Festival of Fisher's Ghost

নিজের খুনিকে ধরিয়ে দিয়েছিল ‘ভূত’! এখনও তার নামে উৎসবে মাতেন স্থানীয়েরা

বাস্তবেও এ রকম এক ‘ভূতের গল্প’ প্রচলিত, যে উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের নায়ক হ্যামলেটের বাবার মতো নিজের খুনিকে নাকি ধরিয়ে দিয়েছিল!

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
সিডনি শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৩ ১২:২৫
Share:
০১ ২০

‘ভূত’ কি শুধু ভয়ই দেখায়? সিনেমা, সাহিত্য কিন্তু অন্য কথা বলে। কখনও ‘ভূত’ ভাল বন্ধু। কখনও বা সে ভাল প্রেমিক। সে আবার বরও দেয়। আবার নিজের খুনিকেও ধরিয়ে দিয়ে যায়! বাস্তবেও এ রকম এক ‘ভূতের গল্প’ প্রচলিত, যে উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের নায়ক হ্যামলেটের বাবার মতো নিজের খুনিকে নাকি ধরিয়ে দিয়েছিল! তার পর যদিও সেই ‘ভূতের’ অস্তিত্ব নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছিল।

০২ ২০

প্রায় ২০০ বছর আগে এই ‘ভূতের’ আবির্ভাব হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ায়। এখনও সেখানকার এক অঞ্চলের মানুষ এই ‘ভূতের’ জন্য উৎসব পালন করেন। ‘ভূত’ সেজে সেখানে ঘুরে বেড়ান অনেকে।

Advertisement
০৩ ২০

এ গল্প ফ্রেডরিক ফিশারের। থুড়ি তাঁর ‘ভূতের’। ফ্রেডরিক ছিলেন ইংল্যান্ডের এক ব্যবসায়ী। একটি দোকান ছিল তাঁর। জেনে বা অজান্তে জাল নোট নিজের দোকানে রেখেছিলেন তিনি। তা লেনদেনেও দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন ফ্রেডরিক।

০৪ ২০

ফ্রেডরিককে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেয় ইংল্যান্ডের আদালত। সে সময় ইংল্যান্ডের অনেক আসামীকেই অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়ে দেওয়া হত। ফ্রেডরিককে তা-ই করা হয়েছিল।

০৫ ২০

১৮১৫ সালে ফ্রেডরিককে সাজা শোনায় আদালত। তিনি অস্ট্রেলিয়া পাড়ি দেন। ফ্রেডরিক পড়াশোনা জানতেন। অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন। বেশ কিছু জমি কিনেছিলেন তিনি। কাগজের কলও খুলেছিলেন।

০৬ ২০

১৮২২ সালে ফ্রেডরিকের ১৪ বছরের সাজার অর্ধেক মেয়াদ শেষ হয়। তার পরেই তিনি জামিনের আবেদন করেন। অস্ট্রেলিয়ায় কিছু জমিজমা কেনার অনুমতিও চান। প্রশাসন তাঁকে অনুমতি দেয়। এর পরেই ফ্রেডরিক সিডনির অদূরে ক্যাম্পবেলটাউনে বেশ কিছু জমিজমা কেনেন। চাষের জমিও কেনেন।

০৭ ২০

১৮২৫ সালে স্থানীয় এক কাঠের মিস্ত্রির সঙ্গে বিবাদে জড়ান ফ্রেডরিক। তার পর আবার তাঁকে জেলে পাঠানো হয়।

০৮ ২০

খামার, চাষের জমি নিয়ে কী করবেন ভেবে চিন্তায় পড়েন ফ্রেডরিক। প্রতিবেশী জর্জ ওরালের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁর জিম্মাতেই নিজের জমিজমা রেখে জেলে যান। জর্জকে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নিও দিয়ে যান।

০৯ ২০

সে বার ছ’মাস জেলে ছিলেন ফ্রেডরিক। জেল থেকে বেরিয়ে জর্জের কাছে নিজের জমি ফেরত চান। জর্জ সেই জমি ফেরাতে অস্বীকার করেন। দাবি করেন, ওই জমি তাঁর।

১০ ২০

১৮২৬ সালের ১৭ জুন উধাও হয়ে যান ফ্রেডরিক। জর্জ স্থানীয়দের জানান, আবার ইংল্যান্ডে ফিরে গিয়েছেন তিনি। যাওয়ার আগে নিজের সব সম্পত্তি, জমি তাঁর কাছে বিক্রি করে দিয়ে গিয়েছেন। ফ্রেডরিকের ঘোড়াও তিনি দখল করে নেন।

