বুধবার রাতে প্রয়াত হয়েছেন শিল্পপতি রতন টাটা। বয়সজনিত সমস্যা নিয়ে মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। বুধবার রাতে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।
রবিবার রাতে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর মিলেছিল, রতন টাটাকে মুম্বইয়ের এক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আরও দাবি করা হয়েছিল, আচমকা তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে তাঁকে আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়েছে।
কিন্তু সোমবার সকালে সব ‘জল্পনা’ উড়িয়ে দিয়ে শিল্পপতি নিজেই এক্সে জানিয়েছিলেন, সব খবর ভুয়ো। বরং বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যার কারণে নিয়মমাফিক চেক-আপের জন্যই হাসপাতালে গিয়েছিলেন তিনি। এর পর বুধবার রাতে তাঁর মৃত্যুর খবর মেলে।
দেশের শিল্প জগতের অনন্য রত্ন ছিলেন রতন টাটা। সাধারণ জীবনযাপনের জন্য পরিচিত ছিলেন। ভারতের মহীরুহ শিল্পপতির ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও অবশ্য কম চর্চা হয়নি। কেন তিনি আজীবন অবিবাহিত ছিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বার বার।
রতন টাটা তাঁর প্রেমজীবনের কথা প্রকাশ্যে এনেছিলেন নিজেই। জানিয়েছিলেন, তাঁর মনের দরজায় প্রেম কড়া নাড়িয়েছিল চার বার। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তা পূণর্তা পায়নি। তাই এর পর আর বিয়ের কথা ভাবেননি তিনি। মনপ্রাণ সব দিয়েছিলেন টাটা গোষ্ঠীকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দিকে।
শিল্পপতি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, তাঁর কোনও প্রেমই বিয়ের পর্যায়ে পৌঁছতে পারেনি। তবে তিনি এ-ও জানিয়েছিলেন, পরবর্তী কালে বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত তাঁর জন্য সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছিল। কারণ তিনি যদি বিয়ে করতেন তা হলে নাকি পরিস্থিতি খুবই জটিল হয়ে যেত।
রতন টাটা ওই সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘যদি আপনি জিজ্ঞাসা করেন যে, আমি কখনও প্রেমে পড়েছি কি না, তবে আমি আপনাকে বলব যে, বিয়ে করার বিষয়ে আমি চার বার গুরুত্ব সহকারে ভেবেছিলাম এবং প্রতি বারই কোনও না কোনও কারণে পিছিয়ে গিয়েছিলাম।’’
টাটা গোষ্ঠীর সদ্যপ্রয়াত প্রাক্তন চেয়ারম্যান এ-ও জানিয়েছিলেন, তিনি যখন আমেরিকায় কাজ করছিলেন, সেই সময় এক নারীর প্রেমে পড়েন তিনি। খুব কম সময়েই পোক্ত হয় সেই সম্পর্ক। ঠিক করেছিলেন, অর্ধাঙ্গিনী হিসাবে যদি কাউকে বেছে নেন, তা হলে তাঁকেই নেবেন।
তবে সেই সম্পর্কও টেকেনি। রতন টাটা ভারতে ফিরে আসার কারণে বিয়ে করতে পারেননি তাঁরা। ভারতীয় শিল্পপতি জানিয়েছিলেন, তিনি দেশে ফিরলেও ভারতে আসতে চাননি তাঁর বান্ধবী।
পাশাপাশি সেই সময় ভারত-চিন যুদ্ধও চলছিল। অবশেষে, তাঁর বান্ধবী আমেরিকায় অন্য এক জনকে বিয়ে করেন। মন ভাঙে রতন টাটার। পুরো মনোযোগ টাটা গোষ্ঠীর দিকে দেন তিনি।
কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে অনুযায়ী, এক সময় বলি অভিনেত্রী সিমি গারেওয়ালের কাছাকাছি এসেছিলেন শিল্পপতি রতন টাটা। সম্পর্কেও জড়িয়েছিলেন তাঁরা।
জনসমক্ষে রতনকে নিয়ে প্রশংসা করতে দেখা যেত অভিনেত্রীকে। রতন ব্যক্তিগত জীবনে মানুষ হিসাবে কেমন ছিলেন, তা-ও ভাগ করতেন সিমি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, বিদেশে থাকার সময় রতনকে যেমন চিন্তামুক্ত দেখায়, দেশে ফিরলে সে রকম থাকেন না তিনি।
সিমি বলেছিলেন, ‘‘আমি আর রতন একসঙ্গে অনেকটা পথ হেঁটেছি। পুরুষ মানুষ হিসাবে ও নিখুঁত। ওর বোধও দুর্দান্ত। এত ভদ্র মানুষ খুব কম দেখতে পাওয়া যায়। অর্থ ওকে কোনও দিনও চালনা করেনি।’’
তবে, রতন টাটার সঙ্গে সিমির সম্পর্কের মেয়াদ খুবই কম সময়ের। ১৯৭০ সালে রবি মোহনকে বিয়ে করেন ‘মেরা নাম জোকার-’এর অভিনেত্রী।
বিয়ের আগে তিন মাস ‘লং ডিসট্যান্স রিলেশনশিপ’-এ থাকার পর ২৭ বছর বয়সে রবির সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন তিনি। কিন্তু তাঁদের সম্পর্ক যে বেশি দিন টিকবে না, তা আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিলেন সিমি। তবে কেন রতন-সিমির সম্পর্ক এগোয়নি তা জানা যায়নি।
বাকি কোন দুই নারী রতন টাটার মন জয় করেছিলেন, সে বিষয়েও জানা যায় না কিছু।