শেয়ার বাজারে ঘুরে দাঁড়াতে গৌতম আদানির সংস্থার চাবিকাঠি একটাই। ঋণ শোধ। মোটা অঙ্কের একাধিক ঋণ শোধ করেই লগ্নিকারীদের ভরসা ফেরাতে চাইছেন আদানিরা।
জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে আমেরিকার লগ্নি সংক্রান্ত গবেষণা সংস্থা হিন্ডেনবার্গ আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল। তার পর থেকে একের পর এক ঋণ শোধ করেছেন গৌতম আদানি।
দেশে, বিদেশে বিভিন্ন সংস্থায় আদানিদের ঋণের পরিমাণ বিপুল। দেখা গিয়েছে, সময়ের আগেই বহু ঋণ তাঁরা শোধ করে দিয়েছেন। শেয়ার বাজারে যতই ক্ষতির সম্মুখীন হোক আদানি গোষ্ঠী, পেশিশক্তি প্রদর্শনে বিরত থাকেনি।
পরিসংখ্যান বলছে, জানুয়ারি মাস থেকে এখনও পর্যন্ত আদানিদের শোধ করা ঋণের পরিমাণ প্রায় ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত আদানিরা অন্তত ২০০ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা) ঋণ পরিশোধের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তার মধ্যে অর্ধেকের বেশি ঋণ ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই শোধ করা হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থা।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত সপ্তাহ পর্যন্ত আদানিদের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ২৪০১ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা)। সম্প্রতি, ঋণ শোধে যে তাড়াহুড়ো করা হয়েছে, এই পরিসংখ্যানেই তা স্পষ্ট।
নগদ টাকা এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম থেকে উৎপন্ন তহবিল ভেঙেই এই ঋণ পরিশোধের বন্দোবস্ত করেছে আদানি গোষ্ঠী। তাদের মোট ৮টি সংস্থা ঋণশোধে শামিল হয়েছে।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জ়োন কমার্শিয়াল পেপারের মাধ্যমে এসবিআই মিউচুয়াল ফান্ডে ১ হাজার কোটি টাকার ঋণ শোধ করেছে। আগামী মাসে তাদের আরও হাজার কোটির ঋণ শোধ করার কথা।
বাজার থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে দেড় হাজার কোটি এবং এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে ২ হাজার কোটি টাকা পাওয়ার চুক্তি রয়েছে আদানি এন্টারপ্রাইসের। মনে করা হচ্ছে এই টাকা দিয়েও তাঁরা ঋণ শোধ করবেন।
আদানি ট্রান্সমিশন লিমিটেড এবং আদানি গ্রিন এনার্জি লিমিটেড গত ৬ ফেব্রুয়ারি সময়ের আগেই ৯ হাজার ১০০ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করেছে। এ ছাড়া, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে মেয়াদপূর্তির আগে বন্ধক রাখা শেয়ারগুলিও মুক্ত করেছে তারা।
ব্লুমবার্গের রিপোর্ট অনুযায়ী, আগামী মাসে আরও ৪ হাজার ১১৪ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করার পরিকল্পনা রয়েছে আদানি গ্রুপের। বার্কলেস, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, ডয়েশ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে এই ঋণ নেওয়া হয়েছিল।
গত ২৪ জানুয়ারি হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল। তাতে আদানিদের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ তুলেছিল আমেরিকান সংস্থা। বলা হয়েছিল, কারচুপির মাধ্যমে শেয়ারের পরিমাণ বাড়িয়েছেন গৌতম আদানি। এ ভাবে প্রতারণা করা হয়েছে লগ্নিকারীদের সঙ্গে।
হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট প্রকাশের পর থেকেই শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে। হু হু করে নেমেছে আদানিদের শেয়ারের দাম। ২৪ জানুয়ারি থেকে মঙ্গলবার ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আদানিদের শেয়ারের দর ৫৭ শতাংশ কমেছে।
আদানি পরিচালিত ১০টি সংস্থার মোট বাজার মূলধন গত ২৪ জানুয়ারি ছিল ১৯ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকা। মঙ্গলবার তার পরিমাণ ৮ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকা।
জানুয়ারিতে বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তিদের তালিকায় চতুর্থ স্থানে ছিলেন আদানি। ফোর্বসের পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে সেই তালিকায় তিনি ২৬ নম্বরে অবস্থান করছেন।
বিপর্যয়ের মুখে লগ্নিকারীদের আশ্বস্ত করতে আদানিরা দাবি করেছে, তাদের হিসাবের খাতা (ব্যালান্স শিট) যথেষ্ট পোক্ত। ব্যবসা বিস্তারের পরিকল্পনা অটুট। তার জন্য অর্থের সংস্থানও করা আছে। শেয়ারহোল্ডারদের রিটার্ন দেওয়ার বিষয়েও তারা আত্মবিশ্বাসী বলে জানায় আদানি গোষ্ঠী।
কিন্তু একের পর এক ঋণ শোধ, লগ্নিকারীদের আশ্বাসের পরেও শেয়ার বাজারে সম্পূর্ণ আস্থা অর্জন করা যায়নি। আদানিদের ক্রমাগত সম্পদহানিতেই তা স্পষ্ট বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।