ভারতের ইতিহাসের পটভূমিতে তৈরি ছবি বেশির ভাগ সময়ই নজর কাড়ে বলিউডের দর্শকদের। বিশেষ করে তা যদি হয় রাজরাজড়া এবং সুলতানদের গল্প নিয়ে। তবে সব ছবিই যে সাফল্যের মুখ দেখে, তা নয়।
‘নওশেরওয়ান-ই-আদিল’, ‘মুগল-ই-আজম’ থেকে শুরু করে ‘যোধা আকবর’, ‘পদ্মাবত’— পাতে পড়তে না পড়তেই হু হু করে বিকিয়েছে এই সব ছবির টিকিট।
কিন্তু ইতিহাসের পটভূমিতে এমন ছবিও তৈরি হরয়েছে, যা বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়়ে ব্যাপক লোকসানের মুখ দেখেছে। দেউলিয়া হয়ে গিয়েছেন পরিচালক-প্রযোজকেরা। বলিউডে এমন একটি ছবিও তৈরি হয়েছিল, যা শুধু ওই ছবির পরিচালক-প্রযোজককে না, পুরো বলিউডকে নাকি রাতারাতি ঋণগ্রস্ত করে তুলেছিল।
বলিউডকে রাতারাতি অর্থসঙ্কটে ফেলা ছবির নাম ‘রাজিয়া সুলতান’। ১৯৮৩ সালে মুক্তি পাওয়া সেই ছবি বলিউডের ইতিহাসে অন্যতম ‘ফ্লপ’ ছবির তকমা পেয়েছিল।
‘রাজিয়া সুলতান’ ছবির পরিচালক ছিলেন কামাল আমরোহি। লেখক এবং প্রযোজক হিসাবেও বলিউডে সুপরিচিত ছিলেন তিনি। ১৯৬০ সালে মুক্তি পাওয়া কালজয়ী বলিউড ছবি ‘মুঘল-ই-আজম’-এর কাহিনিও কামালের লেখা।
চল্লিশের দশক থেকে আশির দশকের মধ্যে একাধিক সফল বলিউড ছবির পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কামাল। যার মধ্যে ‘মহল’ এবং ‘পাকিজা’ অন্যতম।
৭০-এর দশকের মাঝামাঝি দিল্লির একমাত্র মহিলা শাসক রাজিয়া সুলতানের জীবন নিয়ে ছবি তৈরির সিদ্ধান্ত নেন কামাল।
১৯৭৫ সালে সেই ছবি তৈরির কাজে হাত দেন কামাল। এর আট বছর পর মুক্তি পায় ‘রাজিয়া সুলতান’। ছবিতে নামভূমিকায় অভিনয় করেন হেমা মালিনী। নায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন ধর্মেন্দ্র। এ ছাড়াও সেই ছবিতে অভিনয় করেন পরভিন ববি।
‘রাজিয়া সুলতান’ ছবিটি তৈরি করতে সেই সময় ১০ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। সেই সময়ের ভারতের সবচেয়ে দামি সিনেমার তকমা পেয়েছিল ‘রাজিয়া সুলতান়’।
যদিও মুক্তি পাওয়ার পর সে ভাবে দর্শকদের মন জয় করতে পারেনি ‘রাজিয়া সুলতান’। ১০ কোটি টাকা ব্যয় করে তৈরি হওয়া ছবিটি বিশ্বব্যাপী মাত্র দু’কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল। সেই সময় বলিউডের সবচেয়ে ‘ফ্লপ’ ছবির তকমাও জুটেছিল ‘রাজিয়া সুলতান’-এর কপালে।
অনেক দর্শকই ছবিতে ব্যবহৃত উর্দুকে খুব কঠিন বলে মনে করেছিলেন। সিনেমাটিতে গতির অভাব রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন অনেকে। ফলে বক্স অফিসে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে ‘রাজিয়া সুলতান’।
শোনা যায়, ‘রাজিয়া সুলতান’ ছবিতের মূল প্রযোজক একে মিশ্র হলেও, বহু প্রযোজক সেই ছবিতে টাকা ঢেলেছিলেন। কিন্তু ছবিটি দেরি করে মুক্তি পাওয়ার কারণে এবং ব্যবসা না করতে পারার কারণে সেই প্রযোজকেরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েন। অনেক পরিবেশকও ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হন। ক্ষতির মুখে পড়তে হয় ছবির অন্যান্য কলাকুশলীদেরও।
শোনা যায় ‘রাজিয়া সুলতান’ ব্যবসা করতে না পারায় বলিউডের একটি বড় অংশ ক্ষতির মুখে পড়ে। সেই সময়ের একটি জনপ্রিয় পত্রিকার নিবন্ধে দাবি করা হয় যে, বক্স অফিসে ‘রাজিয়া সুলতান’-এর ব্যর্থতা পুরো বলিউডকে ঋণের মুখে ফেলে দেয়।
যদিও কামাল দাবি করেছিলেন, ছবিটি সাফল্যের মুখ না দেখার কারণে যদি কারও ক্ষতি হয়ে থাকে, তা হল তাঁর। প্রযোজকদের নাকি কোনও ক্ষতি হয়নি। তিনি এ-ও দাবি করেন যে, এই ছবির কারণে আট বছর ধরে বলিউডের বহু কলাকুশলী চাকরি পেয়েছিলেন।
‘রাজিয়া সুলতান’ অসফল হওয়ার কারণ হিসাবে, দর্শকের সেই ছবি বোঝার অক্ষমতাকেও নাকি দায়ী করেছিলেন কামাল। তাঁর দাবি ছিল, ‘মুঘল-ই-আজম’, ‘পাকিজা’, ‘শোলে’র মতো সিনেমাকেও ফ্লপ বলে অভিহিত করা হয়েছিল। ‘মশলা’ না থাকার কারণেও সমালোচকরা ‘রাজিয়া সুলতান’র সমালোচনা করেন বলে দাবি ছিল কামালের।
উল্লেখযোগ্য যে, ‘রাজিয়া সুলতান’ই ছিল কামাল পরিচালিত শেষ ছবি। শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের জীবনী নিয়ে একটি ছবি তৈরিরও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কামাল। চিত্রনাট্যও তৈরি ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তা তৈরি হয়নি।
১৯৯৩ সালে কামালের মৃত্যু হয়। ফলে ‘রাজিয়া সুলতান’ তাঁর পরিচালিত শেষ ছবি হয়ে রয়ে যায়।
ভারতীয় চলচ্চিত্রের দীর্ঘ ইতিহাসে এমন বহু সিনেমা তৈরি হয়েছে যেগুলি সেই সময়ের নিরিখে অন্যতম ব্যয়বহুল ছবির তকমা পেয়েছিল। এর মধ্যে অনেক সিনেমাই দর্শকদের মনে দাগ কাটতে পারেনি। বক্স অফিসে একেবারে অসফল হয়েছে, এমন ছবির সংখ্যাও নেহাত কম না।
এর মধ্যে ‘মাদার ইন্ডিয়া’, ‘শোলে’ এবং ‘দেবদাস’-এর মতো ব্যতিক্রমী ছবিও রয়েছে। এই ছবিগুলি তৈরিতে প্রচুর টাকা ব্যয় হয়েছিল ঠিকই, তবে সেগুলি বাণিজ্যিক ভাবেও ব্যাপক সাফল্য পেয়েছিল।