প্রতীকী ছবি।
প্রত্যেকের জীবনেই স্বাস্থ্যবিমা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে কোনও স্বাস্থ্যজনিত সঙ্কটকালীন অবস্থায় পরিত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় এই ধরনের বিমা। হাসপাতাল খরচ, ওষুধের খরচ থেকে আনুষাঙ্গিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা, সব কিছুরই টাকা পাওয়া যায় স্বাস্থ্যবিমা থেকে। তবে কোনও বিমা শুধুমাত্র কিনে রাখলেই তো হল না। কী ভাবে প্রয়োজনের সময় সেই স্বাস্থ্যবিমা দাবি করবেন তা জেনে রাখা জরুরি।
যে কোনও স্বাস্থ্যবিমার ক্ষেত্রেই দাবি দু’ভাবে হয়ে থাকে। প্রথমত, ক্যাশলেস। দ্বিতীয়ত, রিইমবার্সমেন্ট প্রক্রিয়া। তবে এই দুই পদ্ধতিই কিছু নিয়ম মেনে করতে হয়।
ক্যাশলেস বা নগদহীন পদ্ধতি
যে কোনও ইন্সিওরেন্স বা বিমা সংস্থার সঙ্গে কিছু হাসপাতাল বা নার্সিংহোম সংযুক্ত থাকে। যেগুলিকে ইন্সিওরেন্সের ভাষায় বলা হয়, ‘নেটওয়ার্ক হসপিটাল’। যে সংস্থায় আপনার স্বাস্থ্যবিমা কেনা রয়েছে, সেই সংস্থার নেটওয়ার্ক হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে ভর্তি হলে, চিকিৎসা খরচ বাবদ তেমন কোনও নগদ দিতে হয় না। তবে সে ক্ষেত্রে অঙ্কটা যে একদম শূন্য হয়, তা কিন্তু না। চিকিৎসাজনিত বিল ছাড়া কয়েকটি নন-মেডিক্যাল রশিদ বাবদ অত্যন্ত অল্প কিছু পরিমাণ টাকা জমা দিতে হয়। এই ধরনের স্বাস্থ্যবিমার আওতায় চিকিৎসা করা অত্যন্ত সহজ।
প্রতীকী ছবি।
ক্যাশলেস বা নগদহীন দাবির ক্ষেত্রে যে যে বিষয়গুলি মনে রাখতে হবে—
১। বিভিন্ন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ধরনের নিয়ম থাকে। যেমন কোনও হাসপাতালে কোনও একক ব্যক্তির ক্ষেত্রে ক্যাশলেস ক্লেমের ধরন এক রকম হয়। আবার কর্পোরেট গ্রুপ পলিসির ক্ষেত্রে ক্লেমের ধরন আলাদা হয়। তাই আগে ভাগেই জেনে রাখতে হবে, পলিসির ধরন অনুযায়ী দাবির প্রক্রিয়া ঠিক কী।
২। রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের ক্লেম বিভাগে বেশ কিছু নথি জমা করতে হয়। যেমন, কেওয়াইসি, পলিসি কপি, চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ইত্যাদি।
৩। পলিসি করার সময়েই জেনে নিন আপনার পলিসিতে কোনও ক্যাপিং ক্লজ বা কো-পে ক্লজ আছে কি না। এই ক্যাপিং ক্লজ বা কো-পে ক্লজের অর্থ হল, চিকিৎসা বাবদ খরচের একটি নির্দিষ্ট শতাংশ অর্থ বিমা সংস্থা আপনাকে দেবে। বাকি টাকা আপনাকে নিজে থেকে দিতে হবে। যদি এমন কোনও শর্ত থাকে তা হলে প্রথমেই জেনে নিন আপনাকে ঠিক কত পরিমাণ অর্থ জমা দিতে হবে।
৪। বিমা সংস্থার সঙ্গে যে হাসপাতাল বা নার্সিংহোমগুলির সংযোগ থাকে, সেগুলি চুক্তির ভিত্তিতে মাঝে মধ্যেই পরিবর্তিত হয়। তাই রোগী ভর্তির আগে থেকে খোঁজ নিয়ে নিন যে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল বা নার্সিংহোমটি ওই সংস্থার নেটওয়ার্ক হাসপাতালের অন্তর্ভূক্ত কি না।
৫। অনেক সময়েই ক্লেমের নথি পত্র দেখে এবং দাবির জন্য চূড়ান্ত অনুমোদন আসতে দেরি হয়। অথচ এর মধ্যেই রোগীর শরীরের শারীরিক স্থিতি অনুযায়ী সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা করা বা অপারেশন করার প্রয়োজন হতে পারে। সেই সময়ে হাসপাতালকে কিন্তু বেশ কিছু নগদ অর্থ অগ্রিম জমা দিতে হয়। যদিও পরবর্তী সময়ে সেই টাকা ফেরত পাওয়া যায়।
৬। গোটা প্রক্রিয়াটা ক্যাশলেস হলেও হাসপাতালে ভর্তির আগে ও পরে কিছু খরচ হয়। সেই টাকা ফেরত পেতে পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয় নথি-সহ ফের আবেদন করতে হয়।
রিইমবার্সমেন্ট পদ্ধতি
অনেক সময় কোনও কারণে যদি বিমা সংস্থার নেটওয়ার্ক হাসপাতালে ভর্তি হওয়া সম্ভব না হয়, তখন যে হাসপাতালে বা নার্সিংহোমে তিনি ভর্তি হয়েছেন, সেখানে চিকিৎসা সম্পূর্ণ করে চিকিৎসার যাবতীয় বিল, রশিদ, নথি, প্রেশক্রিপশন এবং মেডিক্যাল টেস্ট রিপোর্ট ইত্যাদি ওই সংস্থার কাছে জমা করতে হয়। এই প্রয়োজনীয় নথিগুলি দেখে বিশ্লেষণ করে, ওই সংস্থা বিমা গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেয়।
রিইমবার্সমেন্ট পদ্ধতির ক্ষেত্রে যে যে বিষয়গুলি মনে রাখতে হবে—
১। হাসপাতালে ভর্তির আগে থেকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে ওষুধ বাবদ বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাবদ পুরো খরচই রিইমবার্সমেন্ট পদ্ধতিতে আবেদন করা যায়।
২। যদি আগে থেকে পরিকল্পনা করে কোনও চিকিৎসা করা হয়, তা হলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার অন্তত ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা আগে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের পলিসি বিভাগে গিয়ে সমস্ত নথি জমা দিয়ে আসতে হয়। অন্য দিকে হঠাৎ করে কোনও জরুরি কারণে ভর্তি হতে হলে, ভর্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বিমা সংস্থাকে ভর্তির কথা জানাতে হবে।
মনে রাখবেন বিমা যেমন সঙ্কটকালীন অবস্থায় সাহায্য করে, তেমনই বিমা করার সময়ে সঠিক তথ্য না দিলে বা কোনও তথ্য গোপন করলে পরবর্তী সময়ে বিমার প্রদেয় অর্থ পেতে সমস্যা হতে পারে। এবং অবশ্যই বিমার করার আগে বিমার সমস্ত নথি ও তথ্য পড়ে নিন।