প্রতীকী ছবি।
কথায় আছে যত ক্ষণ শ্বাস, তত ক্ষণ আশ। বেঁচে থাকলে নিজের মতো জীবন উপভোগ করা যাবে । কোনও না কোনও ভাবে উদযাপন হবে প্রতি মুহূর্তের। কিন্তু মৃত্যুর পর? আপনার পরিবারের কী হবে? আসন্ন ভবিষ্যতকে কী ভাবে সুরক্ষিত রাখবে আপনার পরিবার? কী ভাবে আসবে প্রয়োজনীয় খরচ? এই সব প্রশ্নের উত্তর একটাই— টার্ম ইন্সিওরেন্স।
খুব সহজে, বলা যেতে পারে, টার্ম ইন্সিওরেন্স হল এক প্রকার লাইফ ইন্সিওরেন্স যেখানে একটি নির্দিষ্ট সময় কালের মধ্যে লাইফ কভারেজ পাওয়া যায়। এর প্রিমিয়ামও অত্যন্ত কম। আবার লাইফ কভারেজের অঙ্কটাও অনেকটা বেশি।
অন্যান্য বিমার থেকে টার্ম ইন্সিওরেন্স অনেকটাই আলাদা। প্রথমত, এটি একটি খাঁটি জীবনবিমা। যার অর্থ এই ধরনের বিমায় শুধুমাত্র বিমা ধারকের একটি নির্দিষ্ট বয়সের আগে মৃত্যুর ক্ষেত্রেই তাঁর নমিনি বিমাতে উল্লিখিত অর্থ পেয়ে থাকেন। উদাহরণস্বরূপ ধরা যাক বিমা ধারকের বর্তমান বয়স ২৫ বছর। তিনি টার্ম ইন্সিওরেন্স নিয়েছেন ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এবং এক কোটি টাকা মূল্যের। এখন যদি ৬০ বছর বয়স এর আগে বিমা ধারকের কোনও স্বাভাবিক কারণে, দুর্ঘটনাজনিত কারণে বা শারীরিক অসুস্থতার কারণে মৃত্যু হয়, তবে তাঁর নমিনি বিমাতে উল্লিখিত অর্থ দাবি করতে পারবেন। কিন্তু বিমা ধারকের মৃত্যু যদি ৬০ বছরের পরে হয় তা হলে কোনও অনুদান পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ এই বিমা পরিবারের সেই সদস্যেরই নেওয়া উচিত যাঁর আয়ের উপরে গোটা পরিবার নির্ভরশীল।
এই ধরনের বিমা শুধুমাত্র বিমা গ্রহিতার মৃত্যুর পরেই দাবি করা যায়। এবং সেই দাবি করতে পারেন নমিনি। নমিনি চাইলে পুরো টাকাটা একসঙ্গে তুলতে পারেন বা মাসিক কিস্তিতে নিতে পারেন। এটি অবশ্য আগে থেকে নির্বাচন করতে হয়।
তবে শুধু মৃত্যুই নয়, কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে যেমন গুরুতর অসুস্থতা, অঙ্গহানি, শারীরিক অক্ষমতার মতো সমস্যাতেও শর্তসাপেক্ষে কভারেজ পাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে প্রিমিয়ামের সঙ্গে সামান্য কিছু টাকা অতিরিক্ত যোগ হয়।
প্রিমিয়ামের পরিমাণ ঠিক কত হবে তা বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। প্রথমটি হল অবশ্যই বিমার অঙ্কের পরিমাণ। এ ছাড়াও বিমা সংস্থা, বয়স, ধূমপান বা মদ্যপানের অভ্যাস আছে কি না, শারীরিক রোগে ভুগছেন কি না, ইত্যাদির উপরেও এই প্রিমিয়ামের অঙ্ক নির্ভর করে।
