চাকরি রয়েছে, অথচ নেই। অর্থাৎ, এক জন কোনও এক সংস্থায় চাকরির বিজ্ঞাপন দেখলেন, পরীক্ষা দিলেন, সঠিক কাগজপত্র জমা দিলেন, নির্বাচিত হওয়ার আশাও করলেন। কিন্তু চাকরি পেলেন না। তিনি কেন, অন্য কেউই সেই চাকরি পেলেন না।
কিন্তু তেমনটা কী বাস্তবে সম্ভব? চাকরির বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে এবং পরীক্ষা নিয়েও শেষ পর্যন্ত নিয়োগ করা হচ্ছে না। নিয়োগের ক্ষেত্রে তেমন পদ্ধতিই অবলম্বন করেছে বিশ্বের বেশ কিছু নামীদামি সংস্থা।
এই ভাবে যে চাকরিগুলির বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেও বাস্তবে নিয়োগ করা হয় না, সেগুলিকে বলা হয় ‘ঘোস্ট জব’। সাম্প্রতিক কালে এই ‘ভূতুড়ে চাকরি’র রমরমা বিশ্ব জুড়ে বৃদ্ধি পেয়েছে।
‘ভূতুড়ে চাকরি’ হল এমন এক চাকরি, যার বিজ্ঞাপন সংস্থার ওয়েবসাইটে থাকলেও বাস্তবে সেই চাকরির কোনও অস্তিত্ব নেই।
আরও ভাল ভাবে বলতে হল, ‘ভূতুড়ে চাকরি’ হল সেই শূন্যপদ যার জন্য কোনও সংস্থার তরফে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। তবে সেই শূন্যপদ পূরণের অভিপ্রায় ওই সংস্থার থাকে না।
কিন্তু কেন এমন করে বিভিন্ন সংস্থা? সংস্থা বিশেষে ‘ভূতুড়ে চাকরি’র কারণ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।
এর একটি সম্ভাব্য কারণ হল, সেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নতুন কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে সংস্থার বাজেটে ঘাটতি থাকা। বাজারে ওই নির্দিষ্ট চাকরির জন্য কেমন প্রতিভা রয়েছে, তা যাচাই করার জন্যও অনেক সংস্থা ‘ভূতুড়ে চাকরি’র বন্দোবস্ত করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আরও একটি সম্ভাবনা হল, যে সময়ে ওই বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল এবং যে সময়ে নিয়োগ হচ্ছে, তার মধ্যে ওই পদের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যাওয়া।
এমন অনেক সংস্থা, যারা বিভিন্ন কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রেখেছে, তারাও সময়ে-অসময়ে ‘ভূতুড়ে চাকরি’র বিজ্ঞাপন দেয়।
‘হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল’-এর এক সমীক্ষা অনুযায়ী, করোনা অতিমারির আবহে পদত্যাগ ও কর্মীছাঁটাইয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং অতিমারির কারণে তৈরি হওয়া অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ‘ভূতুড়ে চাকরি’র সংখ্যা বাড়িয়েছে।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, সংস্থাগুলি ভবিষ্যতে নতুন কর্মী নিয়োগের বিষয়ে অনিশ্চিত থাকার কারণেও ‘ভূতুড়ে চাকরি’র বিজ্ঞাপন দেয়।
উল্লেখ্য, ‘ভূতুড়ে চাকরি’র বিজ্ঞাপনে অনেক সময়েই কী কাজ করতে হবে, তার বিবরণ থাকে না।
আসল চাকরির বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়েই কাজের বিবরণ, যোগ্যতা এবং দায়িত্বের কথা বিশদে উল্লেখ থাকে।
এক জন প্রার্থী যদি চাকরির আবেদন করেন, ভাল পরীক্ষা দেন এবং কয়েক মাসের মধ্যে সংস্থার তরফে কোনও সাড়া না পান, তা হলে সম্ভবত ‘ভূতুড়ে চাকরি’র খপ্পরে পড়েছেন।
যদি কোনও সংস্থা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে একই শূন্যপদে নিয়োগের জন্য বার বার বিজ্ঞাপন দেয়, তা হলেও বুঝতে হবে, সেটি ‘ভূতুড়ে চাকরি’। সে ক্ষেত্রে আবেদন না করাই শ্রেয়।
এক সংস্থার কর্মী সম্প্রতি সমাজমাধ্যম ‘থ্রেড’-এ একটি পোস্ট করে জানিয়েছেন, তাঁর সংস্থা তাঁকে ‘ভূতুড়ে চাকরি’র জন্য প্রার্থীদের ইন্টারভিউ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
মৌরিন ডব্লিউ ক্লাউ নামে ওই মহিলা লিখেছেন, ‘‘প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ভূতুড়ে চাকরির প্রবণতা রয়েছে। আমি আমার সংস্থার নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় দেখাশোনা করি। আমাকে সংস্থার তরফে ভূতুড়ে চাকরির জন্য ইন্টারভিউ নিতে বলা হয়েছিল। তবে আমি আমার এবং চাকরিপ্রার্থীদের সময় নষ্ট করতে অস্বীকার করেছি।”