১১ ২০

ফ্রেডরিকের মৃত্যুর চার মাস পর স্থানীয় বাসিন্দা জন ফার্লে অদ্ভুত এক দাবি করেন। তিনি জানান, ফ্রেডরিকের ‘ভূত’ দেখেছেন। একটি সেতুর রেলিংয়ে বসেছিল ‘ভূত’টি। তিনি এ-ও দাবি করেন, ‘ভূত’টি কোনও কথা বলেনি। শুধু পিছনে মাঠের দিকে নির্দেশ করে উধাও হয়ে যান।

১২ ২০

প্রথমে জনের দাবি সকলে উড়িয়ে দেন। কিন্তু পুলিশের মনে ক্রমে সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করে। সেতুর ধারে ওই মাঠে গিয়ে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ, যে দিকে নির্দেশ করেছিল ‘ভূত’। তল্লাশির পর ওই মাঠ থেকে উদ্ধার হয় ফ্রেডরিকের দেহাবশেষ।

১৩ ২০

তদন্তে নামে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় জর্জকে। জর্জ স্বীকার করে নেন খুনের কথা। আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে। যদিও আদালতে ‘ভূতের’ তত্ত্ব কোনও প্রমাণ হিসাবে গৃহীত হয়নি।

১৪ ২০

জর্জের শাস্তির পর একটি প্রশ্ন উঠেছিল। সত্যিই কি ‘ভূত’ দেখেছিলেন জন ফার্লে। অনেকেই মনে করেন, ‘ভূতের’ গল্প তৈরি করেছিলেন খোদ ফার্লে। সম্ভবত তিনি ফ্রেডরিককে খুন হতে দেখেছিলেন। কী ভাবে বিষয়টি প্রকাশ করবেন, বুঝতে পারেননি। তাই ‘ভূতের’ গল্প ফেঁদেছিলেন।

১৫ ২০

তদন্তকারীদের একাংশের ধারণা ছিল, খুনের কোনও সাক্ষী ‘ভূত’ সেজেছিলেন। তিনি হয়তো জর্জের হাতে ফ্রেডরিককে খুন হতে দেখে ফেলেছিলেন। পুলিশকে সে কথা জানানোর সাহস পাননি। তাই ‘ভূত’ সেজে বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন।

১৬ ২০

সিডনির এক সাংবাদিক দাবি করেছিলেন, সেতুর ধারে আদতে কেউ ‘ভূত’ দেখেননি। পুলিশি তদন্ত, বা আদালতে বিচারের নথিতে তার কোনও উল্লেখই নেই। ওই সেতুর রেলিংয়ে রক্তের দাগ দেখে পুলিশই নাকি তল্লাশি শুরু করে। তার জেরেই পাশের মাঠ থেকে ফ্রেডরিকের দেহাবশেষ উদ্ধার হয়।

১৭ ২০

এমনও শোনা যায়, স্থানীয় দুই আদিবাসী পুলিশকে নাকি জানিয়েছিলেন, সেতুর নীচে বয়ে যাওয়া খালের জলে তাঁরা সাদা চামড়ার মানুষের চর্বি দেখেছিলেন। তার পরেই পুলিশ সক্রিয় হয়ে ওঠে।

১৮ ২০

যদিও শেষ পর্যন্ত ফ্রেডরিকের ‘ভূতের’ গল্প স্থানীয়দের মুখে মুখে ঘুরতে থাকে। সেই নিয়ে বহু জনশ্রুতি তৈরি হয়। সেই ‘ভূত’কে নিয়ে ক্রমে উৎসবে মাতেন ক্যাম্পবেলটাউনের বাসিন্দারা।

১৯ ২০

প্রতি বছর নভেম্বর মাসে ‘ফেস্টিভ্যাল অফ ফিশার’স গোস্ট’ পালন করেন ক্যাম্পবেলটাউনের বাসিন্দারা। সেখানে ‘ভূত’ সেজে ঘুরে বেড়ান। স্মরণ করেন ফ্রেডরিকের সেই ‘ভূত’কে।

২০ ২০

যে খালের ধারে মাঠে ফ্রেডরিকের দেহ মিলেছিল, সেই খালের নামও রাখা হয়েছিল ‘ফিশার’স গোস্ট ক্রিক’। ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement