গত ১৩ জানুয়ারি, সোমবার থেকে শুরু হয়েছে মহাকুম্ভ মেলা। এই মেলা চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। মহাকুম্ভ আয়োজিত হচ্ছে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে। গঙ্গা, যমুনা এবং অন্তঃসলিলা সরস্বতী নদীর পবিত্র সঙ্গমস্থলে লক্ষ লক্ষ ভক্ত জড়ো হয়েছেন পুণ্যস্নান করতে।
১২ বছর অন্তর প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ মেলা হয়। মহাকুম্ভ উপলক্ষে নতুন করে সাজানো হয়েছে উত্তরপ্রদেশের এই শহরকে। এ বছরের মহাকুম্ভে সব মিলিয়ে ৪৫ কোটিরও বেশি ভক্তের সমাগম হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
পুণ্যতিথিতে স্নান করতে শনিবার থেকেই সাধু-সন্ন্যাসিনীরা ভিড় করতে শুরু করেছেন মহাকুম্ভ মেলায়। বেশ কয়েক জন অদ্ভুতনামী বাবাও রয়েছেন তালিকায়। তাঁদের মধ্যে অনেকে নজর কেড়েছেন বিবিধ কারণে।
তাঁদেরই এক জন হলেন নিরঞ্জনী আখড়ার মহামণ্ডলেশ্বর নারায়ণনন্দ গিরি মহারাজ ওরফে ‘গোল্ডেন বাবা’ ওরফে ‘গোল্ডেন গিরি’।
কিন্তু কেন এমন নাম? কারণ, ‘গোল্ডেন বাবা’র সারা শরীর জুড়ে জায়গা পেয়েছে প্রচুর স্বর্ণালঙ্কার। সেই সব সোনার গয়নার ওজন ছ’কেজিরও বেশি। মূল্য কয়েক কোটি টাকা।
আর মহাকুম্ভে ‘গোল্ডেন বাবা’র সেই চোখধাঁধানো উপস্থিতিই সকলের নজর কেড়েছে। কেরলের বাসিন্দা নারায়ণনন্দ গিরি বিশিষ্ট আধ্যাত্মিক গুরু।
সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর সঙ্গে কথা বলার সময় ‘গোল্ডেন বাবা’ জানিয়েছেন যে, তিনি যে গয়নাগুলি পরেন সেগুলির প্রতিটি কোনও না কোনও ভগবানকে উৎসর্গ করে পরা। সেই ভগবানদের মধ্যে রয়েছেন, নটরাজ, নরসিংহ, মুরুগান, ভদ্রকালী-সহ অন্যান্য দেবতা।
কিন্তু কেন এত গয়না পরেন ‘গোল্ডেন বাবা’? তিনি জানিয়েছেন, গয়নাগুলি তাঁকে ‘ইতিবাচক শক্তি’ দেয় এবং পুজো করার সময়ও সেগুলির প্রয়োজন হয়।
বিভিন্ন গয়নার বর্ণনা দিয়ে ‘গোল্ডেন বাবা’ আরও জানিয়েছেন, তাঁর শরীরে রুদ্রাক্ষ, প্রবাল, স্ফটিক, মুঙ্গা যেমন রয়েছে, তেমনই রুবি, নীলকান্তমণি এবং পান্নার মতো মূল্যবান পাথরও রয়েছে। সেই সব পাথর পুজোর সময় ব্যবহৃত হয়। ‘গোল্ডেন বাবা’র গয়নাগুলির মধ্যে শ্রীযন্ত্রের প্রতীকও রয়েছে।
সাক্ষাৎকারে ‘গোল্ডেন বাবা’ বলেছেন, “আমার নাম শ্রীশ্রী ১০০৮ অনন্ত শ্রী বিভূষিত স্বামী নারায়ণনন্দ গিরিজি মহারাজ। আমি কেরল থেকে এসেছি এবং আমি সনাতন ধর্ম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান। আমার শরীরে রুদ্রাক্ষ, প্রবাল, স্ফটিক এবং মুঙ্গা রয়েছে। সবই দেবতা নটরাজ, নরসিংহ, মুরুগান, ভদ্রকালীকে উৎসর্গ করা হয়েছে। পুজোর সময় রুবি, নীলকান্তমণি এবং পান্নার মতো বিভিন্ন পাথরের প্রয়োজন। এতে শ্রীযন্ত্রের প্রতীকও আছে।’’
‘গোল্ডেন বাবা’ আরও বলেন, ‘‘এই সমস্ত অলঙ্কারের মধ্যে বিশেষত্ব রয়েছে। আমি ৬.৮ কেজি ওজনের গয়না পরে রয়েছি। ১৫ বছর আগে থেকে এগুলি পরা শুরু করেছি। রুদ্রাক্ষগুলি আমার বাবা আমাকে দিয়েছিলেন। এগুলি আমাকে ইতিবাচক শক্তি দেয় যা অন্যদের মধ্যেও প্রতিফলিত হয়। আমি যদি ট্রাউজ়ার এবং জামা পরতাম, তা হলে কেউ আমার সঙ্গে কথা বলতে আসতেন না। ঈশ্বর আমাকে ইতিবাচক শক্তি ছড়িয়ে দেওয়ার এই সুযোগ দিয়েছেন।’’
‘গোল্ডেন বাবা’ ছাড়াও প্রচুর সোনার অলঙ্কার পরে নজর কেড়েছেন আরও এক সাধু। তিনি শ্রী পঞ্চদশনাম আবাহন আখড়ার মহামণ্ডলেশ্বর অরুণ গিরি। তাঁর সারা শরীরে রয়েছে মোট ৬.৭ কেজি ওজনের গয়না। এর মধ্যে বিভিন্ন গ্রহরত্নের আংটি, সোনার ব্রেসলেট এবং হিরের ঘড়ি উল্লেখযোগ্য।
অরুণ জানিয়েছেন, গয়নাগুলি তাঁকে আধ্যত্মিক শক্তি দেয় যা তাঁকে ধ্যান করতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে তাঁর দাবি, তিনি এখনও পর্যন্ত এক কোটিরও বেশি চারাগাছ রোপণ করেছেন। পাশাপাশি, মহাকুম্ভে ভক্তদের মধ্যে ৫১ হাজার চারাগাছ বিতরণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।