সমাজমাধ্যমে অনুগামীর সংখ্যা আকাশছোঁয়া। কিন্তু তিনিই বিধানসভা নিরবাচনে প্রার্থী হয়ে গোহারা হারলেন!
শনিবার মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোটের ফলঘোষণা হয়। তাতে দেখা যায় মাত্র ১৫৫টি ভোট পেয়েছেন আজাজ় খান। ছোট পর্দার বহুল পরিচিত মুখ তিনি। কিন্তু রাজনীতির মাঠে সফল হতে পারলেন না আজাজ়।
আজাদ সমাজ পার্টি (কাঁসিরাম)-এর তরফে ভরসোভা কেন্দ্র থেকে বিধানসভা ভোটে লড়েছিলেন আজাজ়। কিন্তু ভোটের ফলাফল প্রকাশ হতে দেখা যায় যে, তিনি মাত্র ১৫৫টি ভোট পেয়েছেন।
ভরসোভা কেন্দ্র থেকে ৬৫৩৯৬ হাজার ভোট পেয়ে জিতেছেন শিবসেনা (উদ্ধব) দলের প্রার্থী হারুন খান। ওই কেন্দ্র থেকে ১৬ জন প্রার্থী ভোটে লড়েছিলেন। আজাজ়ের স্থান ১১ নম্বর।
১৯৮০ সালের ৩০ মে গুজরাতের আমদাবাদে জন্ম আজাজ়ের। সেখানেই স্কুল এবং কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন তিনি। কানাঘুষো শোনা যায়, অভিনয় শুরু করার আগে লন্ডন এবং নিউ ইয়র্কের রাস্তায় ট্যাক্সি চালিয়ে উপার্জন করতেন তিনি।
২০০৩ সালে ‘পথ’ নামে একটি হিন্দি ছবিতে ছোট চরিত্রে অভিনয় করে কেরিয়ার শুরু করেন আজাজ়। ২০০৭ সালে একতা কপূরের হিন্দি ধারাবাহিক ‘কয়া হোগা নিম্মো কা’য় অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
ছোট পর্দার পাশাপাশি হিন্দি এবং তেলুগু ভাষার ছবিতে অভিনয় করা শুরু করেন আজাজ়। ‘এক… দ্য পাওয়ার অফ ওয়ান’, ‘লমহা’, ‘আল্লা কে বন্দে’, ‘রক্তচরিত্র ২’, ‘বুঢ্ঢা… হোগা তেরা বাপ’, ‘হ্যায় তুঝে সালাম ইন্ডিয়া’ নামের হিন্দি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
২০১১ সাল থেকে তেলুগু ছবির হাত ধরে দক্ষিণী ফিল্মজগতের সঙ্গে পরিচয় হয় আজাজ়ের। ‘নায়ক’, ‘বাদশা’, ‘হার্ট অ্যাটাক’ এবং ‘টেম্পার’-এর মতো একাধিক তেলুগু ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। তবে অভিনয়ের চেয়ে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে চর্চা হয়েছে বেশি।
কানাঘুষো শোনা যায়, ছবি তৈরি করবেন বলে দুবাইয়ের এক তরুণীর কাছ থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিলেন আজাজ়। পরে সেই টাকা নাকি ফেরত দেননি তিনি। কোনও ছবিও তৈরি করেননি বলে অভিযোগ।
২০১৩ সালে ‘বিগ বস্’ রিয়্যালিটি শোয়ের সপ্তম সিজ়নে অংশগ্রহণ করেন আজাজ়। কানাঘুষো শোনা যায়, সেখানে নাকি প্রতিযোগী গওহর খানের প্রেমে পড়েছিলেন তিনি। তবে সেই প্রেম ছিল একতরফা। একই বছর ‘ফিয়ার ফ্যাক্টর: খতরো কি খিলাড়ি’র পঞ্চম সিজ়নেও প্রতিযোগী হিসাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি।
২০১৪ সালে ‘বিগ বস্ ৮ হাল্লা বোল’-এও প্রতিযোগী হিসাবে অংশগ্রহণ করেন আজাজ়। সেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন গায়ক আলি কুলি মির্জ়া। শোয়ে গায়কের উপর হাত তুলেছিলেন বলে আজাজ়কে প্রতিযোগিতা থেকে বহিষ্কার করা হয়।
২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে মাদককাণ্ডে নাম জড়িয়ে যাওয়ায় নভি মুম্বইয়ের পুলিশ গ্রেফতার করে আজাজ়কে। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে ধর্ম সংক্রান্ত উস্কানিমূলক মন্তব্য করে ভিডিয়ো তৈরি করে ছড়ানোর জন্য আবার গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। ২০২১ সালের মার্চ মাসে ফের মাদককাণ্ডে আজাজ়ের নাম জড়িয়ে পড়ে।
২৬ মাস হেফাজতে থাকার পর ছাড়া পান আজাজ়। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘‘একই শৌচালয় ৪০০ জন ব্যবহার করতেন। শৌচালয়ের কী যে অবস্থা হত তা বলার নয়। আমি জেলের ভিতর থেকে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। মানসিক অবসাদ ঘিরে ধরেছিল আমায়। শুধু ভরসা রাখতাম। আমার ৮২ বছর বয়সি বাবা, স্ত্রী এবং ছেলের মুখ মনে পড়ত।’’
সমাজমাধ্যমের পাতায় বেশ জনপ্রিয় আজাজ়। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামের পাতায় তাঁর অনুগামীর সংখ্যা ৫৬ লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।
ইউটিউবেও নিজের অ্যাকাউন্ট খুলেছেন আাজাজ়। সেখানে দৈনন্দিন জীবনের খুঁটিনাটি ভিডিয়ো আকারে পোস্ট করেন অভিনেতা।