২০১৬ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একাধিক মহিলার সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে আসে। উঠে আসে একের পর এক নারীচরিত্রের নাম, যাঁদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে সেই সব নারীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন পর্নতারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলস।
সেই সময়ে দাবি করা হয়েছিল, ২০০৬ সাল নাগাদ স্টর্মির সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান ট্রাম্প। অভিযোগ উঠেছিল, তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে মুখ বন্ধ রাখার জন্য বহু টাকা ঘুষও দেওয়া হয়েছিল স্টর্মিকে। সেই অভিযোগেই ট্রাম্পকে আবার অভিযুক্ত করেছে আমেরিকার একটি আদালত। যদিও স্টর্মির সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়ার কথা অস্বীকারই করেছেন ট্রাম্প।
তাঁর সঙ্গে আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের নাম জড়ানোর পর থেকেই পর্নতারকা স্টর্মিকে নিয়ে কৌতূহলের অন্ত নেই বিভিন্ন মহলে।
৪৪ বছর বয়সি স্টর্মির আসল নাম স্টেফানি গ্রেগরি ক্লিফোর্ড। তবে নীল ছবির দুনিয়াতে তিনি পরিচিত স্টর্মি নামেই।
স্টর্মির জন্ম লুইসিয়ানার ব্যাটন রুজে। যদিও বর্তমানে টেক্সাসের বাসিন্দা। স্টর্মির জন্মের চার বছরের মাথায় তাঁর বাবা-মা, শিলা এবং বিল গ্রেগরির বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। মায়ের কাছেই মানুষ হন তিনি।
১৯৯৭ সালে ব্যাটন রুজের স্কটল্যান্ডভিল ম্যাগনেট হাই স্কুল থেকে স্নাতক হন স্টর্মি এবং সাংবাদিক হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তবে তাঁর ভাগ্যে অন্য কিছু লেখা ছিল।
১৭ বছর বয়সে স্টর্মি স্ট্রিপার হিসাবে কাজ করা শুরু করেন। কিছু দিনেই স্ট্রিপার হিসাবে খ্যাতি পান তিনি। আমেরিকার নামীদামি ক্লাব থেকে ডাক পেতে শুরু করেন তিনি। সেখানেই এক পর্ন পরিচালক তাঁর ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ দেন।
পর্ন ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করার পর স্টর্মিকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি অসংখ্য পর্ন ছবিতে অভিনয় করেছেন। অভিনয়ের জন্য একাধিক পুরস্কারও পেয়েছেন। বেশ কিছু নীল ছবি পরিচালনার কাজও করেছেন তিনি।
বহু জটিলতাও রয়েছে স্টর্মির ব্যক্তিগত জীবনে। ২০০৩ সালে প্যাট মাইনকে বিয়ে করেন স্টর্মি। প্যাটের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ২০০৭ সালে তিনি মাইকেল মোসিনিকে বিয়ে করেন।
মাইকেলের উপর গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগে স্টর্মিকে ২০০৯ সালে গ্রেফতার করা হয়। এর পর ২০১৫ সালে ব্রেন্ডন মিলারকে বিয়ে করেন তিনি। সেই বিয়েও ভেঙে যায়। এর মধ্যে স্টর্মি ২০১৯ সালে নিজেকে উভকামী বলে ঘোষণা করেন। ২০২২ সালে তিনি পর্নতারকা ব্যারেট ব্লেডকে বিয়ে করেন। ক্যাডেন স্টর্মির এক কন্যাসন্তান রয়েছে।
স্টর্মির দাবি, ২০০৬ সালে তাঁর সঙ্গে যৌনমিলন করেন ট্রাম্প। তার ঠিক এক বছর আগেই ট্রাম্প মেলানিয়াকে বিয়ে করেছিলেন।
২০০৬-এর জুলাই মাসে ক্যালিফোর্নিয়ার লেক তাহোতে একটি গল্ফ টুর্নামেন্টে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয় বলে দাবি করেন স্টর্মি। তিনি জানান, ওই রাতেই ট্রাম্প তাঁকে হোটেল রুমে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
২০১৮ সালে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে সাক্ষাৎকার স্টর্মি দাবি করেন, সাক্ষাতের পর ট্রাম্প তাঁকে নিজের রিয়্যালিটি টিভি শো ‘দ্য অ্যাপ্রেন্টিস’-এ অতিথি হিসাবে আসার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। পরে ওই রাতেই দু’জনের সম্মতিতে তাঁদের মধ্যে যৌনমিলন হয়।
যৌনমিলনের আগে ট্রাম্প নাকি স্টর্মিকে বলেছিলেন, তাঁকে দেখে মেয়ে ইভাঙ্কার কথা মনে পড়ে ট্রাম্পের। একই দাবি জানিয়েছিলেন অন্য এক প্লেবয় মডেল ক্যারেন ম্যাকডোগালও। স্টর্মি এ-ও দাবি করেন, শারীরিক সম্পর্কের সময়ে আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট কোনও নিরোধ ব্যবহার করেননি।
স্টর্মি আরও দাবি করেছিলেন, প্রথম সাক্ষাতের পর বছর খানেক আর তাঁদের দেখা হয়নি। এর পর ২০০৭ সালের জুলাইয়ে লস অ্যাঞ্জেলেসের বেভারলি হিলসের একটি হোটেলে দেখা করেন তাঁরা।
স্টর্মির মতে, বেভারলি হিলসের হোটেলে আবার তাঁর সঙ্গে সঙ্গম করতে চান ট্রাম্প। কিন্তু তিনি ট্রাম্পের প্রস্তাবে রাজি হননি। সেই রাগেই নাকি তাঁর সঙ্গে রিয়্যালিটি শোয়ের চুক্তিও বাতিল করে দেন ট্রাম্প।
২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রচার চালাচ্ছিলেন, তখন ট্রাম্প-স্টর্মি সম্পর্ক নয়া মোড় নেয়। স্টর্মি দাবি করেন, ট্রাম্পের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক নিয়ে মুখ বন্ধ রাখার জন্য তাঁকে কোটি কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। তিনি মুখ বন্ধ না রাখলে তাঁকে খুন করার হুমকি দেওয়া হয় বলেও তিনি দাবি করেন।
ট্রাম্প সে কথা অস্বীকার করলেও তাঁর অস্বস্তি বাড়িয়ে দেন তাঁরই দীর্ঘ দিনের আইনজীবী মাইকেল কোহেন। কোহেন দাবি করেন, ট্রাম্পের কথায় নিজের গ্যাঁটের কড়ি খসিয়ে ক্লিফোর্ড (স্টর্মি)-কে তিনি ১ লক্ষ ৩০ হাজার ডলার দিয়েছিলেন।
তবে ট্রাম্প প্রথম নন, এর আগেও এক রিপাবলিকান নেতাকে ফ্যাসাদে ফেলেছিলেন স্টর্মি। ২০১০ সালে লুইসিয়ানার সেনেট পদের জন্য রিপাবলিকান নেতা ডেভিড ভিটারের বিরুদ্ধে দাঁড়ান তিনি।
সেই সময় ডেভিডের একটি ফোনের বার্তালাপ প্রকাশ্যে আসে, যেখানে তাঁকে এসকর্ট পরিষেবা চেয়ে কথা বলতে শোনা যায়। মনে করা হয়, এই কথোপকথন ফাঁস করার নেপথ্যে হাত ছিল স্টর্মির। যদিও শেষ পর্যন্ত ভোটে জিতে সেনেট হন ডেভিডই।