পাকিস্তানের নয়া তদারকি সরকারের মন্ত্রী হলেন জম্মু ও কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন জেকেএলএফ-এর নেতা ইয়াসিন মালিকের স্ত্রী মুশাল হুসেন মালিক। অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী আনওয়ার-উল-হক-কাকরের নেতৃত্বাধীন সরকারের মানবাধিকার বিষয়ক দফতরের উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মুশালকে। যা তদারকির সরকারের মন্ত্রীর পদ।
ইয়াসিনের স্ত্রী এবং পাকিস্তানের নব মনোনীত মন্ত্রী ছাড়াও অন্য পরিচয় রয়েছে মুশালের।
মুশালের জন্ম পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে। তাঁর মা রেহানা হুসেন ছিলেন পাকিস্তান মুসলিম লিগের মহিলা সংগঠনের সদস্য। পরে মহিলা সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল হন তিনি।
মুশালের বাবা এম এ হুসেন ছিলেন অর্থনীতির অধ্যাপক। নোবেল পুরস্কার জুরি কমিটির সদস্যও ছিলেন তিনি। তিনিই ছিলেন প্রথম পাকিস্তানি, যিনি নোবেল পুরস্কার জুরি কমিটির সদস্য হন। মুশালের দাদা আমেরিকায় অধ্যাপনা করেন।
মুশাল নিজেও পড়াশোনা করেছেন অর্থনীতি নিয়েই। লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স (এলএসই) থেকে স্নাতক তিনি।
ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ভাল ছিলেন মুশাল। তবে ছবি আঁকার দিকে তাঁর ঝোঁক ছিল বেশি।
ছ’বছর বয়স থেকে আঁকা শেখা শুরু করেন মুশাল। পড়াশোনার পাশাপাশি আঁকা নিয়েও চর্চা চালিয়ে যান তিনি।
বর্তমানে মুশাল নিজের পরিচয় দেন চিত্রশিল্পী হিসাবেই। তাঁর ছবিতে বেশি জায়গা পেয়েছে নারী চরিত্রেরা। তাঁর বিশেষত্ব নারী শরীরের ছবি আঁকা। কাশ্মীরকেও বার বার নিজের ক্যানভাসে জায়গা দিয়েছেন মুশাল।
অনাবৃত নারী শরীর আঁকার জন্য বহু বার সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে মুশালকে। প্যাস্টেল, কাঠকয়লা দিয়ে ক্যানভাসে ছবি আঁকা ছাড়াও ‘গ্লাস পেইন্টিং’ও করেন মুশাল।
ইয়াসিনের স্ত্রী একটি অসরকারি সংস্থার প্রেসিডেন্ট পদে রয়েছেন। মন্ত্রিপদ পাওয়ার আগে থেকেই পাক রাজনীতিবিদ এবং আমলাদের সঙ্গেও ওঠাবসা তাঁর।
ভারত-বিরোধী মানসিকতা এবং মন্তব্যের জেরে মুশাল প্রায়ই শিরোনামে থাকেন। সম্প্রতি তিনি কিছু টুইট করে ভারতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সম্প্রতি একটি টুইটেও মুশাল ভারতীয় সেনাবাহিনীর মুন্ডুপাত করেন।
২০০৫ সালে পাকিস্তান সফরে গিয়েছিলেন ইয়াসিন। সেখানেই তাঁর সঙ্গে দেখা হয় মুশালের।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ইয়াসিনের বক্তৃতা শুনে না কি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন মুশাল। সটান তিনি ইয়াসিনের কাছে অটোগ্রাফ নিতে চলে যান। এর পর থেকেই ঘনিষ্ঠতা বাড়ে তাঁদের।
২০০৯ সালে ইসলামাবাদে বিয়ে করেন ইয়াসিন এবং মুশাল। তাঁদের বিয়েতে পাকিস্তানের তাবড় তাবড় রাজনৈতিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বিয়ের অনুষ্ঠানটি বিভিন্ন পাক সংবাদমাধ্যমে সম্প্রচারিত হয়েছিল।
বিয়ের সময় মুশালের বয়স ছিল ২৩ এবং ইয়াসিনের বয়স ৪২। ইয়াসিন এবং মুশালের এক দশ বছরের কন্যা রয়েছে।
কাশ্মীর উপত্যকার বাসিন্দা তথা জেকেএলএফ নেতা ইয়াসিনকে ইউএপিএ-র বিভিন্ন ধারায় ২০২২ সালের ২৪ মে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল নিম্ন আদালত। সন্ত্রাসে আর্থিক মদত, সন্ত্রাস ছড়ানো এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে নিয়েছিলেন ইয়াসিন। আপাতত তিনি দিল্লির তিহাড় জেলে বন্দি।
রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলেও নিম্ন আদালত সাজা ঘোষণার সময় জানিয়েছিল, ইয়াসিনের মামলা ‘বিরলতম’ শ্রেণিতে পড়ে না। ফলে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যায় না।
নিম্ন আদালতের সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে দিল্লি হাই কোর্টে আর্জি জানিয়েছে তদন্তকারী এনআইএ। তারা বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ পেশ করে দাবি করেছে, ইয়াসিন প্রত্যক্ষ ভাবে সন্ত্রাসের জন্য অর্থ সংগ্রহ এবং নাশকতায় মদতের কাজে যুক্ত ছিলেন।
পাকিস্তানে ইয়াসিনের অনেক সমর্থক আছেন। মে মাসে ইয়াসিনের সাজা ঘোষণার পরেই তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ টুইটারে লিখেছিলেন, ‘‘আজ ভারতীয় গণতন্ত্র এবং এর বিচারব্যবস্থার একটি কালো দিন। ভারত ইয়াসিন মালিককে শারীরিক ভাবে বন্দি করতে পারে, কিন্তু তিনি যে স্বাধীনতার চেতনার প্রতীক, তাকে কখনওই আটকে রাখা যাবে না।’’