ফুটবলের প্রতি তাঁর প্রেম সেই ছোটবেলা থেকে। পরে সেই ফুটবলের কাছেই নিজেকে সঁপে দিয়েছেন। যার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন, সেই ফুটবলই তাঁকে এনে দিয়েছে খ্যাতি। হয়েছে নাম-যশ। তবে মাঠের বাইরেও তিনি চর্চা বাড়িয়েছেন। সৌজন্যে তাঁর লাস্যময়ী অবতার। তিনি আলিশা লেহম্যান।
সুইস ফুটবল তারকাকে ঘিরে উন্মাদনার অন্ত নেই সমাজমাধ্যমে। সৌন্দর্য আর বুদ্ধিমত্তা— এই দুইয়ের মিশেলে নজর কেড়েছেন আলিশা। চর্চা বাড়িয়েছে তাঁর ব্যক্তিগত সত্তাও।
১৯৯৯ সালের ২১ জানুয়ারি জন্ম আলিশার। তাঁর যখন ৫ বছর বয়স, সেই সময় থেকেই ফুটবলের প্রতি ঝোঁক দেখা যায় আলিশার। সেই শুরু। তার পর থেকে স্থির করে নেন বড় হয়ে ফুটবলার হবেন। পরে সেই লক্ষ্যপূরণ করেন তিনি।
১৭ বছর বয়সে সুইৎজ়ারল্যান্ডের যুব দলের হয়ে খেলার সুযোগ পান আলিশা। সুইৎজ়ারল্যান্ডেই প্রথম ফুটবল খেলা শুরু হয়েছিল তাঁর। ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সুইস মহিলা ফুটবল দল ‘বিএসসি ওয়াইবি ফ্রন’-এ খেলেছিলেন আলিশা।
২০১৮ সালে ‘ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নশিপে’ তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি নজর কাড়ে। ফরোয়ার্ড পজিশনে খেলে বেশ কয়েকটি গোল করেছিলেন আলিশা। সেই সময় অন্যতম নামী ইংলিশ ফুটবল ক্লাব ‘ওয়েস্ট হাম ইউনাইটেড’-এক নজরে পড়েন উঠতি তারকা আলিশা। এর পরই ওই ক্লাবে পদার্পণ তাঁর। ২০১৮ সালের অগস্ট মাসে ওই ক্লাবে সই করেন আলিশা।
সেই সময় ‘ওয়েস্ট হাম ইউনাইটেড’ ক্লাবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার হিসাবে নিজের জায়গা পাকা করে ফেলেছিলেন আলিশা। ফুটবল মাঠে ক্রমশই নিজের প্রতিভা মেলে ধরেছিলেন তিনি। যার জেরে সাফল্যও পায় ওই ক্লাব।
এর পর আরও একটি ইংলিশ ফুটবল ক্লাব ‘এভারটন’-এর হয়েও খেলেন আলিশা। ২০২১ সালে তিনি যোগ দেন ইংল্যান্ডের আরও একটি ক্লাবে। তার নাম ‘অ্যাস্টন ভিলা ফুটবল ক্লাব’।
গত বছরের জুলাই মাসে খেলায় পারদর্শিতার সুবাদে আলিশার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ বাড়ায় অ্যাস্টন ভিলা। যত দিন গড়াচ্ছে, ফুটবলার হিসাবে ততই সাফল্যের মুখ দেখছেন আলিশা।
খেলার স্বীকৃতি হিসাবে নানা পুরস্কারও পেয়েছেন আলিশা। ২০২২ সালে ‘অ্যাস্টন ভিলা উওমেন্স’ দলের জন্য ‘সাপোর্টার্স প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার’-এর সম্মান পান তিনি। ফুটবলভক্তদের ভোটের নিরিখে বাছাই করা হয় এই পুরস্কার প্রাপককে। আলিশার ভক্তের সংখ্যাও অনেক। ইনস্টাগ্রামে আলিশার ফলোয়ারের সংখ্যা ১ কোটিরও বেশি।
২০১৮ সালে পেশাদার ফুটবলার হিসাবে যাত্রাপথ শুরু হয়েছিল আলিশার। তার পর থেকে আর পিছন ফিরে তাকাতেই হয়নি তাঁকে। এখনও পর্যন্ত ‘ইংল্যান্ড উওমেন্স সুপার লিগ’-এ ১২টি গোল করেছেন আলিশা।
সুইস ন্যাশনাল ফুটবল দলের হয়ে খেলেন আলিশা। তাঁর হাত ধরেই ২০২২ সালে ‘ইউএফএফএ ইউরো’তে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে সে দেশ। নিজের দেশের হয়ে ১৩টি দুর্দান্ত গোল করেছিলেন আলিশা।
ফুটবলার হিসাবে সফল তিনি। কুড়িয়েছেন জনপ্রিয়তাও। খ্যাতির পাশাপাশি আলিশাকে ঘিরে বিতর্কও চলেছে। আলিশা নাকি সমকামী! এমন জল্পনাই ছড়িয়েছিল। তবে এ সব নিয়ে তিনি মাথা ঘামাননি। এটা ব্যক্তিগত বিষয়। তাই তা নিয়ে খুব একটা সরব হননি।
তবে পরে নিজেই এই ব্যাপারে নীরবতা ভেঙেছিলেন। নিজের ব্যক্তিগত সত্তার কথা সগর্বে ঘোষণা করেছিলেন আলিশা। জানিয়েছিলেন, তিনি উভকামী (বাইসেক্সুয়াল)।
সুইস ফুটবলার রামোনা বাচম্যানের সঙ্গে আলিশার প্রেমের সম্পর্ক নিয়েও গুঞ্জন ছড়িয়েছিল। ‘ওয়েস্ট হ্যাম’ দলে যখন যোগ দিয়েছিলেন আলিশা, সেই সময় চেলসির হয়ে খেলছিলেন বাচম্যান। আর সেই সময়ই মন দেওয়া-নেওয়া হয়েছিল দু’জনের।
২৩ বছর বয়সেই কোটিপতি আলিশা। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ১১ কোটি টাকা। অ্যাস্টন ভিলার হয়ে খেলার জন্য পারিশ্রমিক হিসাবে পান ১ কোটি ৫৮ লক্ষ টাকা। এ ছাড়াও বিভিন্ন স্পনসরশিপ থেকেও আয় হয় তাঁর।