মনে রাখবেন এই ধরনের টার্ম ইন্সিওরেন্সের ক্ষেত্রে বয়স কিন্তু একটা বড় বিষয়। কারণ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার বেঁচে থাকার মেয়াদ কমতে থাকবে। বাড়বে শারীরিক সমস্যাও। তাই চাকরি পাওয়ার পরে প্রথম দিকেই এই ধরনের বিমা করিয়ে নেওয়া উচিত। এতে প্রিমিয়ামও কম পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে বাড়তি কিছু সুবিধাও পাওয়া যায়।
টার্ম ইন্সিওরেন্সের অঙ্কটা ঠিক কত হওয়া উচিত, তা অবশ্য সম্পূর্ণ নির্ভর করে আপনার জীবনযাপনের উপরে। মনে রাখবেন, এই বিমা আপনার জীবদ্দশায় কোনও কাজে আসবে না। এটি আসলে আপনার পরিবারের সুরক্ষাকবচ। আপনি না থাকলে, তাঁদের হাতে ঠিক কত পরিমাণ অর্থ থাকলে, তাঁরা স্বচ্ছল ভাবে জীবন অতিবাহিত করতে পারবে, তা হিসেব কষে বের করতে হবে আপনাকেই।
সেই সঙ্গে মুদ্রাস্ফিতীর কথা কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না। কারণ এই ধরনের বিমা দীর্ঘ সময়ের জন্য কেনা হয়ে থাকে। অন্তত ১৫-৩০ বছর সময়ের জন্য তো বটেই। সেই সময়ের পরে মুদ্রাস্ফীতির কোপে আপনার ইন্সিওরেন্সের বাজারমূল্য কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? ধরা যাক আপনি ১৫ বছরের জন্য এক কোটি টাকার বিমা করিয়েছেন। বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতি পাঁচ শতাংশ। তবে সেই তবে ৩০ বছর পরে সেই এক কোটি টাকার মূল্য আজকের ২৩ লক্ষ টাকার সমান দাঁড়াবে। সেই অর্থ সেই সময়ে আপনার পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত তো?
এ ছাড়াও আয়কর রিটার্নের ক্ষেত্রেও ভাল সুবিধা পাওয়া যায় এই ধরনের বিমায়। ১৯৬১ সালের আয়কর আইন অনুযায়ী টার্ম ইন্সিওরেন্সের ক্ষেত্রে সেকশন ৮০ সি-র অধীনে কর ছাড় পাওয়া সম্ভব। আবার বিমা ধারকের অবর্তমানে নমিনি এককালীন যে অর্থ পেয়ে থাকেন তার উপর কোনো টিডিএস (আয় বাবদ কর) কাটা হয় না। এটি ধারা ১০ (১০ ডি)-এ ছাড়যোগ্য। তবে নমিনি দ্বারা প্রাপ্য অর্থ পুনরায় বিনিয়োগ করলে তার উপর যে সুদ উপার্জন হবে তা সাধারণ আয় হিসেবেই গণ্য করা হবে এবং ধারা ১৯৪এ অনুযায়ী ১০ শতাংশ হারে টিডিএস কাটা হবে।
তবে হ্যাঁ, টার্ম ইন্সিওরেন্স করার আগে বেশ কয়েকটি বিষয়ের দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। যেমন, বিমার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত কোনও তথ্য গোপন করা চলবে না। ধূমপান বা মদ্যপান করলে কিংবা কোনও ঝুঁকিপূর্ণ পেশার সঙ্গে যু্ক্ত থাকলে বা নূন্যতম কোনও শারীরিক অসুস্থতা থাকলে তা অবশ্যই বিমা সংস্থাকে আগে ভাগে জানিয়ো রাখুন। না হলে প্রয়োজনের সময় দাবি বাতিল হয়ে যেতে পারে।
মনে রাখবেন প্রাথমিক ভাবে মনে হলেও, বিমা আদতে কিন্তু খরচ নয়। বরং অদৃশ্য একটি সুরক্ষা কবচ। যে কোনও বিপদ পরিস্থিতিতে বিমা সুরক্ষা দেয়। তাই নিজের জন্য বা নিজের পরিবারের জন্য টার্ম ইনসিওরেন্সকে উপেক্ষা করা কখনই উচিত নয়।