প্রতীকী ছবি।
দুর্ঘটনা কখনও আগাম বার্তা দিয়ে বা সাইরেন বাজিয়ে আসে না। আচমকা হানা দিয়ে সুস্থ পরিস্থিতিকে তছনছ করে দেয়। যে কোনও সময়, যে কোনও জায়গায় যখন আপনি কোনও ভাবেই প্রস্তুত থাকেন না। সহজ কোনও প্রেক্ষাপট নিমেষে জটিল হয়ে ওঠে আচমকা ঘটে যাওয়া কোনও দুর্ঘটনায়। কেন্দ্রীয় সরকারের একটি পরিসংখ্যান বলছে প্রতি দিন গড়ে ছোট বড় মিলিয়ে সারা দেশে ১২৭৫টিরও বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। যার মধ্যে শতকরা প্রায় ৩৫ শতাংশ দুর্ঘটনাই গুরুতর চোট-আঘাতের দিকে পরিচালিত করে। সেই কারণেই আগাম দুর্ঘটনার কথা ভেবে সর্বদা নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হয়। যাতে দুর্ঘটনা আঘাত হানলেও সেই ক্ষতে খানিকটা হলেও মলমের প্রলেপ দেওয়া যায়। আর্থিক ও মানসিক দুই ক্ষতেই। এই মলমের কাজই করে বিমা। আরও ভাল ভাবে বললে দুর্ঘটনা বিমা।
মনে রাখবেন, এটি এমন একটি বিমা যা শুধুমাত্র নিজেকেই নয় বিমাকৃত ব্যক্তির পরিবারের জন্যও সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বদলে চলা সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার সময় প্রত্যেক ব্যক্তিরই একটি দুর্ঘটনা বিমা থাকা জরুরি। দুর্ঘটনাজনিত কারণে তৈরি হওয়া জরুরি সময়ে যা সেই ব্যক্তি ও তাঁর উপরে নির্ভর থাকা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আর্থিক ও মানসিক দিক থেকে রক্ষা করে। এই ধরনের বিমার অধীনে থাকা ব্যক্তির দুর্ঘটনার কারণে কোনও অঙ্গহানি হলে বা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হলে সেই ব্যক্তি কিংবা সেই ব্যক্তির মৃত্যুর ক্ষেত্রে তাঁর পরিবার সংশ্লিষ্ট বিমা প্রতিষ্ঠানের থেকে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা পেয়ে থাকেন।
তা ছাড়াও ব্যক্তিগত দুর্ঘটনা বিমা পরিকল্পনার ক্ষেত্রে অন্যান্য বিশেষ সুবিধা রয়েছে। ভারতে ব্যক্তিগত দুর্ঘটনা বিমা দুই ধরনের হয়ে থাকে। এই দু’টি হল ব্যক্তিগত দুর্ঘটনা বিমা (স্বতন্ত্র ব্যক্তি) এবং ব্যক্তিগত দুর্ঘটনা বিমা (দলগত বা সমষ্টিগত)।
ব্যক্তিগত দুর্ঘটনা বিমার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নানান ধরনের ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত দুর্ঘটনার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন। এই দুর্ঘটনার আকার বিমাকৃত ব্যক্তির স্বল্পমেয়াদি আঘাত থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
অন্য দিকে ব্যক্তিগত বিমার ঠিক বিপরীত হল দলগত বা সমষ্টিগত বিমা। যেখানে কোনও একক ব্যক্তির পরিবর্তে এক দল লোকের নামে বিমা করা থাকে। এই ধরনের বিমা সাধারণত ছোট সংস্থা কর্মীদের জন্য নিয়ে থাকে। যা কর্মীদের অতিরিক্ত সুবিধার তালিকার মধ্যে গণ্য করা হয়। এর দামও তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই কম। তবে, ব্যক্তিগত দুর্ঘটনা বিমার মতো এক ঝাঁক সুযোগ-সুবিধা এই ধরনের বিমার অন্তর্ভূক্ত নয়।
ব্যক্তিগত দুর্ঘটনা বিমার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি সুবিধা রয়েছে। সিগুলি হল—
১। এই ধরনের বিমা আপনার অবর্তমানে পরিবারের সদস্যদের আর্থিক দিক থেকে সুরক্ষিত রাখে
২। কোনও রকম মেডিক্যাল টেস্ট বা তেমন কোনও নথির প্রয়োজন হয় না
৩। অত্যন্ত কম খরচে মোটা অঙ্কের টাকার বিমা পাওয়া যায়
৪। বিশ্বের যে কোনও জায়গায় দুর্ঘটনা হলেও বিমার টাকা পেতে অসুবিধা হয় না
৫। দাবি করার প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ
৬। আত্মহত্যার ক্ষেত্রে এই ধরনের বিমা প্রযোজ্য নয়
যদিও আয়কর আইন অনুসারে দুর্ঘটনা বিমার ক্ষেত্রে ধারা ৮০সি অনুযায়ী কোনও রকম কর ছাড় বা সুবিধা পাওয়া যায় না। তবে বিমার কারণে পাওয়া অর্থ বিনিয়োগ করলে এবং সেখান থেকে সুদ পেলে পাওয়া গেলে, সেই অর্থের উপরে টিডিএস কাটে বা কর ছাড় পাওয়া যায়।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যে, কোনও ব্যক্তির কাছে দু’চাকা বা চার চাকার গাড়ি থাকলে সেই ব্যক্তির অন্তত ১৫ লক্ষ টাকা মূল্যের দুর্ঘটনা বিমা থাকা আবশ্যিক। না হলে গাড়ির বিমা কেনার সঙ্গে সঙ্গেও দুর্ঘটনা বিমা কেনা যায়। বেশ কয়েক বছর আগে সরকারের তরফ থেকে এই নিয়মটি চালু করা হয়েছে।
মনে রাখবেন, প্রত্যেক মানুষের জীবনই অত্যন্ত মূল্যবান। তাই নিশ্চিত করুন সেই জীবনকে বিভিন্ন ভাবে সুরক্ষিত রাখতে। দুর্ঘটনা বিমা সেই সুরক্ষা কবচগুলির মধ্যে একটি।