প্রতীকী ছবি।
বার্ধক্যকালীন রোজগার বা অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের অবসরকালীন অবস্থায় নিরাপত্তা নিয়ে ভারত সরকার বরাবরই উদ্বিগ্ন। সেই কারণে বার বার বাজেটে উঠে এসেছে একাধিক প্রকল্পের কথা। যে প্রকল্পগুলি অবসরকালীন অবস্থায় দেশের নাগরিকদের আর্থিক দিক থেকে নিরাপত্তা প্রদান করতে পারবে। এই লক্ষ্যেই সব ভারতীয়, বিশেষ করে অসংগঠিত ক্ষেত্রের নাগরিকদের বীমা এবং পেনশনের দিকে বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দিয়ে ২০১৫-১৬ সালের বাজেটে তৎকালীন সরকার ‘অটল পেনশন যোজনা’ সংক্ষেপে এপিওয়াই চালু করার কথা ঘোষণা করে।
এই পেনশন প্রকল্পটি ২০১৫ সালে আগের ‘স্বাবলম্বন’ প্রকল্পের বদলে চালু করা হয়। মাসিক অবদানের ভিত্তিতে অর্থ জমা দিলে কোনও নাগরিক ৬০ বছর বয়সে পৌঁছনোর পরে তাঁকে একটি নির্দিষ্ট অর্থ প্রদানের নিশ্চয়তা দেয় এই প্রকল্প।
বলা যেতে পারে, অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের উৎসাহিত করতে এবং স্বেচ্ছায় তাঁদের অবসরের জন্য সঞ্চয় করতে ‘এপিওয়াই’ যোজনা চালু করা হয়।
অটল পেনশন যোজনা পেনশন তহবিল নিয়ন্ত্রক এবং উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (পিএফআরডিএ) দ্বারা পরিচালিত এবং নিয়ন্ত্রিত।
এপিওয়াই এর সম্পর্কে বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ তথ্য:
যেহেতু অসংগঠিত ক্ষেত্রের নাগরিকদের সাহায্যের কথা ভেবে মূলত এই প্রকল্প তৈরি করা হয়েছিল, সেহেতু অন্যান্য বাজারচলতি সরকারি যোজনার থেকে এই প্রকল্পে প্রদেয় অর্থের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম। এ ছাড়াও আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে, যেগুলি সংক্ষেপে এবং সরলভাবে আলোকপাত করা হল:
১। এপিওয়াই-এ বিনিয়োগের সুবিধা: এপিওয়াই-এর অধীনে গ্রাহকরা ৬০ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে আজীবন প্রতি মাসে সর্বনিম্ন ১০০০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০০০ টাকা পর্যন্ত পেনশন পেতে পারেন। নাগরিক কর্তৃক প্রদেয় কিস্তির উপর ভিত্তি করে পাঁচ রকমের বিকল্প মাসিক পেনশন অফার করা হয়। এগুলি হল: ১০০০ টাকা, ২০০০ টাকা, ৩০০০ টাকা, ৪০০০ টাকা এবং ৫০০০ টাকা।
২। এপিওয়াই-তে যোগদানের বয়স সীমা: এপিওয়াই-তে যোগদানের ক্ষেত্রে লগ্নিকারির বয়স হতে হবে নূন্যতম ১৮ বছর। সর্বোচ্চ ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত এই প্রকল্পের আওতায় আসা যায়।
৩। এপিওয়াই-তে যোগদানের পদ্ধতি: যে কোনও সরকারি বা বেসরকারি ব্যাঙ্ক কিংবা পোস্ট অফিসে একটি নির্দিষ্ট আবেদন পত্র পূরণের মাধ্যমে এপিওয়াই-তে যোগদান করা সম্ভব। অনলাইনেও আপনি এই আবেদন পত্রটি ডাউনলোড করতে পারেন এই লিঙ্কের মাধ্যমে https://npscra.nsdl.co.in/nsdl/forms/APY_Subscriber_Registration_Form.pdfhttps://npscra.nsdl.co.in/nsdl/forms/APY_Subscriber_Registration_Form.pdf।
তবে প্রত্যেক ব্যক্তি কেবলমাত্র একটি অ্যাকাউন্টই চালু করতে পারেন।
৪। এপিওয়াই-তে যোগদানের নথিপত্র: যোগদানের পরে প্রত্যেক গ্রাহককে একটি স্বীকৃতি স্লিপ প্রদান করা হয়, যেখানে নিশ্চিত পেনশনের পরিমাণ, অবদান বা কিস্তি প্রদানের তারিখ ও পরিমাণ এবং পিআরএএন ক্রমিক (PRAN No.) উল্লেখ করা থাকে।
৫। বিনিয়োগের পরিমাণ: আবেদনকারীর বয়সের সীমা এবং পেনশনের পরিমাণ অনুযায়ী পিএফআরডিএ কর্তৃক একটি নির্দিষ্ট মাসিক, ত্রৈমাসিক, বাৎসরিক কিস্তির মাধ্যমে বিনিয়োগ করতে পারেন। কোনও মাসে কিস্তি জমা দিতে না পারলে প্রতি ১০০ টাকা মাসিক অবদানের জন্য ১ টাকা করে জরিমানা করা হয়।
৬। মনোনীত ব্যক্তিকে সঞ্চিত পেনশন প্রদান: এপিওয়াই গ্রাহকের অবর্তমানে তাঁর মনোনীত ব্যক্তি বা নমিনি সমষ্টিগত অর্থ পাবেন।
নিম্নে পিএফআরডিএ কর্তৃক প্রদত্ত তালিকাটি দেওয়া হল:
কোন বয়সে কত টাকা দিলে কত টাকা পেনশন পাবেন
৭। আয়কর ছাড়ের সুবিধা: গ্রাহকদের এই স্কিমের প্রতি উৎসাহিত করার জন্য, ভারত সরকার এই প্রকল্পে অবদানের উপর কর ছাড়া দেয়। আয়কর আইন ১৯৬১ এর ধারা ৮০ সিসিডি (১বি) অনুযায়ী, অটল পেনশন যোজনায় বিনিয়োগ করে অতিরিক্ত ৫০,০০০ টাকার কর ছাড় দাবি করা সম্ভব।
৮। এপিওয়াই প্রকল্প থেকে প্রস্থান:
• ৬০ বছর পূর্ণ হওয়ার পর, গ্রাহকরা তাঁদের মাসিক পেনশনের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কে আবেদনপত্রের মাধ্যমে অনুরোধ জমা দেবেন।
• এই প্রকল্পে ৬০ বছর বয়সের আগে প্রস্থান করার অনুমতি দেওয়া হয় না। তবে ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে এটি অনুমোদিত। যেমন এপিওয়াই গ্রাহকের মৃত্যুর হলে, জটিল রোগে আক্রান্ত হলে প্রস্থান করা যায়।