প্রতীকী চিত্র।
ঝুঁকি সামলানোর জন্যই তো বিমা। আর জীবনের ঝুঁকি কিন্তু একই রকম থাকে। আজ দু’বছর আগেও কি আমরা ভাবতে পারতাম অতিমারির কথা? তার চিকিত্সার বিরাট খরচ সামলানোর জন্য বিমার প্রয়োজনের কথা? অথচ যেই না আমাদের জীবনে এই ঝুঁকি এল সঙ্গে সঙ্গে তার প্রয়োজন বুঝে বাজারেও চলে এল কোভিড কবচ।
আসলে জীবনের ঝুঁকি সময়ের সঙ্গে বদলায়। বাজারেও তাই তৈরি হয় নতুন নতুন বিমার চাহিদা। আর তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিমা সংস্থারাও নতুন নতুন প্রকল্প নিয়ে বাজারে আসে। এই প্রকল্পগুলিকে প্রাসঙ্গিক রেখে নিজেদের ব্যবসাকেও লাভজনক রাখা কিন্তু সোজা কাজ নয়। এর সঙ্গে রয়েছে সংখ্যাতত্ত্বের জটিল হিসাব এবং অবশ্যই বাজারে ছাড়ার আগে বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন জোগাড় করা।
বাজার সমীক্ষা
প্রকল্প তৈরি করার জন্য এটিই প্রাথমিক পদক্ষেপ। একটি বিমা প্রকল্পের পরিকল্পনা করার আগে সংস্থাগুলি ক্রেতার প্রয়োজন এবং ঘাটতিগুলি বোঝার জন্য বিশদে বাজারের সমীক্ষা করে। বিভিন্ন স্তরের সমীক্ষার চালানো হয়। নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর সংগ্রহ করা হয়:
মাথায় রাখতে হবে বিমাও কিন্তু একটা পণ্য। আর অন্য সব পণ্যের মতোই এরও চূড়ান্ত লক্ষ্য হল ক্রেতাদের প্রয়োজন মেটানো। এটা সত্যি যে একটি প্রকল্প যদি ক্রেতার সমস্যার জায়গাগুলিকে ছুঁতে পারে, তাহলে সেটিকে বিক্রি করা সহজ হয়। সমীক্ষায় পাওয়া তথ্যের সাহায্যে এমন ভাবে একটা প্রকল্প তৈরি করা হয়, যা মানুষের চাহিদা মেটাতে পারে।
বাজার সমীক্ষা
বিমা প্রকল্প তৈরি করার ক্ষেত্রে এটি পরবর্তী পদক্ষেপ। বিমা কোম্পানিগুলি প্রকল্পগুলির সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন ঝুঁকিকে চিহ্নিত করে। আবার, একটি প্রকল্প কিছু সংখ্যক মানুষের জন্য লাভজনক হলেও তা কোম্পানির পক্ষে লাভজনক না-ও হতে পারে। প্রকল্পটি টিকবে কিনা সেটাও পর্যালোচনা করা দরকার। কোনও প্ল্যান গুটিয়ে নিলে ক্রেতার অনুভূতিতে আঘাত লাগে কিংবা বিমা কোম্পানির ব্র্যান্ড ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই তা বুঝে নেওয়া খুবই জরুরি। তাছাড়া নতুন প্রকল্প তৈরি করতে অনেকখানি সময়, শ্রম এবং অর্থ ব্যয় হয়। ফলে প্রকল্পটি যদি টেকসই না হয়, তার প্রভাব শেষ পর্যন্ত আয়ের উপর পড়ে।
দাম নির্দিষ্ট করা
প্রোডাক্টটির ঝুঁকিগুলি বোঝা হয়ে গেলে আসে দাম নির্দিষ্ট করার পালা। বিমা কোম্পানিগুলির সামনে যে সব চ্যালেঞ্জ থাকে এটি তার অন্যতম। অন্যান্য ব্যবসায় প্রোডাক্টের দাম ধার্য করা হয় উপাদানের মূল্য আর লাভের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে। কিন্তু বিমা কোম্পানি প্রথম যখন কোনও প্রকল্প বিক্রি করে তখন তার আসল দাম জানা থাকে না।
আসল দাম জানা যায় যখন পলিসি হোল্ডারদের সমস্ত দাবি মিটিয়ে দেওয়া হয়। তাই বিমা কোম্পানিগুলি ঐতিহাসিক তথ্যের উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতের ঝুঁকির প্রবণতা অনুমান করে এবং প্রিমিয়াম ও প্রকল্পের দাম ধার্য করে। এখনকার দিনে কোম্পানিগুলি উন্নত বিশ্লেষণাত্মক কৌশলের সাহায্য নিয়ে কী হলে কী হতে পারে সেসব হিসাব করে, ক্রেতার ভবিষ্যৎ ব্যবহার অনুমান করে এবং দাম ধার্য করার স্ট্র্যাটেজি ঠিক করে।
আইআরডিএআই-এর অনুমোদনের জন্য আবেদন করা
স্ট্র্যাটেজি সাজিয়ে নিয়ে বাজারে কোনও বিমা প্রোডাক্ট লঞ্চ করার আগে ইনশিওরেন্স রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া-র অনুমোদনের জন্য আবেদন করতে হয়।
মনে রাখতে হবে যে এই আবেদন একটা নির্দিষ্ট ফর্ম্যাটে করতে হয়, যার মধ্যে প্রোডাক্ট সংক্রান্ত সব কিছু ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন।
সাধারণ বর্ণনা থেকে শুরু করে প্রকল্পের বৈশিষ্ট, কাদের জন্য তৈরি, সরবরাহের পথ— সবই এই আবেদনে বিস্তারিভাবে লিখতে হয়। সব মানদণ্ড পূরণ হলে তবেই নিয়ামক একটি প্রকল্পকে অনুমোদন করেন। আইআরডিএআই-এর অনুমোদনের পর বিমা সংস্থাগুলির বিপণন বিভাগ বাজারে নামে প্রকল্পটি বিক্রি করতে।
উপসংহার
বিমা প্রকল্প তৈরি এক জটিল প্রক্রিয়া। প্রচুর অভ্যন্তরীণ ও বাইরের বিষয় আছে যা বিমা কোম্পানিগুলিকে নতুন প্রকল্প তৈরি করে বাজারে আনার আগে ভেবে দেখতে হয়। বাইরের বিষয়গুলির মধ্যে আছে ডিজিটাল সরবরাহ, কোন সময়, কোন জায়গায় বিমার পরিষেবা মিলবে ইত্যাদি। আবার অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলির মধ্যে রয়েছে বর্ধিত লাভ এবং সরবরাহের নানা রকম পথ তৈরি করা ইত্যাদি।
(লেখক আই সি আই সি আই লোম্বার্ড জেনারেল ইনশিওরেন্স সংস্থার ক্লেমস, আন্ডাররাইটিং অ্যান্ড রিইনশিওরেন্স বিভাগের প্রধান)