কখনও আইপিএলের মাঠে সঞ্চালকের ভূমিকায়, কখনও বা দক্ষিণী ছবিতে অভিনয়— সব ক্ষেত্রেই মুঠো মুঠো প্রশংসা কুড়িয়েছেন লেখা ওয়াশিংটন। সম্প্রতি বলিপাড়ার অভিনেতা ইমরান খান এবং লেখা দু’জনে ক্যামেরায় ধরা পড়ে যান। একে অপরের হাত ধরে খোশমেজাজে হাঁটছিলেন তাঁরা। এই ছবি প্রকাশ্যে আসায় চর্চায় আসেন লেখা।
১৯৮৪ সালের ৩০ এপ্রিল চেন্নাইয়ে জন্ম লেখার। চেন্নাই শহরে স্কুল এবং কলেজের পড়াশোনা শেষ করে আমদাবাদে প্রোডাক্ট ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন লেখা। তার পর ছবি নির্মাণ নিয়েও পড়েছেন তিনি।
লেখার বরাবর আগ্রহ ছিল ভাস্কর্যের প্রতি। ৮ বছর বয়সে ময়দার দলা দিয়ে মূর্তি তৈরি করেছিলেন। আমদাবাদে পড়াকালীন তিনটি শর্ট ফিল্মও বানিয়েছিলেন লেখা।
চেতন শাহ নির্মিত ‘ফ্রেমড’ নামে একটি ইংরেজি ছবিতেও অভিনয় করতে দেখা যায় লেখাকে। এই ছবিতে তাঁর কাজ দেখে একটি চ্যানেলের তরফে মিউজ়িক ভিডিয়ো জকি পদের জন্য চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেই চাকরিতে ঢুকেও পড়েন লেখা।
চেন্নাইয়ে বিভিন্ন মঞ্চে থিয়েটার করতেন লেখা। সেই সময়ে তামিল ছবি ‘কেত্তাভান’ ছবির নায়িকার খোঁজে ছিলেন ওই ছবির পরিচালক এবং অভিনেতা। তাঁদের প্রথম পছন্দ ছিল সানা খান।
কিন্তু প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা দেখতে গিয়ে তাঁদের নজর পড়ে লেখার দিকে। মুখ্য চরিত্রে অভিনয়ের জন্য লেখাকে সরাসরি প্রস্তাব দিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু ছবির কাজ ক্রমশই পিছোতে থাকে। শেষ পর্যন্ত অভিনেতা এবং পরিচালকের মতবিরোধের কারণে ছবির কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
কখনও তামিল গানের ভিডিয়োতে, কখনও বা তামিল এবং তেলুগু ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে লেখাকে। ২০০৮ সালে যখন আইপিএল শুরু হয়, তখন থেকেই চেন্নাই সুপার কিংস দলের একনিষ্ঠ ভক্ত লেখা।
আইপিএলের একটি শোয়ের সঞ্চালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় লেখাকে। তিনি ক্রিকেটের খুঁটিনাটি জানতে বিভিন্ন জার্নাল পড়তে শুরু করেন। অজয় জাডেজার সাহায্যও নিয়েছিলেন লেখা।
লেখার এই অনুষ্ঠান এতটাই জনপ্রিয় হয় যে, তাঁর কাছে ছবির প্রযোজকদের তরফে আরও প্রস্তাব আসতে শুরু করে। অভিনয়ের পাশাপাশি ২০১১ সালেনিজস্ব একটি প্রোডাক্ট ডিজাইনিংয়ের সংস্থা খোলেন তিনি। কখনও চেয়ার তৈরি করেন, কখনও বা আলো নিয়ে খেলা করে নতুন নতুন জিনিস বানান লেখা।
২০২১ সালে লেখা নিজের সংস্থার নাম বদলে ফেলেন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর হাতে গড়া প্রতিটি জিনিসের শিল্পকার্য এতটাই নিপুণ, যা দেখে মুগ্ধ হয়ে যেতেন সকলে।
লেখা একটি চেয়ার এমন ভাবে বানিয়েছিলেন যে, দেখে মনে হচ্ছিল দেওয়ালের উপর থেকে বৃষ্টির একটি ফোঁটা পড়ছে এবং ফোঁটার ভিতরেই রয়েছে বসে থাকার আসন। আবার একটি চেয়ার দেখে মনে হয়, তা যেন শূন্য দেওয়ালের মধ্যে বিন্দুর মতো আটকে রয়েছে। বিভিন্ন নামী পত্রিকার প্রচ্ছদের জন্য বলি তারকাদের দিয়ে শুট করার সময় লেখার তৈরি বিভিন্ন জিনিস প্রপ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
২০১৮ সালে আলো-আঁধারির খেলা দিয়ে ১২ ফুটের একটি ‘হিলিয়াম গ্লোব’ তৈরি করেছিলেন লেখা। নিজের অক্ষে ঘূর্ণনের সময় চাঁদের যে পরিবর্তন হয় তা স্পষ্ট ধরা পড়ে লেখার শিল্পে। আমেরিকার ‘বার্নিং ম্যান ফেস্টিভ্যাল’-এ ‘হিলিয়াম গ্লোব’-এর কাজ দেখানোও হয়েছিল।
‘পিটার গয়ে কাম সে’ নামে একটি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেন লেখা। তার পর ২০১৩ সালে ‘মটরু কি বিজলি কা মন্ডোলা’ ছবিতেও কাজ করার সুযোগ পান লেখা।
২০১৭ সালের ১৮ নভেম্বর পাবলো বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিয়ে করেন লেখা। কিন্তু তাঁদের সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী ছিল না। দু’জনে বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন। পাবলোর কাছের বন্ধু ছিলেন ইমরান খান। সেই সূত্রে ইমরানের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় লেখারও।
২০১৩ সালে ‘মটরু কি বিজলি কা মন্ডোলা’ ছবিতে ইমরানের সঙ্গে কাজ করার পর লেখার সঙ্গে অভিনেতার বন্ধুত্ব আরও জমে ওঠে। ইমরানের সঙ্গে লেখাকে মাঝেমধ্যেই দেখা যেত বলে বলিপাড়ার কেউ কেউ অনুমান করেছিলেন যে, তাঁরা দু’জনে সম্পর্কে রয়েছেন।
২০১৯ সালে অবন্তিকার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর লেখার সঙ্গে মেলামেশা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ইমরান। তেমনটাই দাবি বলিপাড়ার একাংশের। সম্প্রতি লেখার সঙ্গে হাত ধরে ঘুরতে দেখা যাওয়ার পর আবার ইমরান এবং লেখাকে নিয়ে জলঘোলা শুরু হয়েছে।