শেয়ার বাজার। যেখানে দেশের বেসরকারি সংস্থাগুলি স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে তাদের শেয়ার কেনাবেচা করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ ধরা যাক, আপনি কোনও সংস্থার শেয়ার কিনলে আপনি হলেন সেই সংস্থার শেয়ার হোল্ডার। এখানে আপনি যখন তখন আপনার শেয়ার বিক্রি করতেও পারবেন।
স্টক এবং শেয়ারের মধ্যে যদিও তেমন কোনও পার্থক্য দেখা যায় না। কিন্তু শেয়ার বলতে নির্দিষ্ট কোনও সংস্থার মালিকানার ক্ষুদ্র অংশকে বোঝায়। আর স্টক বলতে বোঝায় এক জন শেয়ারহোল্ডারের ধরে রাখা সমস্ত শেয়ারকে। মূলত সংস্থাগুলি শেয়ার বাজারে মুখ্য এবং গৌণ বাজারের মাধ্যমে তাদের শেয়ার কেনাবেচা করে থাকে।
শেয়ার বাজার এমন একটি স্থান যেখানে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা তাদের শেয়ার কেনাবেচা করে। একে পুঁজি বাজারও বলা হয়। বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতির ফলে শেয়ার বাজারে বড়সড় ধস নেমেছে। বিপুল পরিমাণ পুঁজি খুইয়েছেন বহু বিনিয়োগকারী। যদিও শেয়ার বাজারে এমন ধস নতুন নয়। অতীতে বহু বার মুখ থুবড়ে পড়েছে বাজার। এক ঝলকে দেখে নিন বাজার ধসে পড়ার কয়েকটি ঘটনা।
১৯০৭ সালের ব্রোকার্স প্যানিকের ঘটনা হল শেয়ার বাজারের পতনের একটি বড় ঘটনা। নাইকব্রোকার ট্রাস্টের শেয়ারে হেরফের করার পর নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে স্টকের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ পড়ে গিয়েছিল।
১৯২৯ সালে বড়সড় পতন হয়েছিল শেয়ার বাজারে। ১০ বছরের আর্থিক বৃদ্ধি রোরিং টোয়েন্টি নামে জনপ্রিয়। যখন আমেরিকার অর্থ ব্যবস্থা ভাল জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল, ঠিক সেই সময়েই এর গতিমুখ ধীরে ধীরে বদলাতে থাকে। আর এখান থেকেই সমস্যার সূত্রপাত হয়। ফলস্বরূপ ২৫ অক্টোবর ১৯২৯ সালে ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজে প্রায় ১২ শতাংশ পতন হয়। এই দিনটিকে ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ও বলা হয়ে থাকে। এই ঘটনা সমাজে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলেছিল।
শেয়ার বাজারে আরও একটি পতনের ঘটনা ঘটেছিল ১৯৮৭ সালের ১৯ অক্টোবর। ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজে ২২ শতাংশের বেশি পতন হয়েছিল। বিনিয়োগকারীদের মতে এক দিনে এটি সব থেকে বড় পতন। এই দিনটি ‘ব্ল্যাক মানডে’ নামেও পরিচিত। স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘটনার পরের দিনই আমেরিকার বাজারে এক বিশাল পরিবর্তন হয়।
২০০৭ সালে অক্টোবর মাসে আরেকটি বড় পতন দেখা দেয় শেয়ার বাজারে। আমেরিকার প্রায় অনেক সংস্থার অবস্থার অবনতি লক্ষ্য করা যায়। শেয়ারের দামের ওপরেও এর প্রভাব পড়ে। ২০০৯ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাজারের সেই পতন জারি ছিল। আমেরিকার সূচক প্রায় ৫০ শতাংশ নীচে নেমে গিয়েছিল।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে বিশ্ব জুড়ে করোনাভাইরাস হানায় শেয়ার বাজার অনেকটাই নীচে নেমে যায়। বহু বছর পরে এমন অতিমারির আক্রমণ শেয়ার বাজারকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। যার প্রভাব পড়েছিল গোটা বিশ্বের অর্থ ব্যবস্থায়।
অন্য দিকে সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আঁচেও অনেকটাই পতন হয় শেয়ার বাজারের। যুদ্ধের প্রথম দিন বাজার খোলার কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেনসেক্স ১৬০১ পয়েন্ট কমে ৫২,৭৩২-এ নেমে যায়। একই সময়ে নিফটি ৪৪৭ পয়েন্ট কমে ১৫৭৯৮-এ নেমে যায়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝে বিগত কয়েক দিন ধরেই উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে শেয়ার বাজারের গ্রাফ। এই আবহে ৭ মার্চ, সোমবার, সপ্তাহের প্রথম ব্যবসায়িক দিনে বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের ৩০-শেয়ারের কী সূচক সেনসেক্স ৫৩,১৭২.৫১ স্তরে ট্রেড শুরু করে। প্রি-মার্কেট লেনদেন চলাকালীন সকাল সওয়া ৯টায় এক ধাক্কায় ১১৬১.৩ পয়েন্ট কমে যায় সেনসেক্স। অন্য দিকে, নিফটিও ওই দিন লাল চিহ্নে লেনদেন শুরু করে। এর আগে শেয়ার বাজারে শীর্ষ ১০টি কোম্পানির মধ্যে সাতটির বাজার মূলধন ২.১১ লাখ কোটি টাকা কমে যায়।
বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীরা মার্চের মাত্র তিন ব্যবসায়িক দিনে (২ মার্চ থেকে ৪ মার্চ) ভারতীয় শেয়ার বাজার থেকে ১৭,৫৩৭ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন। ইউক্রেন সঙ্কটের কারণে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা এবং অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে ব্যবসায়িক মনোভাবের উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। তা ছাড়াও ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীরা ভারতীয় শেয়ার বাজার থেকে লগ্নি প্রত্যাহার করছে।