রানিয়া আল আবদুল্লা। জর্ডনের এই রানির রূপ দেখলে তাঁর বয়স আন্দাজ করা কঠিন। কোটি কোটি টাকার মালিক এই রানি সমাজমাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয়। জড়িয়েছেন বিতর্কেও।
জর্ডনের বাদশা দ্বিতীয় আবদুল্লার স্ত্রী রানিয়া। জন্মের পর নাম দেওয়া হয় রানিয়া আল-ইয়াসিন। জন্ম কুয়েতে। রানিয়া কায়রোর আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ়নেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেন। তবে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় তিনি বাবা-মার সঙ্গে কুয়েত থেকে জর্ডনে পালিয়ে যান।
জর্ডনে গিয়ে সিটি ব্যাঙ্কে বড় পদে চাকরি পান রানিয়া। পরে সেই চাকরি ছেড়ে যোগ দেন অ্যাপলের আম্মান অফিসের বিপণন বিভাগে।
১৯৯৩ সালের জানুয়ারিতে জর্ডনের বাদশা আবদুল্লার বোন একটি পার্টির আয়োজন করেছিলেন। সেই পার্টিতে এক সহকর্মীর সঙ্গে গিয়েছিলেন রানিয়া। সেখানেই আবদুল্লার সঙ্গে দেখা এবং প্রথম দেখাতেই প্রেম।
প্রেমে পড়ার মাত্র দু’মাসের মধ্যে বাগ্দান পর্ব সারেন আবদুল্লা এবং রানিয়া। ১৯৯৩-এর জুন মাসে জমকালো অনুষ্ঠান করে বিয়ে করেন ওই জুটি। বিয়ের সময় রানিয়ার বয়স ছিল ২৩। আবদুল্লা তাঁর থেকে আট বছরের বড়। সেই বিয়ে এখনও টিকে রয়েছে। আবদুল্লাই জর্ডনের এক মাত্র বাদশা যিনি একের বেশি বিয়ে করেননি।
দম্পতির সবচেয়ে বড় সন্তান তথা যুবরাজ হুসেন বিন আবদুল্লার বয়স ২৮। ২০০৪ সালে তাঁকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী ঘোষণা করা হয়। হুসেন ছাড়াও আরও তিন সন্তান রয়েছে আবদুল্লা এবং রানিয়ার। তাঁরা হলেন যুবরানি ইমান, যুবরানি সালমা এবং যুবরাজ হাসেম।
পোশাক-আশাক এবং জীবনযাপনের জন্য আন্তর্জাতিক স্তরেও ‘ফ্যাশন আইকন’ হিসাবে জনপ্রিয় রানিয়া। সৌন্দর্যের কারণেও চর্চায় থাকেন। শিক্ষা এবং দেশের মহিলাদের সার্বিক উন্নতির জন্য তিনি নিয়মিত কাজ করেন।
ফোর্বস পত্রিকার বিচারে বিশ্বের ১০০ জন সবচেয়ে ক্ষমতাশালী নারীর তালিকায় রানিয়ার নাম প্রায় প্রতি বছরই উঠে আসে।
সামাজিক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক পুরস্কার এবং চারটি সাম্মানিক ডক্টরেট পেয়েছেন রানিয়া।
সাহিত্যচর্চার প্রতিও বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে রানিয়ার। ইতিমধ্যেই ছোটদের জন্য চারটি সাহিত্য লিখে ফেলেছেন তিনি। যার মধ্যে একটি জর্ডনের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া বইগুলির মধ্যে অন্যতম।
ফেসবুকে রানিয়ার অনুরাগীর সংখ্যা প্রায় ৬৫ লক্ষ। টুইটারে তাঁকে ফলো করেন প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ। ২০ লক্ষ মানুষ তাঁকে ফলো করেন ইনস্টাগ্রামে।
২০০৮ সালে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল শুরু করেন রানিয়া। যার লক্ষ্য ছিল আরব সম্পর্কে মানুষের ধারণা বদলানো এবং পশ্চিমি দেশগুলির সঙ্গে নিজের দেশের মেলবন্ধন গড়ে তোলা।
এত কাজ করলেও বেদুইন প্রধানরা এক বার আবদুল্লার কাছে চিঠি পাঠিয়ে তাঁর স্ত্রী রানিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিলেন। এই ঘটনায় প্রচুর বিতর্কও তৈরি হয়েছিল।
রানিয়ার দাবি, তিনি নিজেকে কখনওই রানি বলে মনে করেন না এবং তাঁর জীবনের ৮০ শতাংশ যে কোনও সাধারণ মহিলার মতো কাটিয়েছেন। স্বামী এবং সন্তানদের কথাই সবসময় তাঁর মাথায় ঘুরতে থাকে।
বই পড়তে আর দৌড়তে ভালবাসেন রানিয়া। ভালবাসেন চকোলেট, পিনাট বাটার আর জেলি খেতে।