সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের অনুমতি দেওয়ার চার বছর পর, চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে সেই মন্দিরের প্রথম দফার নির্মাণকাজ। সব কিছু পরিকল্পনামাফিক এগোলে আগামী বছরের ২২ জানুয়ারিতেই অযোধ্যায় ‘রামলালা বিরাজমান’-এর মূর্তি প্রতিষ্ঠা হতে চলেছে। তা নজরে রেখেই তুঙ্গে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
খ্যাতনামা স্থপতি চন্দ্রকান্ত ভাই সোমপুরার নেতৃত্বাধীন একটি দল এই মন্দিরের নকশা প্রস্তুত করেছে। সেই নকশা অনুযায়ীই চলেছে মন্দির নির্মাণের কাজ।
অযোধ্যার রামমন্দির তৈরি করা হয়েছে নাগারা বা উত্তর ভারতীয় মন্দির শৈলীর আদলে। ট্রাস্ট সূত্রে খবর, গোলাপি বেলেপাথর এবং রাজস্থানের মির্জাপুর ও বংসী-পাহাড়পুর থেকে আনা মার্বেল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মন্দিরটি।
এ ছাড়াও মন্দিরে প্রায় ১৭ হাজার গ্রানাইট পাথর ব্যবহার করা হয়েছে বলে ট্রাস্টের তরফে জানানো হয়েছে। ট্রাস্ট সূত্রে খবর, প্রতিটি পাথরের ওজন দু’টন (১৮০০ কিলোরও বেশি)। সেই গ্রানাইট আনা হয়েছে কর্নাটক থেকে।
সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক চম্পত রাই দাবি করেছেন, মন্দিরটি এমন অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি করা হচ্ছে যে, আগামী হাজার বছরেও সেটি মেরামতের প্রয়োজন প়ড়বে না। এমনকি, ৬.৫ মাত্রার ভূমিকম্পও মন্দিরের ভিত নাড়াতে পারবে না বলে দাবি করেছে মন্দিরের পরিচালন সমিতি।
ট্রাস্টের তরফে জানানো হয়েছে, রামমন্দির নির্মাণে কোনও সাধারণ ইস্পাত বা সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়নি। মন্দিরের ভিত তৈরি হয়েছে ১২ মিটার গভীর গর্ত খুঁড়ে।
ট্রাস্ট সূত্রে খবর, ভিত খোঁড়ার পর যে মাটি দিয়ে সেই গর্ত ভরাট করা হয়েছে, তা ২৮ দিনে পাথরে রূপান্তরিত হতে পারে। ভিতে মোট ৪৭টি স্তর রয়েছে।
চম্পত জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত মন্দির নির্মাণে ২১ লক্ষ ঘনফুট গ্রানাইট, বেলেপাথর এবং মার্বেল ব্যবহার করা হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য যে, ১৯৯২ সালের ‘শিলা দান’ অনুষ্ঠানের সময় এবং পরে দান করা সমস্ত ইট রামমন্দির নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে।
মন্দির নির্মাণ কমিটির চেয়ারম্যান নৃপেন্দ্র মিশ্র তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রাক্তন প্রধান সচিব জানিয়েছেন, আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে মন্দিরের প্রথম দফার কাজ শেষ হয়ে যাবে। সম্পূর্ণ হবে মন্দিরের গর্ভগৃহ নির্মাণের কাজও। গর্ভগৃহেই ‘রামলালা’র মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হবে। পুজোও হবে মূর্তি প্রতিষ্ঠার দিনে।
ট্রাস্ট সূত্রে খবর, আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে মন্দিরের দ্বিতীয় দফার কাজও শেষ হয়ে যাবে। দ্বিতীয় দফায় রয়েছে, মন্দিরের প্রথম এবং দ্বিতীয় তলের নির্মাণকাজ। দ্বিতীয় পর্যায়ে মন্দিরের সব দেওয়ালের নকশা এবং ৩৬০টি খোদাই করা স্তম্ভের কাজও শেষ করা হবে বলে ট্রাস্ট সূত্রে জানা গিয়েছে।
