মেয়েদের আপাদমস্তক ঢেকে রাখায় বিশ্বাসী আফগানিস্তানের নয়া শাসক তালিবান। তবে সেই আফগানিস্তানেরই এক জন মহিলা প্রাপ্তবয়স্কদের ছবিতে অভিনয় করেন।
পেশাদার ওই পর্ন তারকা বর্তমানে আফগানিস্তানে থাকেন না। তবে তালিবান শাসনের প্রথম দফায় তিনি কাবুলেই ছিলেন। তালিবানি হিংসা সামনে থেকে দেখেছেন।
নাম ইয়াসমিন আলি। ইয়াসমিনের দাবি, তিনিই আফগানিস্তানের প্রথম এবং একমাত্র পর্ন ছবির তারকা। তাঁর আগে বা পরে কেউ আফগানিস্তান থেকে প্রাপ্তবয়স্কদের ছবিতে অভিনয়ের সাহস দেখাননি।
পর্ন ছবির দুনিয়ায় ইয়াসমিনের জনপ্রিয়তা আছে। ‘ওনলি ফ্যানস’ এবং ‘পর্ন হাবে’ তাঁর অভিনীত প্রাপ্তবয়স্কদের ছবি আকছার দেখা যায়।
তার পরও তালিবরা যে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করতে পারেননি, তার কারণ তাঁর সাম্প্রতিক ঠিকানা। ইয়াসমিন এখন ব্রিটেনে থাকেন।
শুধু তা-ই নয়, নিজের ধর্মও ছেড়েছেন তিনি। নিজেকে এখন ‘ঈশ্বর অবিশ্বাসী’ বলে প্রচার করেন ইয়াসমিন।
তবে ইয়াসমিনের দাবি, তাঁর জনপ্রিয়তার কথা তালিবদের অজানা নয়। এমনকি, তাঁরা ইয়াসমিনের ছবি এবং ভিডিয়োও দেখে থাকতে পারেন।
তবে একটি সাক্ষাৎকারে ইয়াসমিন বলেছেন, সে সব ভিডিয়ো দেখলেও তালিবরা তাঁকে ঘৃণার চোখেই দেখেন। কেন না, তালিবানি ভাবনায় মেয়েদের শরীর প্রদর্শন ঘোরতর অপরাধ।
তালিবরা তাঁকে নিয়ে কী ভাবতে পারেন, তা-ও জানিয়েছেন ইয়াসমিন। বলেছেন, ‘‘ওরা নিশ্চয়ই মনে করে, আমার এত সাহস কী করে হয় যে আমি আফগান হয়ে প্রকাশ্যে আমার শরীর প্রদর্শন করছি!’’
ইয়াসমিন বলেছেন, ‘‘ওরা মনে করে আমার শরীরের উপর শুধু ওদের কর্তৃত্ব রয়েছে । আর আমি যদি সর্বসমক্ষে শরীর প্রদর্শন করি, তবে আমি প্রকৃত আফগান নয়। আমার দেশপ্রেমে ঘাটতি আছে।’’
তবে তাতে কিছু যায় আসে না ইয়াসমিনের। তাঁর কথায়, ‘‘আমি আফগান তো কী হয়েছে! আমার দেশপ্রেম কতটা, তা কি তালিবান ঠিক করে দেবে? কে বলতে পারে, ওরাও হয়তো আমার ফিল্ম দেখে। কিন্তু প্রকাশ্যে বলতে পারে না।’’
ইয়াসমিনের দাবি, মেয়েদের ‘বস্তু’ মনে করে তালিবান। এ কথা তিনি বরাবরই জেনে এসেছেন। আফগানিস্তানে তালিবানের প্রথম দফার শাসনে স্বচক্ষে দেখেওছেন।
ইয়াসমিনের মা তাঁকে তখন বলতেন, আফগানিস্তানে ‘ধর্ষণ’ বলে কোনও কথা নেই। তালিবান চাইলে যে কোনও মেয়ের সঙ্গে যা খুশি করতে পারে।
আফগান পুরুষদেরও তালিবানি হিংসার শিকার হতে দেখেছেন তিনি। নানা কারণে, এমনকি ধর্মীয় পোশাক যথাযথ ভাবে পরিধান না করলেও তাদের জনসমক্ষে নৃশংস ভাবে মারতে দেখেছেন বলে দাবি ইয়াসমিনের।
৯০-এর দশকে আফগানিস্তানে যখন এ সব চলছে, তখন প্রাণ বাঁচাতে মায়ের সঙ্গে ব্রিটেনে চলে আসন ইয়াসমিন। এর পর ব্রিটেনেই নিজের শিক্ষা সম্পূর্ণ করেছেন।
পেশা হিসেবে পর্ন দুনিয়াকে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত তাঁর নিজের। ইয়াসমিনের কথায়, ‘‘আমি ধর্মকে অনেক দিনই বিদায় জানিয়েছিলাম। পেশার প্রয়োজনে শরীর প্রদর্শনের সিদ্ধান্তও আমিই নিই।’’
তবে পেশার জন্য তালিবান তাঁর সরাসরি কোনও ক্ষতি করতে না পারলেও হুমকি দেয়। ইয়াসমিন জানিয়েছেন, মাঝে মধ্যেই তাঁর কাছে ই মেল আসে। তাঁকে ‘ইহুদি’ এবং ‘গুপ্তচর’ বলে আক্রমণ করা হয় সেখানে।
ইয়াসমিন জানিয়েছেন, তালিবানের অদ্ভুত মানসিকতা দেখে তাঁর হাসি পায়। যে মহিলাদের ছাড়া মানব জগৎ চলবে না, তাঁদেরই এ ভাবে দাবিয়ে রাখতে চায় তালিবান।
ইয়াসমিন জানিয়েছেন, আফগানিস্তানে এখনও ঋতুচক্রে থাকা এক মহিলাকে ‘অপবিত্র’ ভাবা হয়।
আফগান পর্ন তারকা জানিয়েছেন, গোটা ব্যাপারটাই আসলে মেয়েদের নিয়ন্ত্রণ করতে চাওয়া। কারণ, তালিবান ভয় পায় মেয়েরা শরীর দেখিয়ে বেড়ালে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না তারা।