Governor CV Ananda Bose

বোস ফিরছেন, বসে আছেন অভিষেক! পাঁচ দিনের স্নায়ুযুদ্ধে কে এগিয়ে, কে পিছিয়ে?

রাজভবন সূত্রে জানা গিয়েছে দার্জিলিং সফররত রাজ্যপাল রবিবার সন্ধ্যায় বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে রওনা দেবেন। কলকাতায় ফিরে বোস অভিষেকের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন কি না, তা যদিও এখনও স্পষ্ট নয়।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৩ ১৭:৩২
Share:
০১ ২৪

কলকাতায় ফিরছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সব ঠিক থাকলে রবিবার রাতের মধ্যেই কলকাতায় পৌঁছবেন তিনি।

০২ ২৪

রাজভবন সূত্রে জানা গিয়েছে দার্জিলিং সফররত বোস সন্ধ্যায় বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে রওনা দেবেন। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দরে অবতরণ করবে বোসের বিমান। রাত ৮টার মধ্যেই রাজভবনে পৌঁছে যাওয়ার কথা তাঁর।

Advertisement
০৩ ২৪

অন্য দিকে, রাজভবনের উত্তর ফটকের অনতিদূরে মঞ্চ বেঁধে ধর্না কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার অভিষেকের ধর্না চতুর্থ দিনে পড়েছে।

০৪ ২৪

রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের ‘বঞ্চনা’র অভিযোগ তুলে ধর্না চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যপালের দেখা না পাওয়া পর্যন্ত তিনি ধর্না কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।

০৫ ২৪

রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল এবং রাজ্যপালের মধ্যে এই নয়া সংঘাতের ক্ষেত্রটি অবশ্য প্রস্তুত হয়েছিল গত মঙ্গলবার রাতে। সংঘাতের প্রেক্ষাপট যদি তৈরি করে দিয়ে থাকে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ, তবে অনুঘটক হিসাবে কাজ করেছিল তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের জোর করে দিল্লির কৃষি ভবন থেকে আটক করে নিয়ে যাওয়া।

০৬ ২৪

১০০ দিনের কাজ করেও যাঁরা টাকা পাননি এবং কেন্দ্রীয় আবাস যোজনা প্রকল্প থেকে যারা ‘বঞ্চিত’, কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তাঁদের নিয়ে দিল্লিতে দু’দিনের কর্মসূচির আয়োজন করেছিলেন অভিষেকেরা।

০৭ ২৪

গত মঙ্গলবার কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন, রাজঘাটে ধর্নার পর কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতির সঙ্গে দেখা করতে কৃষি ভবনে গিয়েছিলেন বাংলার শাসকদলের প্রতিনিধিরা। কিন্তু অভিযোগ ওঠে যে, তাঁদের দীর্ঘ ক্ষণ বসিয়ে রাখার পর পিছনের দরজা দিয়ে মন্ত্রী ‘পালিয়ে’ গিয়েছেন। দেখা করেননি।

০৮ ২৪

রাত ৯টা নাগাদ কৃষি ভবনে অবস্থানরত তৃণমূলের প্রতিনিধি দলকে জোর করে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে দিল্লি পুলিশ। শুরু হয় তুমুল ধস্তাধস্তি। প্রায় দু’ঘণ্টা পর রাত ১১টা নাগাদ ছেড়ে দেওয়া হয় তৃণমূল নেতৃত্বকে।

০৯ ২৪

দিল্লির মুখার্জিনগর থানা থেকে ছাড়া পাওয়ার পরেই তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ অভিষেক রাজভবন অভিযানের ডাক দেন। জানান, কেন্দ্রের প্রতিনিধি হিসাবে রাজ্যপালের হাতেই ‘বঞ্চিত’দের তরফে স্মারকলিপি তুলে দিতে চান তাঁরা।

১০ ২৪

বৃহস্পতিবার দুপুর ২টোর পরে রবীন্দ্র সদন থেকে মিছিল বার করে তৃণমূল। গন্তব্য রাজভবন। মিছিলে যোগ দেন অভিষেকও।

১১ ২৪

মঙ্গলবার অভিষেক রাজভবন কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেন। বুধবার আনন্দবাজার অনলাইনই প্রথম লিখেছিল, অভিষেকের সেই ঘোষণার আগেই রাজ্যপাল কেরল চলে গিয়েছেন। বৃহস্পতিবার তাঁর কলকাতায় থাকা নিয়ে সংশয় রয়েছে। রাতে জানা যায়, তিনি কেরল থেকে দিল্লি চলে গিয়েছেন।

১২ ২৪

আরও জানা যায় যে, বৃহস্পতিবার তিনি দিল্লি থেকেই উত্তরবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি দেখতে যাবেন। সেই মতোই বৃহস্পতিবার সকালে দিল্লি থেকে বাগডোগরা পৌঁছন বোস। তার পর যান প্লাবিত এলাকা পরিদর্শনে।