মন্দির কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর, মন্দিরের প্রথম তলায় থাকবে ‘রাম দরবার’। রামচন্দ্রের রাজসভার যে বর্ণনা রামায়ণে পাওয়া যায়, তার আদলে ‘রাম দরবার’ তৈরি হবে। রাম দরবারের প্রতিটি স্তম্ভে ২৫-৩০টি মূর্তি খোদাই করা থাকবে। মন্দির চত্বরে বাল্মীকি, নিষাদ, বিশ্বামিত্র, শবরীর মন্দির-সহ মোট সাতটি মন্দিরের কাজও দ্বিতীয় দফায় শেষ হবে।
ট্রাস্ট সূত্রে খবর, মন্দির নির্মাণের তৃতীয় পর্যায়ে ৭১ একর জমির উপর অডিটোরিয়াম এবং দেওয়াল গাঁথার কাজ করা হবে। সেই জমিতে সপ্তর্ষিদের মন্দির এবং ব্রোঞ্জের মূর্তি তৈরির কাজও হবে তৃতীয় পর্যায়েই। সেই কাজ ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করছেন মন্দির কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৫ অগস্ট অযোধ্যায় রামমন্দিরের শিলান্যাস করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে অযোধ্যায় শ্রীরামজন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের চেয়ারম্যান নৃপেন্দ্র আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়ে দেন রামমন্দির উদ্বোধনের দিন। সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘ডিসেম্বরের মধ্যেই রামমন্দিরের একতলার কাজ শেষ হয়ে যাবে। ২২ জানুয়ারি হবে মন্দিরের উদ্বোধন।’’
গত শনিবার মন্দিরের নির্মীয়মাণ গর্ভগৃহের ছবি প্রকাশ্যে এনেছে শ্রীরামজন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট। ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক নিজের ‘এক্স (সাবেক টুইটার)’ হ্যান্ডলে মন্দিরের গর্ভগৃহের দু’টি ছবি পোস্ট করেছেন।
সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, গর্ভগৃহের মাঝে তিনটি ধাপের একটি বেদি তৈরি করা হয়েছে। ঠিক তার উপরে ছাদটিতে পদ্মের কারুকার্য করা। ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক চম্পত ‘এক্স’ হ্যান্ডলে লিখেছেন, “রামলালার গর্ভগৃহের কাজ প্রায় শেষ। সম্প্রতি আলো লাগানোর কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। তার কিছু ছবিই আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছি।”
অনুষ্ঠানের আগে, মন্দিরের অছি পর্ষদ প্রধানমন্ত্রী মোদীর উপস্থিতিতে গর্ভগৃহে স্থাপনের জন্য ‘রামলালা’র তিনটি মূর্তির মধ্যে একটি বেছে নেবে। তিনটি মূর্তিই ৫১ ইঞ্চি লম্বা হবে। মূর্তির হাতে থাকবে তির-ধনুক।
গর্ভগৃহেই ‘রামলালা’র মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হবে। পুজোও হবে মূর্তি প্রতিষ্ঠার দিনে। ট্রাস্ট সূত্রে খবর, সেই পুজোয় যজমানের ভূমিকায় থাকার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। তার পরেই হবে বিগ্রহে চক্ষুদান।
শুধু যজমানের ভূমিকাই নয়, প্রধানমন্ত্রী মোদী রাজি থাকলে তিনিই পায়ে হেঁটে আধ কিলোমিটার দূরে একটি অস্থায়ী মন্দির থেকে ‘রামলালা’র মূর্তিকে রামমন্দিরের গর্ভগৃহে নিয়ে আসবেন। ২৭ জানুয়ারি সকাল থেকে জনসাধারণের দর্শনের জন্য মন্দিরের গর্ভগৃহ খুলে দেওয়া হবে বলে ট্রাস্ট সূত্রে খবর।