দেশ হোক বা বিদেশ, শেয়ার বাজার বিষয়টি যথেষ্ট জটিল। কথায় আছে বাজারের বাইশ গজে ঠিক মতো খেলতে পারলে স্কোর হবে দারুন। তবে খানিক ভুলচুক হলেই সোজা প্যাভিলিয়নে ফেরত। অর্থাৎ বাজার বুঝে চললে বিনিয়োগের তুলনায় নজরকাড়া রিটার্ন পাওয়া যাবে। তবে একটু ভুল হলেই লোকসানের ভার বইতে হবে। তবে সব শেয়ার বাজারই কি এক?
ভারতের শেয়ার বাজারের মতো আমেরিকারও শেয়ার বাজার রয়েছে। আমেরিকার শেয়ার বাজার সম্পর্কে কথা বললেই সাধারণ ভাবে যা মনে আসে তা হল নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ এবং নাসডাক। এই দু’টি এক্সচেঞ্জ উত্তর আমেরিকা-সহ সারা বিশ্বের বেশির ভাগ স্টক ট্রেডিংয়ের জন্য কাজে লাগে। এই এক্সচেঞ্জগুলির, কোনও বিনিয়োগকারীর কাছে থাকা সূচকের ভিত্তিতে স্টক মার্কেটের কর্মক্ষমতা পরিমাপ করা হয়।
আমেরিকান স্টকগুলির জন্য তিনটি প্রধান সূচক হল ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ, এসএন্ডপি ৫০০ এবং নাসডাক কম্পোজিট। যেমন ভারতের সেনসেক্স এবং নিফটি ফিফটি। ডাও ইউএস এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ৩০টি বড়, ব্লু-চিপ কোম্পানির হাল-হকিকতের খেয়াল রাখে। এসএন্ডপি ৫০০-এ বিভিন্ন সেক্টরের ৫০০টি বড় কোম্পানি রয়েছে এবং নাসডাক কম্পোজিটে নাসডাক-এর তালিকাভুক্ত স্টকগুলির মূল্যকে প্রতিনিধিত্ব করা হয়।
বাজার সূচক স্টকগুলি একটি গ্রুপের কার্যকারিতার ঘোরাফেরাকে পর্যবেক্ষণ করে, যা সমগ্র বাজারকে বা বাজারের একটি নির্দিষ্ট সেক্টর, যেমন প্রযুক্তি বা খুচরো কোম্পানি ইত্যাদি ক্ষেত্রেকে প্রতিনিধিত্ব করে। শেয়ার মার্কেটেরে ঘুঘু খেলোয়াড়দের বেশির ভাগই এসএন্ডপি ৫০০, নাসডাক কম্পোজিট এবং ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।
যদিও আমেরিকার স্টক এক্সচেঞ্জের পথ চলার শুরুর গল্প বেশ পুরনো। আমস্টারডামে ১৬১১ সালে প্রথম স্টক মার্কেট শুরু হয়। আমেরিকা সতেরোর শতকের শেষ পর্যন্ত স্টক মার্কেটের কোনও ক্ষেত্রে প্রবেশ করেনি। তখনই বণিকদের একটি ছোট দল বাটনউড ট্রি একটি চুক্তি করে। পুরুষদের এই দলটি প্রতিনিয়ত স্টক এবং বন্ড কেনা এবং তা বিক্রি করত। সেই সংস্থাকেই আমরা আজকে নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ (এনওয়াইএসই) নামে চিনি।
বাটনউড ব্যবসায়ীদের আমেরিকার বৃহত্তম স্টক এক্সচেঞ্জের উদ্ভাবক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ফিলাডেলফিয়া স্টক এক্সচেঞ্জ ছিল আমেরিকার প্রথম স্টক এক্সচেঞ্জ। ১৭৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত ফিলাডেলফিয়া স্টক এক্সচেঞ্জ বিশ্ব অর্থনীতিতে শহরের শীর্ষ স্থানে গভীর ভাবে প্রভাব ফেলেছিল। যার মধ্যে আমেরিকার আর্থিক খাতগুলির বিকাশ এবং পশ্চিমে এর সম্প্রসারণের উপরেও প্রভাব পড়েছিল।
নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ বিকশিত হতে কয়েক দশক সময় লেগেছে। বাটনউড ব্যবসায়ীরা নিউ ইয়র্ক স্টক অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড তৈরি করার জন্য ১৮১৭ সালে ফিলাডেলফিয়া মার্চেন্টস এক্সচেঞ্জ পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শন করেছিলেন যা ফিলাডেলফিয়া মার্চেন্টস এক্সচেঞ্জের আদলে তৈরি হয়েছিল।
এক্সচেঞ্জ অ্যাক্সেস পেতে সদস্যদের একটি ড্রেস কোড মেনে চলতে হয়। এ ছাড়াও তাদের একটি ফি দিতে হয়েছিল। ১৮৩৭ সালে ২৫ ডলার থেকে বেড়ে হয়েছিল ১০০ ডলার।
মুলত আমেরিকার স্টক নিয়ন্ত্রণ করে এসইসি (সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন)। ১৯৩৪ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি একটি আধা-বিচারিক ক্ষমতা সহ একটি স্বাধীন সংস্থা। এতে প্রেসিডেন্ট-নিযুক্ত পাঁচ জন কমিশনার থাকেন। যাঁদের প্রত্যেকের মেয়াদ পাঁচ বছর। একই রাজনৈতিক দল থেকে তিন জনের বেশি কমিশনার বাছাই করা হয় না। প্রেসিডেন্ট এক জন কমিশনারকে এসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত করতে পারেন।
আমেরিকার স্টক মুলত চার প্রকার। একই রাজনৈতিক দল থেকে তিন জনের বেশি কমিশনার বাছাই করা হয় না। রাষ্ট্রপতি এক জন কমিশনারকে এসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত করেন। ভারতের মতো আমেরিকার চারটি স্টক হল— মেগা ক্যাপ, লার্জ ক্যাপ, মিড ক্যাপ ও স্মল ক্যাপ।
মেগা ক্যাপ স্টকগুলি মার্কেট ক্যাপের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহত্তম সংস্থাগুলিকে প্রতিনিধিত্ব করে। সাধারণত, মেগা-ক্যাপ কোম্পানিগুলির মার্কেট ক্যাপ ২০ হাজার কোটি ডলারের উপরে থাকে। অন্য দিকে লার্জ-ক্যাপ স্টকগুলির মার্কেট ক্যাপ এক হাজার কোটি ডলারের উপরে। লার্জ-ক্যাপ স্টক, স্থিতিশীল রাজস্ব এবং লাভ-সহ প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি।
মিডক্যাপ কোম্পানিগুলোর মার্কেট ক্যাপ সাধারণত দুশো কোটি ডলার থেকে এক হাজার কোটি ডলারের মধ্যে হয়। মিড-ক্যাপগুলি আসলে ভবিষ্যতের উচ্চ-সম্ভাব্য কোম্পানি যেগুলি আয় এবং মুনাফার বৃদ্ধি করে। মিডক্যাপ স্টকগুলি মেগা-ক্যাপ এবং লার্জ-ক্যাপ স্টকগুলির তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ এবং একটি মাঝারি ঝুঁকির ক্ষুধা-সহ বিনিয়োগকারীদের জন্য উপযুক্ত৷
স্মল-ক্যাপ স্টকগুলির বাজার মূলধন ৩০ কোটি ডলার থেকে দুশো কোটি ডলারের মধ্যে। ছোট-ক্যাপ স্টকগুলি বৃদ্ধির জন্য একটি উচ্চ সম্ভাবনা থাকে তবে অন্যান্য বিভাগের তুলনায় বেশি ঝুঁকি বহন করে।