২০২২ এর ধ্বংসের পরে আবারও কেঁপে উঠল চিন। এ বার ভূমিকম্পের জেরে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে উত্তর-পশ্চিম চিনের গানসু এবং কিংহাই প্রদেশ। ইতিমধ্যেই দুই প্রদেশে মৃতের সংখ্যা ১১৬ ছুঁয়ে ফেলেছে। আহত অন্তত ৪০০।
চিনের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, রিখটার স্কেলে এই কম্পনের মাত্রা ছিল ৬.২। ধ্বংসস্তূপের নীচে যাঁরা আটকে পড়েছেন, তাঁদের উদ্ধারের কাজ শুরু করে দিয়েছেন উদ্ধারকারীরা। তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে হাজার হাজার বাড়ি।
আমেরিকার ভূসর্বেক্ষণ কেন্দ্র অনুযায়ী, কম্পনের মাত্রা ছিল ৫.৯। স্থানীয় সময় সোমবার রাত ১২টা নাগাদ কেঁপে ওঠে গানসু এবং কিংহাই প্রদেশ।
ভূকম্পের কেন্দ্রস্থল গানসু প্রদেশের রাজধানী লানঝৌ থেকে ১০০ কিমি দূরে মাটি থেকে মাত্র ১০ কিমি গভীরে। যদিও চিনের সরকারি চ্যানেল তাদের প্রতিবেদনে দাবি করেছেন, কম্পনের মাত্রা ছিল ৬.২।
আরও এক টেলিভিশন চ্যানেল সিসিটিভি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধু গানসু প্রদেশেই এখনও পর্যন্ত ১০০ জন মারা গিয়েছেন, আহত বহু। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।
অন্য দিকে, কিংহাই প্রদেশে এখনও পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত শতাধিক। দুই প্রদেশেই চলছে উদ্ধারকাজ।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বহু এলাকা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ওই দুই প্রদেশের আধিকারিকদের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
উদ্ধারকাজে কোনও ত্রুটি না রাখা এবং আহতদের সেবা শুশ্রূষায় নিজেদের সেরাটা দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, ভূমিকম্পের ফলে আতঙ্কিত হয়ে লোক জন রাস্তায় দৌড়চ্ছেন এবং নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ করছেন।
ধ্বংসস্তূপের ছবিও দেখা গিয়েছে বেশ কিছু ভিডিয়োয়। যদিও এই সব ভিডিয়োর সত্যতা যাচই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।
বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ মহল থেকে জানা গিয়েছে অগভীর এই ভূমিকম্প রীতিমত ক্ষতিগ্রস্ত করেছে যানবাহন, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বাড়িঘরকে। এমনকী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলি সবই অনেক উচ্চতায়, ইতিমধ্যেই ভাল রকমের ঠাণ্ডায় কাবু হয়ে পড়ছেন মানুষ।
উদ্ধারকারীরা তৎপরতার সঙ্গেই কাজ করছেন। খেয়াল রাখছেন যাতে এই দুর্যোগ পরবর্তী সময়েও শীতের কবলে তাঁদের আরও বড় ক্ষতি না হয়। প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহ থেকেই দেশজুড়ে শৈত্যপ্রবাহ চলছে চিনে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৬৩৮১ টি বাড়ি ইতিমধ্যেই ধসে পড়েছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই ভূমিকম্পের জন্য। প্রাদেশিক বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগের তরফ থেকে এ দিন মুখপাত্র হান সুজুন জানিয়েছেন, প্রায় ৩২ টি আফটার শক রেকর্ড করা হয়েছে, যার মধ্যে ৪.০ মাত্রার একটি কম্পনই সব থেকে জোরালো ছিল।
চিনে ভূমিকম্প অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। গত অগস্টে একটি ৫.৪ মাত্রার ভূমিকম্প পূর্ব চিনে আঘাত হানে। এই ঘটনায় ২৩ জন আহত হন এবং বেশ কিছু বহুতল ধসে পড়ে।
২০২২ সালে সিচুয়ান প্রদেশে ৬.৬ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় ১০০ জনের মৃত্যু হয়। ২০০৮ সালে সিচুয়ান প্রদেশে ৭.৯ মাত্রার ভূমিকম্পৌ প্রায় ৯০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
এর মধ্যে পাঁচ হাজারেরও বেশি ছিল শিশু। আহতের সংখ্যা ছিল প্রায় চার লক্ষ।