দিন দিন দিল্লির দূষণ পরিস্থিতি আরও খারাপ পর্যায়ে পৌঁছচ্ছে। বাতাসের গুণমান ‘খারাপ’ থেকে ‘অত্যন্ত খারাপ’ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
ফলে আবার ‘গ্যাস চেম্বারে’ পরিণত হচ্ছে রাজধানী। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (সিপিসিবি) জানিয়েছে, শুক্রবার দিল্লির বেশির ভাগ জায়গায় বাতাসের গুণমান (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বা এআইকিউ) ‘অত্যন্ত খারাপ’। সর্বোপরি, শুক্রবার রাজধানীর একিউআই ৪৭১।
গত শুক্রবার থেকে বাতাসের গুণমান খারাপ পর্যায়ে ছিল। যত দিন এগিয়েছে, সেই পরিস্থিতি খারাপ থেকে আরও খারাপ হয়েছে।
শুক্রবার সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে। মনে করা হচ্ছে, এই মরসুমে এখনও পর্যন্ত রাজধানীতে বাতাসের গুণমান সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছে শুক্রবার।
গত শুক্রবার একিউআই ছিল ২১৬, শনিবার ৩০৪, রবিবার ৩২৫, সোমবার ৩৪৭, মঙ্গলবার ৩৫৯, বুধবার ৩৬৪, বৃহস্পতিবার ছিল ৪২২।
একিউআই ০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকলে বাতাসের গুণগত মান ‘ভাল’। ৫১-১০০ হলে ‘সন্তোষজনক’। ১০১-২০০ হলে ‘মোটামুটি স্বাভাবিক’। ২০১-৩০০ হলে ‘খারাপ’। ৩০১-৪০০ হলে ‘খুব খারাপ’। ৪০১-৫০০ হলে ‘খুব খুব খারাপ’। দূষণ ঠেকাতে কেন্দ্র ইতিমধ্যেই ‘গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান (গ্র্যাপ)-এর স্টেজ থ্রি চালু করেছে। চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে গ্র্যাপ-কে। স্টেজ ১ (খারাপ, একিউআই ২০১-৩০০), স্টেজ টু (খুব খারাপ, একিউআই ৩০১-৪০০), স্টেজ থ্রি (মারাত্মক, একিউআই ৪০১-৪৫০), স্টেজ ৪ (অত্যন্ত মারাত্মক, একিউআই ৪৫০-এর উপরে)।
শুক্রবার সকালে ঘন ধোঁয়াশার চাদরে ঢেকে যায় দিল্লির বহু এলাকা। দৃশ্যমানতাও নেমে আসে। ধোঁয়াশা পরিস্থিতি কাটাতে রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় জল ছেটানোর কাজ শুরু করেছে দিল্লি পুরসভা।
বাতাসের গুণমান উন্নতির জন্য এই পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে পুরসভা সূত্রে খবর। সিপিসিবি জানিয়েছে, শুক্রবার লোধী রোড, জহাঙ্গিরপুরী, আরকে পুরম, ইন্দিরা গাঁধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল ৩-কে বাতাসের গুণমানের যে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে তাতে দেখা গিয়েছে, ওই সব এলাকায় একিউআই পৌঁছেছে যথাক্রমে ৪৩৮, ৪৯১, ৪৮৬ এবং ৪৭৩।
রাজধানীতে দূষণের মাত্রা বাড়তে থাকায় মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল সমস্ত প্রাথমিক স্কুলগুলি ৩ এবং ৪ নভেম্বর বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
পরিস্থিতির মোকাবিলায় খুব গুরুত্বপূর্ণ নয় এমন নির্মাণকাজগুলির ক্ষেত্রেও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
পাশাপাশি ‘রেড লাইট অন, গাড়ি অফ’ প্রচার কর্মসূচি চালানো হচ্ছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, সিএনজি পরিচালিত এক হাজার বেসরকারি বাস রাজধানীর রাস্তায় নামানো হবে।
ইতিমধ্যেই বিএস-৩ পেট্রল এবং বিএস-৪ ডিজেলচালিত গাড়ি চালাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি, হরিয়ানা, পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ থেকেও ডিজেলচালিত গাড়ি রাজধানীতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
দিল্লিবাসীকে গাড়ির পরিবর্তে বেশি করে মেট্রো ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। জনসাধারণের যাতে কোনও রকম অসুবিধা না হয়, তাই ২০টি অতিরিক্ত রেক নামানো হয়েছে।
অন্য দিকে, হরিয়ানার গুরুগ্রামে দূষণ এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে, ১৪৪ ধারা জারি করতে হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের নয়ডায় সেক্টর ১, ৬২ এবং ১১৬-তে দূষণের মাত্রা ‘অত্যন্ত খারাপ’ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
পঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশকে শস্যের গোড়া পোড়ানোর জন্য দায়ী করা হয়। যার জেরে শীতের মরসুমে দিল্লি হয়ে ওঠে ‘গ্যাস চেম্বার’। ফলে এই মরসুমে রাজধানী যাতে ‘গ্যাস চেম্বার’ না হয়ে ওঠে, তাই আগেভাগেই বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছে অরবিন্দ কেজরীওয়ালের সরকার।
কিন্তু তার পরেও নভেম্বরের শুরুতেই রাজধানীর বাতাসের গুণগত মান খারাপ হতে শুরু করায় চিন্তা বাড়ছে প্রশাসনের।
বাতাসের গুণগত মান খারাপ হতে থাকায় মঙ্গলবার দিল্লি, পঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং উত্তরপ্রদেশ সরকারকে দূষণ ঠেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এ বিষয়ে পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দিতে বলা হয়েছে দিল্লি এবং চার রাজ্যকে।