গোটা দেশে দু’টি মাত্র শোরুম, সংস্থার কর্মী মোটে আট জন! সেই সংস্থার আইপিও বা প্রাথমিক পাবলিক অফারিং কেনার আবেদন জমা পড়ল ৪০০ গুণ। প্রস্তাবিত শেয়ারের মূল্য ছিল ১২ কোটি টাকা।
শেয়ার বাজারের সমস্ত হিসাব উল্টে অখ্যাত সংস্থার ১২ কোটি টাকার আইপিওর জন্য ৪৮০০ কোটি টাকার আবেদন জমা পড়ল।
বিএসইর তথ্য বলছে, রিসোর্সফুল অটোমোবাইলের প্রারম্ভিক আইপিওর সংখ্যা ছিল সাড়ে ১০ লক্ষ। প্রতিটি শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ১১৭ টাকা করে। কমপক্ষে ১২০০ শেয়ার কিনতে হবে এই মর্মে আইপিও ঘোষণা করে সংস্থাটি।
আইপিও হল এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে কোনও সংস্থার শেয়ার সর্বসাধারণের কাছে লেনদেনের জন্য স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়।
রিসোর্সফুল অটোমোবাইল। দিল্লির একটি বাইক কেনাবেচার ছোট সংস্থা। তাদের কর্মচারীর সংখ্যাও হাতেগোনা, মাত্র আট জন।
ব্যবসা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে বাজার থেকে ১২ কোটি টাকা তুলতে চেয়েছিল রিসোর্সফুল অটোমোবাইল। নিজেদের সংস্থার অংশ জনসাধারণের কাছে বিক্রি করার জন্য স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়।
রিসোর্সফুল অটোমোবাইলের আইপিও আনার কথা ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে সংস্থাটির শেয়ার কেনার জন্য আবেদনের হিড়িক পড়ে যায়।
মাত্র ১২ কোটি টাকা শেয়ার বিক্রির কথা ঘোষণা করলেও বাজারের অত্যুৎসাহী বিনিয়োগকারীরা রিসোর্সফুল অটোমোবাইলের হাতে প্রায় ৪৮০০ কোটি টাকা তুলে দেওয়ার আবেদন জমা পড়ে।
ছোট্ট একটি সংস্থার আইপিওর জন্য খুচরো বিনিয়োগকারীদের এই মাত্রাছাড়া উৎসাহকে খুব একটা ভাল চোখে দেখছেন না শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞেরা। উল্টে বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কার কথাই শুনিয়েছেন তাঁরা।
মাত্র ১২ কোটি টাকা শেয়ারের জন্য ৪০০ গুণ আবেদন জমা পড়ার বিষয়টিকে বুঝিয়ে দিয়েছে, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনভিজ্ঞের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এমনটাই মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞদের একাংশ। সেবিও ‘ওভারসাবস্ক্রাইবড’ এসএমই আইপিওতে ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেছে বিনিয়োগকারীদের।
বিনিয়োগের ঝুঁকি বা যে সংস্থায় বিনিয়োগ করা হচ্ছে তার পোর্টফোলিয়ো যাচাই না করে বিনিয়োগকারীরা শুধুমাত্র হুজুগে লাখ লাখ টাকার শেয়ার কিনে নিচ্ছেন। যার ফলে বাজারের স্থিতিশীলতা হারানোর সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞেরা।
এর আগে জীবন বিমা নিগম, কোল ইন্ডিয়া, পেটিএম, রিলায়্যান্স পাওয়ারের মতো সংস্থাগুলি আইপিও থেকে প্রচুর লাভ করে তাদের সংস্থার পুঁজি বৃদ্ধি করেছে। জীবন বিমা নিগম আইপিও থেকে ২১ হাজার কোটি টাকা তুলেছিল।
এই সংস্থাগুলির বিপরীতে রয়েছে রিসোর্সফুল অটোমোবাইলের মতো সংস্থা। ২০১৮ সালে তৈরি রিসোর্সফুল অটোমোবাইল একটি বেসরকারি সংস্থা যাদের নয়াদিল্লিতে দু’টি মাত্র শোরুম রয়েছে। এই সংস্থাটি সাহানি অটোমোবাইল ব্র্যান্ডের মাধ্যমে ইয়ামাহার কমিউটার বাইক, স্পোর্টস বাইক, ক্রুজ়ার এবং স্কুটারের ব্যবসা করে থাকে এই সংস্থা।
রিসোর্সফুল অটোমোবাইলের আইপিও থেকে প্রাপ্ত অর্থ নয়াদিল্লি এনসিআর অঞ্চলে নতুন শোরুম খোলার কাজে ব্যবহার করা হবে বলে জানা গিয়েছে। ২০২১ সালে রিসোর্সফুল অটোমোবাইলের বার্ষিক ব্যবসার পরিমাণ ছিল ১১ কোটি টাকা। ২০২২ সেই পরিমাণ বেড়ে ১২ কোটি হয়।
সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা গিয়েছে, ২০২৩-এ একলাফে সেই আয় বেড়ে পৌঁছয় প্রায় ১৯ কোটিতে। লাগাতার তিন বছরের লাভের এই পরিসংখ্যান দেখে বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ বাজারে ঝড় তুলে দিয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে।
কিন্তু রিসোর্সফুল অটোমোবাইলের লাভের খতিয়ান বিনিয়োগকারীদের কাছে পৌঁছলেও সংস্থার ঋণের কথা অজানাই থেকে গিয়েছিল।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য বলছে, ২০২০-২১ সালে আড়াই কোটি টাকা বাজার থেকে ঋণ নিয়েছে তারা। ক্রমে সেই ঋণের বোঝা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি টাকায়।
একটি সংস্থার লাভকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের নজর টানার যে চেষ্টা করা হয়েছে তা নিয়ে বার বার সতর্ক করেছে বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ় অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (সেবি)। তবে সেবি সরাসরি রিসোর্সফুলের নাম করে কিছু বলেনি।
বিনিয়োগকারীরা আশা করেছিল যে রিসোর্সফুল অটোমোবাইলের শেয়ারগুলি প্রিমিয়ামের তালিকাভুক্ত হবে। কিন্তু সেই আশায় জল পড়ে। ১১৭ টাকার শেয়ারটির মূল্য শেষ পর্যন্ত বেড়ে দাঁড়ায় ১২২.৮ টাকায়।