প্রতীকী ছবি।
ভারতের শেয়ার বাজার মূলত দু’টি এক্সচেঞ্জের উপরে কাজ করে। এক হল এনএসই বা ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ এবং অপরটি বল বিএসই বা বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ। এই দুই এক্সচেঞ্জে সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার সংস্থা নাথিভুক্ত আছে। কোম্পানিগুলির আচরণ অনুযায়ী এগুলিকে বেশ কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। সেই রকম একটি শ্রেণি হল নিফটি ফিফটি।
ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ অব ইন্ডিয়া (এনএসই)-র অধীনস্থ এনএসই ইন্ডিসেস লিমিটেডের মালিকানাধীন হল নিফটি ফিফটি। এই কোম্পানি নিফটি ফিফটি ছাড়া একশোটিরও বেশি ইকুইটি ইনডেক্স পরিচালনা করে। নিফটি ফিফটি হল পঞ্চাশটি বৃহৎ ক্যাপিটাল স্টকের একটি সমষ্টি। এটি ফ্রি ফ্লোট মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। ১৯৯৬ সালের ১ এপ্রিল এটিকে ভারতীয় স্টক এক্সচেঞ্জের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। সেনসেক্সের মতো এটি একটি সাধারণ সূচক, যার মাধ্যমে ভারতীয় অর্থনীতি ব্যবস্থার ১৩টি ক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত ৫০টি সক্রিয় সংস্থার বাজারভিত্তিক কার্যক্ষমতা এক সঙ্গে নজর রাখা সম্ভব।
এখন প্রশ্ন হল এই ফ্রি ফ্লোট মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন কী? সহজ উত্তরে বলা যায়, একটি সংস্থার যতগুলি শেয়ার সাধারণ মানুষের কাছে বেচাকেনার জন্য রয়েছে তার মোট মূল্যকে ফ্রি ফ্লোট মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন বলে। ফ্রি ফ্লোট মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন বার করার সূত্র হল ফ্রি ফ্লোট মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন = ফ্রি ফ্লোট শেয়ারের মোট সংখ্যা × একটি শেয়ারের দাম।
উদাহরন স্বরূপ, ধরা যাক একটি সংস্থার মোট হাজারটি শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে ৪০০ শেয়ার বাজারে বেচাকেনার জন্য রয়েছে এবং ৬০০ শেয়ার সংস্থা নিজের কাছে ধরে রেখেছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থার একটি শেয়ারের মুল্য যদি ২০ টাকা ধরা হয়, তা হলে সেই কোম্পানির ফ্রি ফ্লোট শেয়ারের মোট সংখ্যা হল ৪০০। অন্য দিকে সেই কোম্পানি ফ্রি ফ্লোট মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন ৪০০ × ২০ = ৮০০০।
প্রতি বছর মার্চ এবং সেপ্টেম্বর মাসে নিফটি পুনর্গঠিত হয়। প্রতি ছ’মাস অন্তর এই পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোম্পানিগুলির স্টকের গুণমান যাচাই করে নতুন কোনও সংস্থাকে যুক্ত করা বা বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তবে এর কিছু সুবিধা ও অসুবিধাও রয়েছে।
নিফটি ফিফটিতে বিনিয়োগ করতে হলে কোনও বিনিয়োগকারীকে সর্বপ্রথম ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে এবং একই সঙ্গে স্টকব্রোকারের সঙ্গে ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। নিফটি ইনডেক্স ফান্ডে বিনিয়োগ করার সব থেকে বড় সুবিধা হল আপনি প্রতি মাসে আপনার বাজেট অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে পঞ্চাশটি নামী কোম্পানির শেয়ারের অংশীদার হতে পারবেন। সেখানে হয়ত এই সব সংস্থাগুলির আলাদা আলাদা শেয়ারের দাম এত বেশি যে তা আপনার সাধ্যের মধ্যে নাও থাকতে পারে।
তবে এখানে ফান্ড ম্যানেজমেন্টের সরাসরি হস্তক্ষেপ না থাকায় সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীকে ন্যূনতম মেইনটেনেন্স চার্জ বহন করতে হবে। নিফটি ফিফটিতে বিনিয়োগ করার প্রক্রিয়া খুব সহজ। অর্থাৎ কোনও বিনিয়োগকারী তাঁর সাধ্য মতো বা ইচ্ছে মতো টাকার অঙ্ক বাড়াতে কিংবা কমাতে পারবেন। অথচ এই সুবিধা কিন্তু বেশির ভাগ ফান্ডেই উপলব্ধ নেই।
তবে এখানে বিনিয়োগের একটি অসুবিধা হল এখানে ২-৩ বছরের জন্য বিনিয়োগ করলে তেমন ফল পাওয়া যায় না। দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নিফটি ফিফটি এক কথায় অতুলনীয়। সে ক্ষেত্রে পরবর্তীকালে দারুণ রিটার্ন পাওয়া যায়। বাৎসরিক আনুমানিক রিটার্ন ১৩ শতাংশ। যদিও এই রিটার্নের পরিমাণ সম্পূর্ণ ভাবে বাজার নির্ভর।