প্রতীকী ছবি।
অবসরের পরেও একই কেতায় বাঁচতে চান? তা হলে আপনাকে কিন্তু ভাবনাটা আজই শুরু করতে হবে। যাঁরা একটু বেশি সতর্ক তাঁরা রিটায়ারমেন্ট ক্যালকুলেটর ইত্যাদি ব্যবহার করে অঙ্কটা হয়তো ইতিমধ্যেই কষে নিয়েছেন। কারণ পাঁচ, দশ বা বিশ বছর বাদে যা হবে, তার একটা ধারণা এখনই করে নিতে পারলে, আপনি এখনই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করতে পারবেন। এই অঙ্কটা করতে গেলে অবশ্য
আপনাকে প্রথমে হিসাব কষে নিতে হবে, অবসরের আর কত দিন বাকি আছে। তার পর দেখতে হবে এই মুহূর্তে আপনার হাতে কত টাকা আছে। আর এর পরেরটা আন্দাজ। সেটা হল আজ থেকে আপনার অবসরের সময় কতটা বাকি এবং এই সময়ে গড় মুদ্রাস্ফীতির হার। এই তিনটি প্রাথমিক শর্ত খুব জরুরি হয়ে ওঠে এই অঙ্কটি কষতে।
আমরা যখন এই অঙ্কটি করি তখন অনেক সময়েই আপৎকালীন খরচের হিসাবটা মাথায় রাখি না। আপনি অবসরের জন্য যে টাকা জমানোর হিসাব করছেন সেই হিসাব থেকে এই অঙ্কটা বেশিরভাগ সময়ই বাদ চলে যায়। দেখা যায় সবই ঠিক করেছিলেন, কিন্তু মাঝখানে হঠাৎ আসতে পারে এমন বিপদ বা প্রয়োজনের কথা মাথায় রাখেননি। বিপদ যখন এল, তখন আপনার তহবিলের একটা বড় অংশ তার মোকাবিলা করতে চলে গেল। আর তার পরে টান পড়ল দৈনন্দিন খরচ মেটানোর রেস্ততে।
যেমন মেডিকাল ইমারজেন্সি। চলে আসে আগাম নোটিস না দিয়েই। বাজেট বহির্ভূত খরচ হয়ে যায় এবং সাধারণ মানুষের জমানো টাকার অনেকটা চলে যায়। রিটায়ারমেন্ট কর্পাসে টান পড়ে, ‘গ্যাপ’ তৈরি হয়ে যায় এবং অন্য লগ্নি ভাঙিয়ে হয়তো তা পুষিয়ে দিতে হয়।
তাই ক্যালকুলেটার সতর্ক হয়ে ব্যবহার করা উচিত, তহবিলে অন্তত দশ থেকে পনেরো শতাংশ বিপদ-আপদের ‘প্রভিশন’ রেখে। যে টাকা ব্যাঙ্কে রাখেন আগামী দু-চার মাস সংসার চালানোর জন্য, সে টাকা তো অবশ্যই রাখতে হবে আলাদা করে। এরই সঙ্গে অন্তত একটি কি দুটি শর্ট টার্ম ‘ডেট ফান্ড’-এ কিছু টাকা রাখুন। বিপদের সহায় হিসাবে কাজে লাগতে পারে।
সব থেকে বড় কথা, আপনার রিটায়ারমেন্ট প্ল্যানেও যেন ইমারজেন্সির সম্ভবনার ব্যাপারে সাবধানতা ভাল রকম প্রতিফলিত হয়। তার মানে, আজই আপনার টাকার একটি অংশকে পৃথক করুন, আলাদা ভাবে চিহ্নিত করুন এবং প্রয়োজন মতো ঠিক ফান্ডে সেটি রাখুন। সেখানে কোনও ধরনের লক-ইন থাকবে না, বলাই বাহুল্য।
এ ছাড়াও, প্ল্যান করার সময় মনে রাখুন যে এই চিহ্নিত করা অংশটি আপনার পোর্টফোলিয়োর ভ্যালুয়েশন বাড়ানোর জন্য নয়। এর প্রয়োজনীয়তা একেবারেই ভিন্ন। সেই জন্য এর কর্মক্ষমতাও আলাদা গোত্রের। ক্যালকুলেটার প্রয়োগ করুন বা নাই করুন, আজ যা টাকা আছে তা এ ভাবে ভেঙে দেখতে পারেন:
(ক) কয়েক মাসের সংসার খরচ— ২৫ শতাংশ
(খ) আপৎকালীন খরচ বাবদ— ১৫ শতাংশ
(গ) লগ্নি— ৬০ শতাংশ
এটি একটি উদাহরণ। সবার ক্ষেত্রে এক ভাবে প্রযোজ্য নয়। সংসারের টাকার হিসাব অথবা যা ধারাবাহিক ভাবে বা নিয়মমাফিক খরচ করেন, তা আপনার সারা মাসের চাহিদার জন্য রাখা তহবিলের ২৫ শতাংশ নাও হতে পারে। আপনি কেমন ভাবে খরচ করেন তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। একই ভাবে বাকি অংশগুলিও সবার জন্য একই ভাবে প্রযোজ্য নাও হতে পারে।
কত দিন ধরে লগ্নি করছেন, তার উপর নির্ভর করবে আপনার রিটার্ন (এবং অবশ্যই আপনার পোর্টফোলিয়োর ক্ষমতার উপর)। সেটির প্রতিটি অংশ দরকারি, তবে আপৎকালীন কারণে রাখা অংশটি বাদ দিয়ে কিছুই ভাবা উচিত হবে না।