প্রতীকী ছবি।
কমলবাবু (আসল নাম নয়) বড় চাকরি করতেন। অবসর নিয়েও নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখেন। সমাজে একটা পরিচিতিও আছে। বন্ধুবান্ধরাও প্রতিষ্ঠিত। তাঁদের অনেকেই ডাক্তার। কলকাতার বহু বাঙালির মতো তাঁর সন্তানও বাইরে থাকেন। বাড়িতে তিনটি প্রাণী। তিনি, তাঁর স্ত্রী ও নব্বই ছুঁইছুঁই মা।
এ তো ঘরে ঘরের গল্প। আর অন্য চারটে বাড়ির মতোই তাঁর বাড়িতেও সেই অঘটনটা ঘটল। কমলবাবুর মা আয়ার হাত ধরে বাড়ির ভিতরেই হাঁটতে হাঁটতে পায়ের জোর হারিয়ে পড়ে গেলেন। আর কাঁধের হাড় ভাঙল।
এর পরের গল্প আমরা অনেকেই নিজের অভিজ্ঞতায় জানি। অ্যাম্বুল্যান্সে হাসপাতাল। এক্স রে করে ভর্তি করা এবং অস্ত্রোপচার করে প্লেট বসানো।
কিন্তু তাড়াহুড়োয় কমলবাবু তাঁর মায়ের বিমার কাগজ নিতে ভুলে গিয়েছিলেন। হাসপাতালে কাগজ চাওয়ার সময় খেয়াল করলেন যে তিনি তা আনতে ভুলে গিয়েছেন।
আমরা বলতেই পারি যে, কাগজ তো পরেও জমা দেওয়া যায়। কিন্তু হাসপাতালে গিয়ে নীতি নিয়ম নিয়ে ঝগড়া করার আগে রোগীর চিকিৎসা শুরু করানোর উপর জোর দেওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই পকেট থেকে প্রাথমিক একটা থোক টাকা অনেকেই জমা করে দেন। বাকিটা পরে হিসাব করে নেওয়া যাবে এই যুক্তিতে।
কমলবাবুও তাই কার্ডে টাকা দিয়ে বাড়ি দৌড়লেন কাগজ আনতে। পলিসি বন্ড এনে দেখানোর পরে শুনলেন, তাতে হবে না। রোগীর আধার/প্যান জমা দিতে হবে। কিন্তু বাঁচোয়া একটাই যে, তা পরে দিলেও হবে।
প্রতীকী ছবি।
এর পর তো মা-কে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার দিন এসে গেল। কিন্তু বিমা সংস্থার কাছ থেকে সবুজ সঙ্কেত আর আসে না। খোঁজ খবর করে দেখা গেল হাসপাতালে পলিসি আর বিমার প্রতিলিপি দিয়েছিলেন তিনি।
হাসপাতালের অফিস তা স্ক্যান করে বিমা সংস্থায় ঠিক মতো না পাঠানোও শেষ মুহূর্তে এই বিপত্তি।
আর এটাই সমস্যা। এ বার যদি কমলবাবুর নিজের কিছু হত। অথবা সস্ত্রীক তাঁর কোভিড নিয়ে হাসপাতাল ভর্তি হতে হত। বাড়িতে তো কেউ নেই হাসপাতালে কাগজ জমা করানোর! আর তা কোথায় আছে সেটাই বা জানবে কে?
এর থেকে বাঁচতে তাই
ক) পলিসি বন্ড স্ক্যান করিয়ে রাখুন
খ) সেই একই ফাইলে স্ক্যান করে পলিসির সঙ্গে পাওয়া সচিত্র পরিচয়পত্রের দু’টি দিক স্ক্যান করে রাখুন
গ) সেই ফাইলেই আধার আর প্যান কার্ড স্ক্যান করে রাখুন
ঘ) ফাইলের নাম দিন নিজের নাম আর মেডিক্লেমের নামে। এর ফলে কারও বুঝতে অসুবিধা হবে না ফাইলটা কিসের
ঙ) স্ত্রী এবং বাড়ির অন্য সবার ক্ষেত্রেও একই কাজ করুন
চ) এ বার এই ফাইলগুলো বন্ধু বা নিকটাত্মীয়দের মধ্যে কয়েক জনকে পাঠিয়ে রাখুন।
শেষ পয়েন্টটি কোভিড শিখিয়েছে। কোভিডের আগে হলে হয়ত বলা যেত যে এক জন নিকট প্রতিবেশী এবং এক জন নিকট আত্মীয়কে পাঠানোর কথা। কিন্তু কোভিড শিখিয়েছে এ ব্যাপারে অধিকন্তু ন দোষায়।
এ বার কিন্তু আপনি তৈরি। আপনার মোবাইলে ইমেলেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার নথি ভরা আছে। হাসপাতালকে মেল করে দিলেই ল্যাঠা চুকে যাবে। আর কাগজ হারানোর ভয়ও থাকবে না।
তাই পলিসি ও আনুষঙ্গিক পরিচয়পত্র এখনই স্ক্যান করান একটি ফাইলে। পাঠিয়ে রাখুন নিকট কয়েক জনকে। অসুস্থতার সময়ে অন্যথায় এড়ানো যায় এমন চাপ মাথায় নেবেন না।