এটা রুটিন। নজরবন্দি থাকার সময়ও খেলা হবে। ভয়ঙ্কর খেলা। ওরা ছায়া দেখেও ভয় পাচ্ছে। বিজেপি ভয় পাচ্ছে। তোমাকে দেখিয়ে দেব, কী সুন্দর খেলা হবে। যারা নজরবন্দি করতে আসবে, তাদের দিয়েই খেলাব। তারাই খেলবে।’’

১৯ ২৩

‘খেলা থাকবে, খেলার পর টিফিন থাকবে’: বিধানসভা ভোটে নির্বাচন কমিশনের নজরবন্দি করাকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করেন অনুব্রত। বলেন, ‘‘আমার প্রস্তুতির দরকার নেই। কষ্ট লাগে, যখন সিআরপিএফ ভাইরা রোদে দাঁড়িয়ে থাকেন। কষ্ট লাগে। এ বারও খেলা থাকবে, খেলার পর টিফিন থাকবে। নকুলদানা থাকবে।’’

২০ ২৩

‘মাথামোটা প্রধানমন্ত্রী’: ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে একটি প্রচার সভায় গিয়ে অনুব্রত আক্রমণ করে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে। বলেন, ‘‘তোমার মতো ছলনাময় প্রধানমন্ত্রী এর আগে কেউ দেখেননি। কোনও কাজ করোনি। শুধু দেশটাকে ধ্বংসের পথে নিয়ে গিয়েছ। তুমি মাথামোটা প্রধানমন্ত্রী।’’

২১ ২৩

‘কুমড়োর মতো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী’: রাজ্য বিধানসভা প্রচারে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দিকেও আঙুল তোলেন তৃণমূল নেতা। বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী, তুমি তোমার সঙ্গে রেখেছ আর এক জন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অমিত শাহ। বড় বড় কুমড়ো যেমন দেখতে পাওয়া যায়, তেমন। তোমরা ভারতের কথা চিন্তা করো না। মানুষের কথা চিন্তা করো না। আদিবাসীর কথা চিন্তা করো না।’’

২২ ২৩

‘রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে আত্মহত্যা করতেন’: বিশ্বভারতী প্রসঙ্গে বলতে উঠে এক বার অনুব্রত বলেছিলেন, ‘‘আজ সকালেই অভিযোগ পেলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ে এত নেশাখোর সব হয়ে গিয়েছে, যে পাতা না কি খেয়ে বেড়াচ্ছে। সেখানে নাকি মেয়েরাও খেয়ে বেড়াচ্ছে। হায় রে দুর্ভাগ্য! রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেঁচে থাকলে আত্মহত্যা করতেন।’’

২৩ ২৩

‘আমি আছি মরি নাই’: সিবিআই জেরার জন্য ডেকেছিল। অসুস্থ রয়েছেন জানিয়ে যেতে পারেননি। কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে দীর্ঘ দিন চলেছে চিকিৎসা। এর পর ২০ মে সিবিআইযের দফতরে হাজিরা দেন অনুব্রত। তার পর ফিরে যান বীরভূমে নিজের গড়ে। সেখানে নেতাকে দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। তাঁদের দেখে আপ্লুত নেতা বলে ওঠেন, ‘‘আপনাদের আশীর্বাদে আমি সুস্থ। কিন্তু আমাকে বিশ্রাম নিতে হবে। কিছু মনে করবেন না। সেই দূর গ্রাম থেকে এত লোক। আমার থেকে যাঁরা বড়, তাঁরা প্রণাম নেবেন। আমার থেকে যাঁরা ছোট, তাঁরা ভালোবাসা নেবেন। আমি আছি। আমি মরি নাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement