রবিবারই তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন নরেন্দ্র মোদী। শুধু তিনি একা নন, তাঁর সঙ্গে শপথ নিতে পারেন নতুন মন্ত্রিসভার আরও কয়েক জন। সেই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সাজ সাজ রব দিল্লিতে। সেজে উঠছে রাষ্ট্রপতি ভবনের উঠোন।
মোদীর শপথ অনুষ্ঠানের অতিথি তালিকা নিয়ে কৌতূহল শুরু হয়েছে। দেশ-বিদেশের বহু নেতাই ওই অনুষ্ঠানের শোভা বৃদ্ধি করবেন বলেই খবর। সেই তালিকায় যেমন রয়েছেন দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েক জন রাষ্ট্রনেতা, তেমনই আছেন দেশের নানা ক্ষেত্রে সফল ব্যক্তিবর্গ। সাফাই কর্মী থেকে রূপান্তরকামী— তালিকা অনেক লম্বা।
সেই তালিকায় দু’টি নাম নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রথম জন হলেন ঐশ্বর্যা এস মেনন। আট হাজার জনের অতিথি তালিকায় রয়েছেন তিনিও। পেশায় তিনি লোকো পাইলট। বর্তমানে ঐশ্বর্যা বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চালান।
বন্দে ভারত ছাড়াও জন শতাব্দীর মতো এক্সপ্রেসও অনায়াসেই ছোটান ঐশ্বর্যা। দক্ষিণ রেলওয়ের চেন্নাই বিভাগের সিনিয়র সহকারী লোকো পাইলট তিনি। চেন্নাই থেকে বিজয়ওয়াড়া বা চেন্নাই থেকে কোয়ম্বত্তূর বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের চালকের কেবিনে প্রায়ই তাঁকে দেখা যায়।
কর্মজীবনে তাঁর তৎপরতা, সতর্কতা এবং রেলওয়ের সিগন্যালিং সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞানের জন্য সব সময়ই প্রশংসিত হন ঐশ্বর্যা। তাঁর সুদক্ষ হাতে যাত্রীরা সব সময়ই সুরক্ষিত।
শুধু একা ঐশ্বর্যা নন, অতিথি তালিকায় থাকা সুরেখা যাদবকে নিয়েও আলোচনা চলছে। তিনিই এশিয়ার প্রথম মহিলা লোকো পাইলট। বন্দে ভারতের মতো সেমি-হাই স্পিড ট্রেন চালানোর দায়িত্ব তাঁর কাঁধেই রয়েছে।
মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলার বাসিন্দা সুরেখা। ১৯৮৮ সালে ট্রেনের চালক হিসাবে নিজের কর্মজীবন শুরু করেছিলেন তিনি। মেয়েরাও যে ট্রেন চালাতে পারেন, সেই ধারণার অন্যতম বাহক সুরেখাই।
এশিয়ায় সুরেখাই প্রথম মহিলা যিনি লোকো পাইলট হন। অনেক মেয়ের কাছেই তিনি অনুপ্রেরণা। তাঁকে দেখে অনেক মেয়েই এই পেশায় কাজ করতে এগিয়ে এসেছেন।
২০২৩ সালের ১৩ মার্চ প্রথম বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চালিয়ে ইতিহাস তৈরি করেন সুরেখা। সোলাপুর থেকে মুম্বই বন্দে ভারত চালান তিনি। সুরেখাই প্রথম মহিলা হিসাবে বন্দে ভারত চালিয়েছেন। তার পর বেশ কয়েক জন মহিলা লোকো পাইলটই বন্দে ভারত চালান। সেই তালিকায় আছেন ঐশ্বর্যা।
সুরেখা, ঐশ্বর্যা ছাড়াও অনেকেই রবিবারের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। রেল, মেট্রোকর্মীদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের একটা অংশ মোদীর শপথ অনুষ্ঠানে থাকবেন।
মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমসিঙ্ঘে। এ ছাড়াও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে নেপালের প্রধানমন্ত্রী, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী এবং মরিশাসের প্রধানমন্ত্রীকে।
মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জুকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে রবিবারের অনুষ্ঠানে। সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন তিনি। জানিয়েছেন, এমন ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের সাক্ষী থাকার সুযোগ পেয়ে তিনি কৃতজ্ঞ।
গত নভেম্বর মাসে মলদ্বীপের ক্ষমতায় এসেছেন মুইজ্জু। তিনি চিনপন্থী এবং ভারত-বিরোধী হিসাবে পরিচিত। তাঁর ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সঙ্গে মলদ্বীপের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি হয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্যের অভিযোগ উঠেছিল মুইজ্জুর তিন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। তার পর ভারতের সমাজমাধ্যমে মলদ্বীপ বয়কটের ডাক ওঠে। এ হেন পরিস্থিতিতে মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে মুইজ্জুকে আমন্ত্রণ এবং তাঁর উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীরাও উপস্থিত থাকতে পারেন। এ ছাড়াও চলচ্চিত্র ও ক্রীড়া জগতের প্রতিনিধি-সহ শীর্ষ স্থানীয় শিল্পপতি এবং ব্যবসায়ীরাও এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়েছেন।
এনডিএ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও ২০১৪ এবং ২০১৯-এর মতো এ বার বিজেপি একক ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। তাই সরকার গড়তে এনডিএ-র অন্যান্য শরিক দলের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে মোদী-শাহদের।
তবে তৃতীয় বারের জন্য সরকার গড়ার ব্যাপারে আশাবাদী মোদী। শুক্রবারই এনডিএ-র সংসদীয় নেতা হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে তাঁকে। শরিকেরা সর্বসম্মত ভাবে মোদীর নামে সমর্থন জানিয়েছেন।
শুক্রবার বিকেলেই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে গিয়ে তৃতীয় বার সরকার গঠনের জন্য আনুষ্ঠানিক ভাবে আবেদন জানিয়েছেন মোদী। সেই মতো রবিবার রাষ্ট্রপতি ভবনে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেই অনুষ্ঠানেই অতিথিদের মধ্যে থাকবেন সুরেখা, ঐশ্বর্যারা।