হজযাত্রাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের উপর নয়া ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’! ইসলামাবাদের গালে বিরাশি সিক্কার থাপ্পড় কষিয়েছে সৌদি আরব। পাক নাগরিকদের জন্য দরজা বন্ধ করতে চাইছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীও।
ইসলামাবাদের উপর সৌদি প্রশাসনের ‘মেজাজ গরম’ হওয়ার নেপথ্যে একমাত্র কারণ হল, পাক ভিখারিদের ‘দাদাগিরি’! ফি বছর তাঁদের উৎপাতেই মক্কার হজযাত্রীদের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠছে বলে জানিয়েছে রিয়াধ।
সৌদি প্রশাসনের অভিযোগ, হজের নামে প্রতি বছর পাকিস্তান থেকে লাখ লাখ ভিখারি ঢুকে পড়ছে মক্কায়। দেশি-বিদেশি তীর্থযাত্রীদের থেকে ভিক্ষার নামে জোর করে টাকা আদায় করে তাঁরা। এই পাক নাগরিকদের জন্যেই মক্কার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে।
আর তাই এ বার হজের আগে বিষয়টি নিয়ে ইসলামাবাদকে সতর্ক করেছে রিয়াধ। পাঠানো হয়েছে বিশেষ নোটিসও। সেখানে লেখা আছে, মক্কায় যেন কোনও ভিখারি না পাঠায় পাকিস্তান। পরামর্শ না মানলে দুই দেশের সম্পর্কে চিড় ধরার ইঙ্গিতও দিয়েছে সৌদি সরকার।
সংবাদ সংস্থা ‘এআরওয়াই নিউজ়’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই নোটিস পেতেই নড়েচড়ে বসেছে পাক প্রশাসন। হজযাত্রার ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু নিয়ম চালু করেছে ইসলামাবাদের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রক। সেখানে মক্কা যাওয়ার আগে মুচলেকা দেওয়ার উল্লেখ রয়েছে।
পাক ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রক বলেছে, এ বার থেকে হজযাত্রীদের সৌদি আরবের বিমানে ওঠার আগে হলফনামা দিতে হবে। হলফনামায় মক্কায় গিয়ে ভিক্ষা না করার প্রতিশ্রুতি দেবেন তাঁরা। এতে ভিখারিদের নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলে মনে করছে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের প্রশাসন।
দ্বিতীয়ত, পাক তীর্থযাত্রীদের মক্কায় নির্দিষ্ট দলের সঙ্গে থাকতে বলেছে ইসলামাবাদ। শরিফ সরকারের যুক্তি, দলছুটরাই অর্থের অভাবে ভিক্ষাবৃত্তিকে বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। হজযাত্রীদের পাশাপাশি ট্যুর অপারেটরদেরও মুচলেকা দিতে বলেছে পাক প্রশাসন।
এই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে পাকিস্তানের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রক জানিয়েছে, ট্যুর অপারেটররা সমস্ত তীর্থযাত্রীদের থেকে হলফনামা সংগ্রহ করবেন। সেই কাজ হয়ে গেলে নিজেদের হলফনামা দিয়ে তা সরকারকে জানাতে হবে। এই নিয়মের নড়চড় হলে কড়া শান্তির মুখে পড়বেন ট্যুর অপারেটররা।
পাক ট্যুর অপারেটরদের বিরুদ্ধে হজযাত্রীদের মধ্যে বেআইনি ভিসা বিলির অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। এই নিয়েও ইসলামাবাদকে সতর্ক করেছে সৌদি প্রশাসন। ফলে সন্দেহভাজন ট্যুর অপারেটরদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে পাকিস্তানের ‘ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি’ (এফআইএ)।
পাক সংবাদ সংস্থাগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সম্প্রতি চারটি ট্যুর অপারেটরের মালিক এবং পদস্থ কর্তাদের গ্রেফতার করেছে প্রশাসন। হজযাত্রার নামে ভিখারি মাফিয়া নেটওয়ার্ক চালাচ্ছিলেন তাঁরা। এর মাধ্যমে মোটা টাকা তাঁদের পকেটে যেত বলে সন্দেহ তদন্তকারীদের।
গত বছর (পড়ুন ২০২৩) হজে আসা পাক ভিখারিদের নিয়ে ইসলামাবাদকে সতর্ক করেছিল সৌদি প্রশাসন। এর পর মক্কাগামী বিমান থেকে ১৬ জনকে নামিয়ে দেয় শরিফ প্রশাসন। ভিক্ষার উদ্দেশ্যে তাঁরা আরব মুলুকটিতে যাচ্ছিলেন বলে জানা গিয়েছিল।
পাশাপাশি, এ বছর শাহবাজ সরকার ৪ হাজার ৩০০ তীর্থযাত্রীর নাম হজযাত্রার তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। ভিক্ষাবৃত্তির জন্যই তাঁরা মক্কায় যাচ্ছিলেন বলে জানিয়েছে ইসলামাবাদ। এই তালিকা আরও দীর্ঘ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বলা বাহুল্য, পাক প্রশাসনের ওই পদক্ষেপ যে ‘লোকদেখানো’, তা হাড়ে হাড়ে বুঝেছিল সৌদি সরকার। আর তাই এ বছর কড়া ভাষায় ইসলামাবাদকে নোটিস ধরিয়েছেন তাঁরা। শুধু তাই নয়, মক্কায় গ্রেফতার হওয়া পাক ভিখারিদের অবিলম্বে ফেরত পাঠানো হবে বলেও স্পষ্ট করেছে আরবের প্রশাসন।
সৌদি সরকারের দাবি, হজের সময়ে আসা পাক ভিখারিদের স্রোত সামলাতে গিয়ে জেল ভর্তি হয়ে গিয়েছে। ভিখারিদের পাশাপাশি পাক পকেটমার ও ছিঁচকে চোরদের উৎপাতের কথাও নোটিসে উল্লেখ করেছে ওই আরব মুলুক। যদিও কবে নাগাদ ধৃতদের ফেরত পাঠানো হবে, তা স্পষ্ট নয়।
অন্য দিকে, এই ভিখারিদের জ্বালায় পাক নাগরিকদের ভিসা দেওয়ার নীতিতে বড় বদল এনেছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহী (ইউএই)। আবু ধাবির অভিযোগ, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও অবৈধ ভাবে তাদের দেশে থেকে যাচ্ছেন পাকিস্তানের বাসিন্দারা।
এই সমস্যায় নাজেহাল আমিরশাহী প্রশাসন তাই আপাতত পাক নাগরিকদের ভিসা দেওয়াই বন্ধ রেখেছে। নতুন নিয়মে বলা হয়েছে, এ বার থেকে দেশে ফেরার উড়ান টিকিট সঙ্গে নিয়ে ইউএইতে আসতে হবে। থাকতে হবে হোটেল বুকিংও।
এ ছাড়া পাক নাগরিকদের বাধ্যতামূলক ভাবে তিন হাজার দিরহাম সঙ্গে রাখতে বলেছে আমিরশাহী প্রশাসন। সমস্ত শর্ত পূরণ হলে তবেই ভিসা মিলবে বলে স্পষ্ট করেছে আবু ধাবি। তবে এই নিয়ে ইসলামাবাদের থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।