অম্বানী পরিবারের সঙ্গে সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই। প্রত্যক্ষ মালিকানা নেই রিলায়্যান্স গোষ্ঠীতেও। কিন্তু তিনি নাকি ধীরুভাই অম্বানীর ‘তৃতীয় পুত্র’। অনিল এবং মুকেশ অম্বানীর ‘ভাই’। তিনি আনন্দ জৈন। ভারতের অন্যতম শিল্পপতি এবং জয় কর্প লিমিটেডের চেয়ারম্যান।
কিন্তু কেন আনন্দকে ধীরুভাইয়ের তৃতীয় সন্তান হিসাবে মান্যতা দেওয়া হয়? মুকেশ এবং আনন্দ মুম্বইয়ের হিল গ্রেঞ্জ হাই স্কুলে একসঙ্গে পড়াশোনা করেছেন। ছাত্রজীবন থেকেই মুকেশ এবং আনন্দ হরিহর আত্মা ছিলেন বলেন অম্বানী পরিবারের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর।
১৯৮০ সালে পড়াশোনা মাঝপথে ছেড়ে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিরে আসেন মুকেশ। উদ্দেশ্য ছিল বাবার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রিলায়্যান্স গোষ্ঠীকে সাফল্যের শীর্ষে নিয়ে যাওয়া।
মুকেশ ফিরে এসেছেন শুনে দিল্লিতে পৈতৃক ব্যবসা গুটিয়ে আনন্দও রিলায়্যান্সে যোগ দিতে চলে আসেন।
মুকেশের পাশাপাশি ধীরুভাইয়ের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ ভাবে কাজ করতে শুরু করেন আনন্দ। অম্বানী পরিবারের ঘনিষ্ঠ মহলের মতে আনন্দকে ছেলের মতোই ভালবাসতেন ধীরুভাই।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে অম্বানীদের পাশাপাশি রিলায়্যান্সের হাল শক্ত হাতে ধরেন আনন্দ। শোনা যায়, সেই সময় রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর ক্ষতি করতে উঠে পড়ে লেগেছিলেন বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের ‘কিংপিন’ মনু মানেক।
মনুর সেই প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করার নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন আনন্দ। আর তখন থেকেই নাকি ধীরুভাইয়ের মনে জায়গা করে নেন তিনি।
অনেকে মনে করেন, আনন্দকে খানিকটা ধীরুভাইয়ের মতো দেখতে। আর সেই কারণেও নাকি আনন্দকে একটু বেশি স্নেহ করতেন ধীরুভাই।
আনন্দের জন্ম ১৯৫৭ সালে। তিনি এবং মুকেশ সমবয়সি। জৈন নিজেও এক জন সফল ব্যবসায়ী। একটি সংস্থার চেয়ারম্যান হওয়ার পাশাপাশি তাঁর নির্মাণ ব্যবসাও রয়েছে। এ ছাড়া পুঁজিবাজারে তিন দশকের বেশি সময় ধরে ব্যবসার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর।
আনন্দ ব্যবসায়িক বৃত্তে ‘এজে’ নামে পরিচিত। এক সময় ভারতের অন্যতম ধনী ছিলেন তিনি। ২০০৭ সালে একটি পত্রিকার ভারতের সেরা ধনীদের তালিকায় ১১ নম্বরে নাম ছিল তাঁর।
আনন্দের ছেলে হর্ষ জৈন, ভারতীয় একটি অনলাইন গেমিং সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা।
আনন্দ ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে মুকেশের আস্থাভাজন। তিনি রিলায়্যান্স ক্যাপিটাল, রিলায়্যান্স ইনফোকম এবং রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর মালিকানাধীন ইন্ডিয়ান পেট্রো কেমিক্যালস লিমিটেড (আইপিসিএল)-এর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আনন্দ রিলায়্যান্সের চেয়ারম্যান মুকেশের প্রধান উপদেষ্টা। যে কোনও জটিল বিষয়ে আলোচনা করার জন্য নাকি আনন্দের দ্বারস্থ হন মুকেশ। মুকেশের নির্মাণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠার নেপথ্যেও নাকি প্রধান মাথা ছিল আনন্দের।
রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত থাকা সত্ত্বেও সংস্থার অভ্যন্তরে আনন্দের নির্দিষ্ট কোনও পদ নেই।
আনন্দ বেতন বাবদও রিলায়্যান্স গোষ্ঠী থেকে এক পয়সা নেন না বলে শোনা যায়। তিনি সচরাচর খ্যাতির আলোকবৃত্তের বাইরে থাকতে পছন্দ করেন।
মুকেশের প্রিয় পাত্র এবং প্রাণের বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও, অনিলের সঙ্গে সখ্য নেই আনন্দের। অনিল নাকি তাঁকে একেবারেই পছন্দ করেন না।
অনিলের অভিযোগ, মুকেশের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বৃদ্ধির নেপথ্যেও নাকি হাত রয়েছে আনন্দের।