১৩ ২৪

অন্য দিকে, রাজভবনে রাজ্যপালের দর্শন না পেয়ে অভিষেক রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের দফতরের সামনে দাঁড়িয়েই ঘোষণা করেন যে, বোস ফেরা না পর্যন্ত সেখানেই বসে থাকবেন তিনি।

১৪ ২৪

এই সময় তৃণমূল-রাজ্যপাল বাগ্‌যুদ্ধ অবশ্য চলতে থাকে। রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার জন্য বৃহস্পতিবার সময় চেয়েছিল তৃণমূল। অভিষেক রাজভবনের সামনের সমাবেশ থেকে জানান, বৃহস্পতিবার ইমেল মারফত রাজ্যপাল তাঁদের জানিয়েছেন, শিলিগুড়িতে গিয়ে দেখা করতে হবে।

১৫ ২৪

একেই ‘জমিদারি মানসিকতা’ বলে কটাক্ষ করেন অভিষেক। অভিষেকের কটাক্ষের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাজভবন সূত্রে রাজ্যপালের জবাব মেলে।

১৬ ২৪

তিনি বলেন, ‘‘জমিতে বা মাটির কাছাকাছি পৌঁছনো জমিদারি নয়। বরং, জমিতে না নেমে শহরের বিলাসী আস্তানায় বসে কৃষকদের নিয়ন্ত্রণ করা হল নব্যজমিদারি। রাজ্যপালের কাছে এই মাটি এবং তার মানুষ পবিত্র।’’

১৭ ২৪

রাজ্যপাল আরও বলেন যে, ‘‘গ্রামে গ্রামে পৌঁছে যাওয়ার অর্থ তৃণমূলে পৌঁছে যাওয়া। তৃণমূল কি তা হলে অন্যদের তৃণমূলে পৌঁছতে বাধা দিতে চায়? কিসের ভয় তাদের? তারা কি নিজেদের জমিদারি হারানোর ভয় পাচ্ছে?’’

১৮ ২৪

এরই মধ্যে উত্তরবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে গিয়ে একাধিক বার তৃণমূলের বিক্ষোভের মুখোমুখি হতে হয়ে বোসকে। তাঁকে সেখানে কালো পতাকা দেখানো হয়। রাজ্যপালকে ‘পর্যটক’ বলে কটাক্ষ করেন সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। তৃণমূলের তরফে রাজ্যপাল এবং কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি জমিদারি-কটাক্ষও অব্যাহত থাকে।

১৯ ২৪

শনিবার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস আলোচনার জন্য তৃণমূলকে সময় দেন। তবে কলকাতায় নয়, দার্জিলিঙের রাজভবনে। তা নিয়েও একপ্রস্ত বিতর্ক হয়।

২০ ২৪

রাজভবনের তরফে বৈঠক-বার্তা পাওয়ার পরে ধর্নামঞ্চ থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন যে, শনিবার তৃণমূলের তিন সদস্য রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করবেন উত্তরবঙ্গে গিয়েই। কিন্তু মূল প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কলকাতায় ফিরে তাঁকে দেখা করতেই হবে। এবং তা যত দিন না হচ্ছে, তত দিন তিনি ধর্না থেকে উঠবেন বলেও জানিয়ে দেন তৃণমূলের ‘সেনাপতি’।

২১ ২৪

শনিবার দার্জিলিঙের রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন তৃণমূলের তিন প্রতিনিধি— রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার এবং দুই সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মহুয়া মৈত্র।

২২ ২৪

রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কল্যাণ বলেন, ‘‘রাজ্যপালের সঙ্গে যা আলোচনা হয়েছে, তা থেকে দু’টি নির্যাস উঠে এসেছে। এক, তিনি খুব তাড়াতাড়ি কলকাতায় ফিরবেন। দুই, তিনি বলেছেন, বাংলার পাওনা নিয়ে তাঁর যা কথা বলার তিনি বলবেন। কিন্তু এর মধ্যে যদি কোনও রাজনৈতিক বাধা থাকে, তা হলে তিনি কিছু করতে পারবেন না।’’

২৩ ২৪

ধর্নামঞ্চ থেকেই শনিবার সারা দিনে রাজ্যপালের কর্মসূচি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অভিষেক। দার্জিলিঙে তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা ছাড়া বোসের আর কোনও কর্মসূচি ছিল না, এমনটা দাবি করে অভিষেক রাজ্যপালের উদ্দেশে বলেন, “আপনার যদি একটাই কর্মসূচি ছিল, তবে আপনি কলকাতায় এলেন না কেন?”

২৪ ২৪

এই সংঘাতময় পরিস্থিতিতেই কলকাতায় ফিরছেন রাজ্যপাল। সূত্রের খবর, তিনি অসুস্থ। চলতি অচলাবস্থা কাটাতে তিনি তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে শীঘ্রই আলোচনায় বসবেন কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়। রাজ্যপাল কলকাতায় ফিরে রাজ্যের শাসকদলের প্রতি আরও অনমনীয় অবস্থান নিতে পারেন— এমন সম্ভাবনার দিকটিও কেউ কেউ উড়িয়ে দিচ্ছেন না।

ছবি: নিজস্ব এবং সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement